চোখের পাতায় এই ছোট্ট গর্ত আছে আপনারও? কী কাজ এই ছিদ্রের জানেন?
Hole in Eye: প্রতিটি চোখের নীচের পাতার ভিতরের কোণ থেকে ২ মিলিমিটার দূরে একটি ছোট্ট বাদাম আকৃতির গর্ত রয়েছে।
এই যে খাঁচার ভিতর অচিন পাখিটিকে পুষে রেখেছে মানুষ, সে তার পাখির খোঁজও জানে না, খাঁচার বাহারও তার গোচরে নেই। বিজ্ঞানের ক্লাসে মাঝেসাঝে সে নিজের খাঁচার বহিরাঙ্গ, অন্তরাঙ্গ দেখেছে ঠিকই, তবে সবটুকুর হদিশ পাওয়া যায়নি। কেন অ্যাপেনডিক্সের ব্যবহার হয় না আর, কেন মানুষের ঠিক দুইটিই চোখ, কেন মানুষ জিভ দিয়ে কপাল ছুঁতে পারে না, এসব প্রশ্নপোকারা কামড়ায়, তবে উত্তর দেয় না বিজ্ঞান বই। পরে যখন নিজের দেহে নানাকিছু অজানা আবিষ্কার করি আমরা, উত্তর খোঁজার জন্য গুগল হাতড়াতে হয়। তাতেও সবক্ষেত্রে যুতসই উত্তর পাওয়া যায় না। অনেকেই দেখবেন, আপনার চোখের পাতার নীচের অংশে একটি ছোট্ট গর্ত রয়েছে। চোখের পাতায় এমন গর্ত কেন জন্মাল, এর কাজই বা কী? সিলেবাসের বইয়ের পাতায় জানা যায় না সবটা। গেলে বুঝতেন, আপনি একা নন, বহু মানুষের চোখেই রয়েছে এই ছিদ্র!
এই মাংসল ছোট্ট ছিদ্রটি অত্যন্ত স্বাভাবিক এক বিষয়। অনেকের চোখে এই ছিদ্রটি আবার বেশ বড় আকারেরও হয়, আরও স্পষ্ট হয়। আয়নার খুব কাছাকাছি গিয়ে যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, দেখবেন প্রতিটি চোখের নীচের পাতার ভিতরের কোণ থেকে ২ মিলিমিটার দূরে একটি ছোট্ট বাদাম আকৃতির গর্ত রয়েছে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই ছিদ্রকে বলা হয় ল্যাক্রিমাল পাংটাম।
আরও পড়ুন- ঘুম ভেঙেই চোখ লাল! কনজাংটিভাইটিস কি সত্যিই ছোঁয়াচে?
গুগল করে অনেকে বলবেন, এই ছিদ্রই অশ্রু তৈরি করে। এই ছিদ্র দিয়েই মন খারাপ। যন্ত্রণা জল হয়ে বেরিয়ে আসে। নাহ, ভুল! এই ছিদ্র আপনার চোখের নর্দমা এবং নিকাশী ব্যবস্থার অংশ ঠিকই। কান্নার সময় আমাদের নাক দিয়ে জল বেরোয় এই কারণেই। কিন্তু এই ছিদ্র নিজেরাই অশ্রু তৈরি করে না। সেই কাজটি অশ্রুগ্রন্থি, অশ্রুনালীরই। ছিদ্রটির কাজ এই অশ্রু বের করে আনা। এটি কিছুটা খালের মুখের মতো। চোখকে ল্যাক্রিমাল থলির সঙে সংযুক্ত করে এই ছিদ্র। সেই থলি থেকে, অশ্রু ল্যাক্রিমাল নালীর মাধ্যমে নাকের মধ্যে চলে যায়। তাই কান্নাকাটির পরে আপনার নাক দিয়েও জল গড়ায়, সাময়িক সর্দি হয়। কখনও কখনও চোখের জলের নোনতা স্বাদ গলার মধ্যেও পেতে পারেন আপনি।
তবে এখানেই ব্যাপারটা শেষ না। যাদের চোখ অত্যন্ত শুষ্ক, তাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় এই ছোট ছিদ্রগুলি। এই গর্তগুলিতে ছোট সিলিন্ডার-আকৃতির প্লাগ স্থাপন করা হয়। এটি চোখের তরলকে বেশি পরিমাণে বাইরে বেরোতে বাধা দেয়। এটি চোখকে আর্দ্র, স্বাস্থ্যকর রাখে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
তবে মাঝে মাঝে ল্যাক্রিমাল পাংটামের নিকাশী ব্যবস্থা বিপরীতমুখীও হতে পারে। মানে, তখন এই গর্তগুলি থেকে শুধু অশ্রু নয়, স্রাব, বায়ু এবং এমনকী রক্তও বেরিয়ে আসতে পারে। মাঝে মাঝেই কিছু ভিডিও জেগে ওথে যাতে দেখা যায় কেউ কেউ চোখ দিয়ে ফোয়ারার মতো দুধ বের করছেন। তুরস্কের একজন বাসিন্দা তার চোখ থেকে ৯ ফুট ২ ইঞ্চি দূরত্বে দুধ বের করার জন্য বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছেন। অবশ্যই এসব আপন খেয়ালে বাড়িতে বসে করার চেষ্টা করবেন না। সংক্রমণ হয়ে আজীবনের জন্য হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি।

Whatsapp
