অল্প বয়সেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে মাথার চুল! টাক পড়ার হাত থেকে বাঁচতে যা অবশ্যই করতে হবে
Young Age Hairfall Problem : য়স হয়ে গেলে তো চুল এমনিই পড়তে শুরু করে। তবে এখন এই সমস্যা অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রেও বেশি করে দেখা যাচ্ছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে বলিউডে বেশ কয়েকটি অন্য ধারার সিনেমা হয়েছে। তার মধ্যে তিনটে সিনেমার প্রসঙ্গ একটু টেনে আনা যাক। ‘বালা’, ‘গন কেশ’, আর ‘উজদা চমন’। আয়ুস্মান খুরানা, শ্বেতা ত্রিপাঠী এবং সানি সিং মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় বা অন্যান্য প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। কিন্তু সিনেমা তিনটির মূল বিষয় একই। টাক, চুলপড়া। আর এই সমস্যার জেরে ভুগছে হাজার হাজার ভারতীয় যুবক যুবতী। স্রেফ সিনেমার চটকদার বিষয় নয়, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কম বয়সে চুল পড়ার সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে। আর সেই টাকের ঝড়ের মধ্যেই ঢুকে পড়েছে ভারত।
চুল ওঠা, বড় হওয়া, তারপর একটা সময়ের পর ঝরে পড়া, এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। এবং যদি প্রতিদিন আপনার চুল পড়ে, তাহলেও সেটা চিন্তার বিষয় নয়। চুল পড়াটাও ভাত-ডাল খাওয়ার মতোই মানব জীবনের সহজ ব্যাপার। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়ে। এর থেকে কমও হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায়, এটাই সুস্থ, স্বাভাবিক ‘হেয়ার সাইকেল’। কিন্তু সেটা বিগড়ে গেলেই সমস্যা দেখা যায়। চুল পড়ার সংখ্যা বেড়ে গেলেই আসল ঝঞ্ঝাট শুরু। কখনও চুলের ঘনত্ব কমে আসছে, চুল দুর্বল হয়ে পড়ছে, কখনও আবার যত চুল নতুন করে গজাচ্ছে, তার থেকে বেশি চুল পড়ছে। আর সেইসঙ্গে বাড়ছে টাক।
স্বাভাবিক ভাবেই, চুল আর তার নানারকম ছাঁট মানুষের ফ্যাশনের অন্যতম অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হঠাৎ মাথাভর্তি চুল ফাঁকা হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে চাইবেন না কেউ। বরং, যত বেশিদিন চুল সতেজ থাকে, ততই ভালো। কিন্তু বয়স হয়ে গেলে তো চুল এমনিই পড়তে শুরু করে। তবে এখন এই সমস্যা অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রেও বেশি করে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেন বাড়ছে চুল পড়ার সমস্যা? এর পেছনে কারণ কী?
চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ
১) জেনেটিক সমস্যা। অনেকেই বলেন, পরিবারে বেশিরভাগ মানুষের, বিশেষ করে মা এবং বাবার চুল পড়ার সমস্যা থাকলে তাঁর সন্তানদেরও সেই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একই বংশের প্রায় সমস্ত মানুষেরই কম বেশি চুল পড়ার সমস্যা, টাক রয়েছে। সেক্ষেত্রে জিন একটা বড় জায়গা অবশ্যই নিয়ে রাখে।
২) সেইসঙ্গে আছে DHT-র বাড়বাড়ন্ত। DHT, অর্থাৎ ডাই হাইড্রো-টেস্টোস্টেরন। এই বিশেষ বস্তুটি টেস্টোস্টেরন হরমোন থেকে তৈরি হয়। এটি সাধারণত চুলের ফলিকলগুলোকে ছোট ও দুর্বল করে দেয়। ফলে চুল আরও পাতলা হয়ে যায়, আগের মতো লম্বাও হতে পারে না। একটা সময় পর ফলিকল আরও দুর্বল হয়ে পড়ে, চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। সম্পূর্ণ টাকও পড়ে যায় এর ফলে।
৩) হরমোনজনিত সমস্যা চুল পড়ার অন্যতম বড় কারণ। আমাদের স্ট্রেস, অবসাদ, জীবনযাত্রা, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি নানা কিছুর জন্য হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর তার ফলে চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে। যেমন, শরীরে টেস্টোস্টেরন কমে গেলে এবং ওয়েস্টেরন বেড়ে গেলেও চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।
৪) পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন রোগজনিত কারণ। মাথার স্ক্যাল্প বা তালুতে ইনফেকশন হলে, ফলিকল নষ্ট হয়ে গেলে, ড্রাগ বা কেমোথেরাপি ইত্যাদি নানা কারণে চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে।
কমবয়সি পুরুষরা কী করে চুল পড়ার হাত থেকে বাঁচবেন?
১) যদি প্রাকৃতিক বা আয়ুর্বেদের দিকে তাকানো যায়, তবে চুল পড়ার সমস্যার নিরাময়ের একটা উপায় সেখানে বর্ণনা করা রয়েছে। টিভিতে, চুলের তেলের বিজ্ঞাপনে একটি বিশেষ নাম অনেকবারই শুনে থাকবেন আপনি – ভৃঙ্গরাজ। সূর্যমুখীর প্রজাতির এই গাছের কথা আয়ুর্বেদেও রয়েছে। চুল পড়ার সমস্যার সমাধানে এটি নাকি অত্যন্ত কাজ দেয়। ভৃঙ্গরাজের নির্যাস মাথায় লাগালে নাকি উপকার পাওয়া যাবে, এমনটাই বলা হয়েছে আয়ুর্বেদে।
২) ২০০৩ সালের একটি গবেষণা বলে, চিনা জবাফুল, তার পাপড়ি আর পাতা নাকি চুল পড়ার সমস্যা থেকে বাঁচায়। এখান থেকে যে নির্যাস বের হয়, সেটা চুলে লাগালে নাকি সত্যিই ফল দেয়। গবেষণার রিপোর্টও এমন কথা বলে।
৩) মাথার তালুতে, প্রতিটা জায়গায় রক্ত সঞ্চালন করা অত্যন্ত জরুরি। জলীয় বাষ্প ঠিক সেই কাজটাই করে। তাই ডাক্তাররা বলেন, সপ্তাহে যদি একবার মাথার তালুতে বাষ্প প্রবাহিত করা যায়, তাহলে হেয়ার ফলিকলগুলি আকারে ছোট হবে না। রক্ত চলাচলও স্বাভাবিক থাকবে। ফলে হেয়ার ফলিকলের মধ্যে দেহের পুষ্টিরস এবং অক্সিজেনও যাবে। ফলে সেগুলোও পরিপুষ্ট হবে।
৪) এই মুহূর্তে অনেকেই নিজের চেহারার জৌলুস ফেরাতে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টের সাহায্য নিয়েছেন। বিশেষ পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে চুল ওঠানো, নয়তো পছন্দ অনুযায়ী পরচুলা লাগিয়ে নেওয়া। সাধারণ মানুষ থেকে বিখ্যাত সেলেব্রিটি, অনেকেই এই উপায় ব্যবহার করেছেন।
এছাড়াও ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধপত্রও চালু করতে পারেন। সেটাও অন্যতম উপায়। তবে অবশ্যই কী সমস্যা হচ্ছে, কী প্রতিকার দরকার এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজনীয়।