অভিযোগ তাঁকে এই বিশেষ কাজে বাধ্য করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা! কে এই রানা কাপুর?

সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডাইরেকটরেট-এর জিজ্ঞাসাবাদে এক চাঞ্চল্যকর বয়ান দিয়েছেন প্রাক্তন ইয়েস ব্যাংক অধিকর্তা রানা কাপুর। রানা ইডি-কে জানিয়েছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়ে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর থেকে এম. এফ. হুসেনের একটি ছবি কিনেছেন। শুধু তাই নয়, এই টাকা কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন রানা। যদিও কংগ্রেসের তরফ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু কে এই রানা কাপুর? কী প্রভাব ছিল তাঁর সরকারের ওপর?

আমেরিকার রজাটার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি-ধারী রানার জন্ম নয়াদিল্লিতে। এরপর ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্থনি পাবলিক স্কুল থেকে স্কুলিং শেষ করে দিল্লির শ্রী রাম কলেজ অফ কমার্স থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

 

ব্যাংকার রানার যাত্রাপথ

ব্যাংক অফ আমেরিকা-র বারাখাম্বা শাখায় জুনিয়র ব্যাংকার হিসেবেই নিজের কর্মজীবন শুরু করেন রানা। কর্মজীবনের শুরু থেকে প্রায় ১৬ বছর ব্যাংক অফ আমেরিকা-র বিভিন্ন পদে সফলভাবে কাজ করেছেন তিনি। এরপরে ১৯৯৬ সালে রানা ANZ গ্রিন্ডল্যাজের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে রানা তাঁর শ্যালক অশোক কাপুর ও হরকিরত সিংয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে 'র‍্যাবো ইন্ডিয়া ফিনান্স' বলে একটি নতুন ব্যাঙ্কিং সংস্থা তৈরি করেন। যদিও এই র‍্যাবো ফিনান্সের মাত্র ২৫ ভাগ মালিকানা ছিল কাপুরদের হাতে। বাকি ৭৫ অংশের মালিকানা ছিল নেদারল্যান্ডের কোম্পানি র‍্যাবো ব্যাঙ্কের হাতে। ২০০৩ সালে সংস্থায় নিজেদের রয়্যালটি বিক্রি করে রানা একটি প্রাইভেট ব্যাঙ্কের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। পথচলা শুরু করে ইয়েস ব্যাঙ্ক।

আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরের জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় কি আদৌ প্রাণ ফিরবে কংগ্রেসের!

ইয়েস ব্যাঙ্কের আর্থিক দুর্নীতি

ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে ২০১৮-র এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ক দেওয়ান হাউজিং ফিন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেডের কাছ থেকে ৩,৭০০ কোটি টাকার ঋণ নেয়। কিছুদিন পর সেই টাকা ফিরিয়ে দেয় ইয়েস ব্যাঙ্ক। তার কিছুদিনের মধ্যেই দেওয়ান হাউজিং ৬০০ কোটি টাকার লোন দেয় কাপুর পরিবারেরই অন্য আরেক সংস্থা ডিওআইটি আরবান ভেঞ্চারস লিমিটেডকে। ইডি-র তথ্য বলছে, ইয়েস ব্যাঙ্ক বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের টাকা নয়ছয় করেছে। সেইসব টাকা দিয়ে নিজেদের বিভিন্ন সংস্থাকে লোন পাইয়ে দেওয়া বা অন্য কোম্পানির থেকে লোন নেওয়ার কাজ করেছে ইয়েস ব্যাঙ্ক। এছাড়াও বিলিফ রিয়েলটরস প্রাইভেট লিমিটেডকে ৭৫০ কোটির লোন দেয় ইয়েস ব্যাঙ্ক। মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি প্রোজেক্টের জন্য এই অর্থ ঋণ বরাদ্দ করে ইয়েস ব্যাঙ্ক। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, বরাদ্দ অর্থ ঋণের কণামাত্রও ব্যবহৃত হয়নি। ইয়েস ব্যাঙ্কের অধিকর্তা থাকাকালীন নিজের প্রভাব খাটিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে লোন পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রায় ৫,০৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে রানা কাপুরের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১৯ সালে ইয়েস ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রানা কাপুরকে। রানা কাপুরের জায়গায় ইয়েস ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হন রনবীত গিল।

এরপরই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে ইয়েস ব্যাঙ্কের যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তারপরই ২০২০-র ৮ মার্চ দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা ধরে রানা কাপুরকে জেরা করে ইডি। দীর্ঘ জেরার পর রানা কাপুরকে গ্রেপ্তার করে ইডি। প্রায় ৫৮১ মিলিয়নের আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় তারা।

ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীনই কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সম্পর্কে এই বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন রানা। শুধু তাই নয়, জেরার মুখে রানা আরও জানিয়েছেন তিনি ছবি কিনতে অস্বীকার করলে কংগ্রেস জমানার পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মুরলী দেওরা তাকে একপ্রকার হুমকি দেন, যদি তিনি ছবি না কেনেন, তাহলে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে তাঁকে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ইডি।

More Articles