এবার বাংলাদেশকে 'কালো তালিকায়' ফেলবেন ট্রাম্প? কীভাবে সামলাবেন ইউনূস?
Muhammad Yunus-Donald Trump Relation: হিন্দু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং গণহত্যার জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচারের জন্য ঢাকাকে চাপ দিতে পারেন ট্রাম্প।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেছে নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, আরও একবার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মানে শুধু তো আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ নয়। দেশিয় নীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জোটগুলিতেও পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উপর নির্ভর করছে বিভিন্ন দেশের বৈশ্বিক নীতি, রণনীতি। বিশেষ করে বাংলাদেশ, কিছুকাল আগেই যেখানে জনতার অভ্যুত্থানে গদিচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা, কোন সমীকরণে হাঁটবে আমেরিকার সঙ্গে তা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। বাংলাদেশ টলমল করছে এখনও। স্থায়ী সরকার কবে আসবে, কীভাবে 'নতুন বাংলাদেশ' বিশ্ব মানচিত্রে সমাদর পাবে এসবই এই মুহূর্তে সেই দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। এই অবস্থায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হওয়া বাংলাদেশের উপর কী প্রভাব ফেলবে?
মহম্মদ ইউনূস ছিলেন ঘোরতর ট্রাম্প বিরোধী। ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গেই বরাবর তাঁর সুসম্পর্ক। হিলারি ক্লিন্টন এবং বারাক ওবামার মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মহম্মদ ইউনূস। ২০১৬ সালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারি ক্লিন্টনকে পরাজিত করেছিলেন, মহম্মদ ইউনূস সেই নির্বাচনের ফলাফলের তীব্র নিন্দা করেছিলেন। ক্লিন্টনের অন্যতম 'প্রিয় বন্ধু’ ইউনূস বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় 'এক সূর্যগ্রহণ… কালো দিন'। এবার তিনি নিজেই একটি দেশের মাথা। অন্য শক্তিশালী দেশের মাথা ট্রাম্প। কী হবে তাঁদের সমীকরণ?
আরও পড়ুন- ম্যাজিক সংখ্যা পেরিয়ে হোয়াইট হাউজের পথে ট্রাম্প, যা যা বললেন বিজয়ভাষণে
ইউনূস আগে বলেছিলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচন 'ভুল রাজনীতির শিকার হয়েছে'। সেই বছর দীপাবলির সময়, ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইট করেছিলেন বাংলাদেশ নিয়ে। বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর হিংসার নিন্দা জানিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশ বিশৃঙ্খল। বাংলাদেশের জনতা সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করে লুঠপাট চালাচ্ছে। মহম্মদ ইউনূসের সমর্থকরা ট্রাম্পের টুইটটি 'ভুয়ো' বলে উড়িয়ে দেয়। এই টুইটটির একজন উল্লেখযোগ্য সমালোচক ছিলেন একটি এনজিওর প্রধান। ওই এনজিও মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাকাতেই চলত। ডোনাল্ড লু-এর মতো ব্যক্তিত্ব সহ বাইডেনের সাহচর্যে চলত ওই এনজিও।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে এবং মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নতুন শাসনব্যবস্থা স্থাপনের পরে, বাইডেন কর্তৃপক্ষ বিবৃতি জারি করে বলেছিল, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে 'কাজ করতে প্রস্তুত'। ইউএস ক্যাপিটল আর ইউনূসের সম্পর্ক গভীর। সকলেই জানেন ইউনূস ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের প্রধান অনুদান দাতা। এমনকী ইউনূস ট্রাম্পবিরোধী রিপাবলিকানদেরও ঘনিষ্ঠ। ইউনূসও খুব স্পষ্টভাবেই ট্রাম্প এবং প্রধান রিপাবলিকানদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ঢাকার বিপ্লবী সরকার ক্লিন্টন, সোরোস এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থনে দাঁড়িয়ে আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূসের উদার রাজনীতি এবং ক্লিন্টনের সঙ্গে তাঁর সংযোগ বারাক ওবামা সহ নেতৃস্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইউনূসের খ্যাতি বাড়ালেও ট্রাম্প এবং অনেক প্রভাবশালী রিপাবলিকানদের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্বেও ফেলেছে।
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, বাইডেন-কমলা প্রশাসন 'হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের স্থিতিশীল পুনর্গঠন'-কে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। গণহিংসা, গণবিচার, হিন্দু ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করেছে হাসিনা সরকার, বলেছিল বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ঢাকাকে নতুন উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। যার ফলে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। অর্থাৎ ইউনূসের মেয়াদ বাড়তে পারত, কারণ বর্তমান প্রশাসন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দ্রুত প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী নয়।
আরও পড়ুন-ধর্ম বা রাজনীতি দিয়ে কোনও বাংলাদেশির সঙ্গে বৈষম্য হবে না! ইউনূসের আপ্তবাক্য ফলবে?
এখন ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। আশঙ্কা, তিনি বাইডেন-কমলার নীতিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। হিন্দু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং গণহত্যার জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচারের জন্য ঢাকাকে চাপ দিতে পারেন ট্রাম্প। সম্ভবত ইউনূস সরকারকে চাপ দিয়ে একজন আমেরিকান নাগরিককে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আনসার আল ইসলামের (পূর্বের আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মনোনীত নেতা জসিমুদ্দিন রহমানিকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিক্রিয়া দাবি করতে পারেন ট্রাম্প।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ট্রাম্পের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল। এশিয়ায় চিনের প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে কী পদক্ষেপ করছেন ট্রাম্প তা চিন্তার বিষয়। আগের বার রাষ্ট্রপতির মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন সামুদ্রিক নিরাপত্তা, জলদস্যু দমন, সন্ত্রাস দমন এবং সামরিক প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রে আমেরিকা-বাংলাদেশ সহযোগিতার কথাই তুলে ধরেছিল। ইউনূস ক্ষমতায় থাকলে, বাংলাদেশ চিনের শরণাপণ্ণ হতে পারে। এর আরেকটি কারণ হচ্ছে, ইউনূস প্রশাসনের ভারত-বিরোধী অবস্থান। ট্রাম্প এমন ভারত-বিরোধী এবং চীনপন্থী পরিবর্তন মেনে নেবেন না।
ট্রাম্প বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন, এমনকী এই দেশটিকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারেন বলেও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে কারণ নিজের প্রথম মেয়াদে বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে এই কাজটিই করেছিলেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের কাছে ট্রাম্পের জয় এক বড় চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প সরকার আগাম নির্বাচন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণই নিষিদ্ধ করতে পারে। সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপিকেও ক্ষমতায় আনতে পারে।