ভোটের মুখে ২৬,০০০ চাকরি বাতিল! SSC-তে যোগ্য প্রার্থীরা আর কোনওদিন চাকরি পাবেন?
SSC Recruitment Scam: চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে সকলকে। বছরে ১২ শতাংশ সুদে এই টাকা ফেরত দিতে হবে।
ভোটের মুখে বিরাট ধাক্কা। অযোগ্যদের চাকরি বাতিল এবং যোগ্যদের চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে ১১৩৫ দিন ধরে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার আদালতের রায় প্রকাশ্যে আসতেই সারা রাজ্যে হইচই পড়ে গিয়েছে। অযোগ্য হোক, যোগ্য হোক চাকরি বাতিল হয়েছে বহু বহুজনের! এক হাজার, পাঁচ হাজার নয়, প্রায় ২৬০০০ চাকরি বাতিল করার রায় দিয়েছে আদালত। কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। এসএসসি মামলায় ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করেছে হাইকোর্ট। এরা সকলেই ২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বেতন দিতে হবে।
আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, এসএসসির প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বেতন হয়েছে জনগণের টাকায়। চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ-সহ সেই বেতন ফেরত দিতে হবে সকলকে। বছরে ১২ শতাংশ সুদে এই টাকা ফেরত দিতে হবে। শুধু তাই নয়, সকলের জন্য প্রকাশ্যে আনতে হবে উত্তরপত্রও। এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনেক ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রই এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। যেগুলি এখনও আপলোড করা হয়নি, সেগুলি দ্রুত আপলোড করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। এই উত্তরপত্র যাতে সাধারণ যে কোনও মানুষ দেখতে পান তার ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন- ১ বছরে ২ মন্ত্রী গ্রেফতার! শিক্ষক নিয়োগ থেকে রেশন দুর্নীতি, জড়িয়ে আছেন কারা?
রাজ্যে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক নিয়োগে চরম দুর্নীতি হয়েছে গত কয়েক বছরে। টেট অর্থাৎ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের মামলা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। এসএসসির চাকরি বাতিলের মামলা ছিল কলকাতা হাইকোর্টের অধীনে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্ৰুপ সি, গ্ৰুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ২৪ হাজারের বেশি শূন্যপদের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, যোগ্যরা চাকরি পাননি। চাকরি বিক্রি করা হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। তাই যোগ্য মানুষ যাতে চাকরি পান, সেই ন্যায্য দাবিতে চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এর আগে এসএসসি মামলায় প্রায় আট হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় আর মামলা চলে যায় যায় সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্ট আবার এসএসসি-র চাকরি বাতিলের মামলা হাই কোর্টে ফেরত পাঠায়। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চকে ছ’মাসের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। গত ডিসেম্বর মাসে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হয়। ২০ মার্চ তা শেষ হয়। রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল আদালত।
আরও পড়ুন- বিজেপিতে গেলেই ফাঁড়ামুক্তি! দেশের ২৩ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে যেভাবে বাঁচিয়েছে মোদি সরকার
নিঃসন্দেহে এই রায়ে রাজ্য সরকারের উপর বিরাট ধাক্কা, তাও আবার লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে। গত কয়েক দশকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নির্লজ্জ রকমের দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকার সার্কাস দেখেছে রাজ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে ২৬০০০ জনের চাকরি গেল এই বাজারে তারা সকলেই কি অযোগ্য? দাবি ছিল, যোগ্যদের বহাল রাখতে হবে। কিন্তু কোনও ভেদাভেদ না করে আদালত সমস্ত নিয়োগই বাতিলের রায় দিয়েছে। একমাত্র চাকরি থাকছে সোমা দাসের। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তাঁর চাকরি বহাল রেখেছে আদালত।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানিয়েছেন, যে ২৫,৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিল হলো, সেই শূন্যপদে অবিলম্বে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। আদালত রায় দিলেও কী গড়িমসি এক্ষেত্রে হয়, কীভাবে মামলার পাল্টা মামলা, মামলা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্ট ভায়া হাইকোর্ট ইত্যাদি চলে তা আর নতুন করে ব্যাখ্যার দাবি রাখে না। তাহলে এই প্রায় ২৬০০০ পদে আবার কবে নিয়োগ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় কি? হ্যাঁ, তৃণমূলের এতে সমস্যা বাড়বে অবশ্যই কিন্তু চাকরি প্রার্থীদের কী হবে? নিজের চাকরির জন্য সওয়াল করতে, হকের দাবি আদায় করতে ঠিক কতটা অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের, যতক্ষণ না নতুন কোনও নির্বাচন আসছে?