নওশাদের জামিনের পরই নিশানায় কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচী! কেন রাতভর জেরা, গ্রেফতারি?

Congress Leader Koustav Bagchi Arrested : হঠাৎ শনিবার গ্রেফতার করা হল কংগ্রেস মুখপাত্র ও আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে। কী অপরাধ তাঁর?

২ মার্চ, বৃহস্পতিবার। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি তখন বেশ সরগরম। সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। ঠিক সেই সময়ই কলকাতা হাইকোর্ট সাক্ষী থাকছে আরেকটি ঘটনার। দীর্ঘ ৪০ দিনেরও বেশি সময় জেলবন্দি থাকার পর জামিন পেয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তারপর মাত্র কয়েক ঘণ্টা কেটেছে। সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে হারিয়ে জিতেছে বাম-কংগ্রেস জোট। তারপরই হঠাৎ শনিবার গ্রেফতার করা হল কংগ্রেস মুখপাত্র ও আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে। অপরাধ? তিনি নাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কুরুচিকরভাবে আক্রমণ’ করেছেন!

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার, ৪ মার্চ। সময় তখন প্রায় ভোররাত তিনটে। প্রায় সমস্ত তল্লাটেই মানুষজন ঘুমিয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ হয়তো খানিক পরেই ঘুম ভেঙে জেগে উঠবেন। সেই সময়ই পরপর পুলিশের গাড়ি রওনা দেয় ব্যারাকপুরের দিকে। গন্তব্য আইনজীবী তথা কংগ্রেস মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচীর বাড়ি। সেখানে যাওয়ার পরই শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। কৌস্তভের সঙ্গে বাদানুবাদও হয়। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলার পর শেষমেশ শনিবারই সকালেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। বেশ কয়েকটি ধারায় তাঁর নামে মামলাও করা হয়েছে। আপাতত বড়তলা থানায় রয়েছেন তিনি। কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরাও ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছেন।

রাজ্য রাজনীতিতে এই ছবি খুব নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। কৌস্তভ বাগচী নিজেও খবরের চ্যানেলে পরিচিত মুখ। কংগ্রেসের হয়ে, শাসকদলের বিরুদ্ধে নানা কথাই তাঁকে বলতে দেখা যায় সেখানে। কিন্তু হঠাৎ এখন কেন এই গ্রেফতারি? ঠিক কী হয়েছে? সেটা জানার জন্য ফিরে যেতে হবে কয়েক ঘণ্টা আগে। সাগরদিঘিতে বড় মার্জিনে হারের পর থেকেই এই চাপা অসন্তোষ সামনে আসছিল। তারপরই নবান্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বেশকিছু কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মূল নিশানা ছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। মমতার বক্তব্য, অধীরের ব্যাপারে তিনি অনেক কিছুই জানেন। তাঁর মেয়ে, ড্রাইভারের মৃত্যুর ব্যাপারেও নাকি অনেক তথ্য জানেন। কিন্তু কিছু বলেন না, ‘মুখ খোলেন না’।

এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই পাল্টা প্রতিবাদ করেন কৌস্তভ বাগচী। শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন তিনি। সাগরদিঘির পরাজয় মানতে না পেরেই এমন বক্তব্য বলে মনে করেন তিনি। সেইসঙ্গে দীপক ঘোষের লেখা একটি বিশেষ বইয়ের দিকে ইঙ্গিত করেন কৌস্তভ। তাঁর বক্তব্য ছিল, সেই বইটি পড়লেই নাকি তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘আসল চেহারা’ সামনে বেরিয়ে পড়বে। তার প্রেক্ষিতেই কি এই গ্রেফতারি? এই তল্লাশি? তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে আক্রমণ করা যায় না। তাই পুলিশ যা করেছে, ঠিক করেছে।

কিন্তু গোটা ছবিটার দিকে তাকালে কী দেখা যাচ্ছে? জানুয়ারির শেষের দিকে একইভাবে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এগুলো তো ব্যতিক্রম ঘটনা নয়! বিরোধী আওয়াজকে দমিয়ে রাখা, গ্রেফতার, তল্লাশি অভিযান – এসব তো সবসময়ই দেখা যাচ্ছে। রাজ্য হোক কি কেন্দ্র, শাসকের ট্র্যাডিশন কখনও থেমে থাকেনি। সাগরদিঘি ভোটে পরাজয় অবশ্যই তৃণমূলের জন্য অশনি সংকেত। নওশাদকেও জামিন দিয়ে দিয়েছে খোদ কলকাতা হাইকোর্ট। তারপর কৌস্তভ বাগচীকে হঠাৎ এভাবে নিশানা, বিরোধীশূন্য ‘খেলা হবে’র ইঙ্গিত? বিরোধী পক্ষের তো তা-ই বক্তব্য।

More Articles