২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মধ্যে রেহাই শুধু এক জনের! কীভাবে বাঁচলেন সোমা?
West Bengal SSC Recruitment Case: সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। তবে সেই রায় থেকে ছাড় পেয়েছেন সোমা দাস।
এক ধাক্কায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল। কলকাতা হাইকোর্টের এক রায়ে জীবিকাহীন হয়ে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের ২৬ হাজার শিক্ষক। কলকাতা হাইকোর্ট সোমবার জানিয়ে দিল ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া প্রায় ২৬ হাজার চাকরির কোনও বৈধতা নেই। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষক হিসেবে প্রাপ্ত বেতনও তাদের সুদ-সহ ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই নির্দেশের আওতায় পড়েননি শুধু একজন। তিনি সোমা দাস। তাঁর চাকরি বহাল থাকবে বলেই জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
লোকসভা ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষ। দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ আগামী ২৬ এপ্রিল। তার আগেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে ভয়াবহ রায় দিয়ে বসল কলকাতা হাইকোর্ট। এমনিতেই হাজারও দুর্নীতি মামলায় চাপে তৃণমূল সরকার। তার মধ্যে ভোটের আগে আরও উদ্বেগ বাড়ালো হাইকোর্টের নতুন রায়। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। তবে সেই রায় থেকে ছাড় পেয়েছেন সোমা দাস। মানবিক কারণেই তাঁর নিয়োগ বাতিল হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শোরগোল চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এর আগে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একই রকম সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল হাইকোর্ট। প্রায় ৩৬ হাজার প্রাইমারি শিক্ষকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই মামলায় অবশ্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ পড়লেও সেই মামলা এখনও চলছে। এবার কপাল পুড়ল এসএসসি-র প্যানেলে চাকরি পাওয়া ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষকের। এদিকে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাননি, এমন অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী। ধর্মতলার গান্ধীমূর্তির সামনে সেই কবে থেকে ধর্না চলছে তাদের। সেই ধর্নামঞ্চে এক সময় দেখা গিয়েছিল বীরভূমের মেয়ে সোমাকেও।
আরও পড়ুন: ভোটের মুখে ২৬,০০০ চাকরি বাতিল! SSC-তে যোগ্য প্রার্থীরা আর কোনওদিন চাকরি পাবেন?
শুধু চাকরির লড়াই নয়, তার সঙ্গেই সোমাকে লড়তে হয়েছে জীবনের লড়াই। ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের (এসএলএসটি) পরীক্ষায় বসেন সোমা। সেই নিয়োগের মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। তার মধ্যেই ২০১৯ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। সে বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন নলহাটির পাইকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আশ্রমপাড়া গ্রামের মেয়ে সোমা। কিন্তু চাকরির লড়াই ছেড়ে দেননি সোমা। বরং চাকরির দাবিতে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দিনের পর দিন কলকাতার রাস্তায় ধর্না, অবস্থান বিক্ষোভ করে গিয়েছেন অসুস্থ সোমা।
শিক্ষক নিয়োগ মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের মসিহা হয়ে সামনে এসেছেন বর্তমান বিজেপি নেতা ও লোকসভা ভোটের প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার এজলাসে একাধিক বার এসেছেন সোমা, জানিয়েছেন নিজের বঞ্চনার কথা। মামলাকারীদের থেকেই সোমার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেন প্রাক্তন বিচারপতি। সব শুনে রাজ্য সরকারের কাছে সোমার চাকরির আবেদন জানান অভিজিৎবাবু। প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুরোধ রাখে সরকার। সোমাকে নিয়োগ দিয়েছিল কমিশন। ২০২২ সালে হাই কোর্টের অনুরোধ মেনে ক্যানসার আক্রান্ত সোমাকে চাকরির সুপারিশপত্র দেয় কমিশন। বীরভূমেই তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়। বীরভূমের নলহাটি-১ ব্লকের মধুরা হাই স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন সোমা।
সেই থেকেই ওই স্কুলে চাকরি করছেন সোমা। তবে নিয়োগ পেয়েও সহ-আন্দোলনকারীদের ভোলেননি সোমা। বরং তাঁদের নিয়োগের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। বারবার ধর্নামঞ্চেও এসেছেন। সোমবার এসএসসি মামলার ২৮১ পাতার রায়ে বিচারপতিরা জানাচ্ছেন, সোমা দাস ক্যানসার আক্রান্ত, তাই মানবিকতার স্বার্থে তাঁর চাকরি বাতিল করা হয়নি। তিনি আগের মতোই শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করবেন।
আরও পড়ুন: শেষ এসএসসি-তদন্ত, যে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সিবিআইয়ের হাতে
২৫,৭৫৩ জন এসএসসি শিক্ষকের কপাল পুড়লেও নিজের যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন অসুস্থ সোমা। বর্তমান পরিস্থিতিতেও বহাল থাকছে তাঁর চাকরি। সে খবর আনন্দের হলেও সহযোদ্ধাদের জন্য উদ্বেগ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে সোমাকে। তাঁর বক্তব্য যোগ্য প্রার্থীরা যেন চাকরি পান, সেটাই তাঁর চাওয়ার।