যোগী বলছেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম সনাতন, আদৌ কোনো রাষ্ট্রধর্ম আছে? কী বলছে সংবিধান?
Yogu Adityanath, Sanatana Dharma যোগী বলছেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম সনাতন, আদৌ কোনো রাষ্ট্রধর্ম আছে? কী বলছে সংবিধান? জেনে নিন যোগী আদিত্যনাথের বিতর্কিত মন্তব্য। পড়ুন বিস্তারিত
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজস্থানে একটি মন্দিরের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি সুর শোনা গেছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গলায়। বলেছিলেন, সনাতন ধর্মই রাষ্ট্রীয় ধর্ম।সকলকে এই ধর্মের সম্মান করতে হবে।নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে স্থাপন হতে চলা রামমন্দির প্রসঙ্গেও তাঁর বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল।ফের একবার সেই বার্তাই দিতে চাইলেন আদিত্যনাথ। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অন্ধকার অধ্যায়টিকেই কি উসকে দিতে চাইলেন তিনি?
ভারতের ধর্ম বৃত্তান্ত:
ভারতের জনগণের ধর্মীয় পরিচয়ের হিসেব বলছে, এই দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮% হিন্দুধর্মাবলম্বী, ১৪.২% ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং বাকি ৬% খ্রিস্টান,শিখ,বৌদ্ধ এবং জৈন। একথা সত্যি, যে ভারতে প্রচলিত প্রাচীনতম ধর্ম হিন্দু। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া,চিন,ভারতে হিন্দু ধর্মের প্রচলন ঘটেছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভারত ধর্মবিশ্বাসে, সংস্কৃতিতে বহুত্বের মাঝে ঐক্যের বার্তাই দিতে চেয়েছে।
কী বলছেন আদিত্যনাথ:
উদয়নিধি স্টালিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উষ্মা প্রকাশ করে, ইন্দোরের নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করতে গিয়ে আদিত্যনাথ বললেন, ভারতের রাষ্ট্রধর্ম সনাতন ধর্ম। এই বিষয়টিকে প্রশ্নাতীত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এর সাথে তিনি যোগ করেন, প্রাচীনকাল থেকেই বারবার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে সনাতন ধর্মকে। বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে। রামায়ণের অনুষঙ্গ তুলে তিনি বলেন, রাবণও চেয়েছিলেন দেবত্বকে আক্রমণ করতে। ফল কী হয়েছিল? রাবণ নিজেই ধ্বংস হয়ে গেছেন। সম্রাট বাবরের উল্লেখও এসেছে তাঁর বক্তব্যে। ৫০০ বছর পরে, হিন্দুধর্মের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন রামমন্দির স্থাপনের ঘটনাকে।উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন বলেছিলেন, সনাতন ধর্মের ধারণা সরাসরিভাবে সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থী।
আদিত্যনাথের অন্যান্য বিতর্কিত মন্তব্য:
এই কি প্রথম?না, প্রথম নয়। একাধিকবার একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কখনও বুলডোজার দিয়ে কলোনি গুঁড়িয়ে দিয়ে যোগী সরকার উঠে এসেছে আলোচনায়। কখনও তিনি বলেছেন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশকে কাশ্মীরে পরিণত হতে দেবে না বিজেপি। সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে তাঁর চূড়ান্ত অ-সংবেদনশীল মনোভাবও বারবার ফুটে উঠেছে কথা থেকে। মাদার টেরেসা সম্পর্কে বলেছেন, ভারতের খ্রিস্টানীকরণের ষড়যন্ত্রকারী।মহাদেব শিবকে অনুসরণ করতে না চাইলে সেইসব ব্যক্তি হিন্দুস্তান ছেড়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু, বাস্তব এই যে হিন্দুস্তান শব্দের উৎপত্তির পেছনে কোনও ধর্মের নয়, আছে ভৌগলিক ভূবিন্যাস।
সংবিধান কী বলছে:
এখনও ভারত বনাম ইন্ডিয়া নামের বিতর্কের টাটকা স্মৃতি। এর আঁচ নেভার আগেই উঠে এল রাষ্ট্রীয় ধর্মের প্রসঙ্গ। কিন্তু কী বলছে ভারতের সংবিধান? ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের লেখা ভারতের সংবিধান চলে আসছে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে। বলা হয়, পৃথিবীর দীর্ঘতম ও অন্যতম সমৃদ্ধ সংবিধান, ভারতের সংবিধান।ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা বলছে,"আমরা ভারতের জনগণ ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে গঠন করার এবং এর সমস্ত নাগরিকের জন্য সুরক্ষিত করার জন্য দৃঢ় সংকল্প।"
-ধর্মনিরপেক্ষতার নিশ্চয়তার ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের এই বক্তব্য। সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব মতামত, চিন্তা, নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে বাঁচার অধিকার সুনিশ্চিত করেছিল। ক্রমশ, সামনে এগনোর বদলে কি পিছিয়ে যাচ্ছে না এই দেশ? 'জাতির ঐক্য' ধ্বংসের মুখে কি ফেলে দেয় না দেশনায়কদের এই মতামত?
ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষা নেই। ভারতের কোনও রাষ্ট্রধর্ম নেই। ভারতের সংবিধান বলে সেই কথা। জোর করে,হিন্দি-হিন্দু দেশের নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত কেন্দ্র সরকারের দীর্ঘদিনের।বিজেপি শাসিত এই দেশ মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দূরাস্ত, প্রশ্ন করার অধিকারও খোয়াতে বসেছে। এই দেশে নিজের মতামত রাখার জন্য ইউএপিএ-তে কারারুদ্ধ হন উমর খালিদ থেকে স্ট্যান স্বামী। খুন হয়ে যান গৌরী লঙ্কেশ। প্রতিকার মেলে না। তবু, এতকিছুর পরেও আশায় বাঁচেন দেশবাসী। স্বপ্ন দেখেন মতামত প্রকাশের, বিশ্বাস রাখেন 'বিশ্বাসে'। ভারত, সূর্যের আরেক নাম হয়ে বারবার গেয়ে যায় বহুত্বের মাঝে একতার গান।