ইভিএমের সঙ্গে মেলানো হবে ভিভিপ্যাট স্লিপ? লোকসভা ভোটের মধ্যেই যে বড় সিদ্ধান্ত জানাল সুপ্রিম কোর্ট
EVM-VVPAT case: সেই মামলাটি শুক্রবার সরাসরি খারিজই করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দিয়েছে ইভিএমের ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের স্লিপ একশো শতাংশ মিলিয়ে দেখা সম্ভব নয়।
ইভিএমের ভোটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হোক ভিভিপ্যাট স্লিপ। সেই দাবি নিয়ে মামলা করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। লোকসভা ভোট চলাকালীন সেই মামলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। বুধবারই সেই মামলার রায় জানানোর কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। তবে সেদিন নির্বাচন কমিশনারের কাছে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় জানার ছিল আদালতের। সেই মামলাটি শুক্রবার সরাসরি খারিজই করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দিয়েছে ইভিএমের ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের স্লিপ একশো শতাংশ মিলিয়ে দেখা সম্ভব নয়। শুক্রবার এই রায় দিয়েছে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ।
এই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছিল অনেক দিন আগেই। দীর্ঘদিন ধরেই ইভিএম কারচুপির অভিযোগ এনে সরব বিরোধীরা। ২০১৯ ভোটের পরেই দুটি মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তার মধ্যে একটি দায়ের করেন আইনজীবী অরুণ কুমার আগরওয়াল। একই দাবি নিয়ে মামলা করে এডিআরও। আইনজীবী আগরওয়ালের দাবি ছিল, সরকার ৫ কোটি টাকা খরচ করে ২৪ লক্ষ ভিভিপ্যাট কিনেছে। আর ভোটগণনার সময় তাক মধ্যে মাত্র ২০ হাজার ভিভিপ্যাট স্লিপ যাচাই করা হয়ে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এলোপাথাড়ি ভাবে পাঁচটি ইভিএম ও ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপ্যাট) বেছে নিয়ে তার স্লিপ মিলিয়ে দেখা হত এতদিন। সেই সংখ্যাটা ১০০ শতাংশ করার আর্জি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হয়।
আরও পড়ুন: ভিভিপ্যাট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে কমিশন! কী জবাব দিলেন নির্বাচনী আধিকারিক?
সেই মামলার শুনানি ছিল বুধবার। কার্যত ওই দিনই রায়দানেরও কথা ছিল। তবে সেদিন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ একগুচ্ছ প্রশ্ন সামনে রেখেছিল ইলেকশন কমিশনের। সেদিনই সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছিল কমিশন। তবে সেদিনের জন্য় রায়দান স্থগিত রেখেছিল বিচারপতিদের বেঞ্চ। শুক্রবার সেই রায় জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে খারিজ হয়ে গেল ইভিএম-ভিভিপ্যাট সংক্রান্ত সব কটি মামলা। ভিভিপ্যাট স্লিপ ও ইভিএমের ভোট ১০০ শতাংশ মিলিয়ে দেখার আবেদনও খারিজ হয়ে গেল আদালতে।
তবে সুপ্রিম কোর্ট ইলেকশন কমিশনের জন্য দু'টি নির্দেশ জানিয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ইভিএমে দলীয় প্রতীক লোড করার পর লোডিং ইউনিটটি সিল করে তবেই পোলিং এজেন্ট ও প্রার্থীদের উপস্থিতিতে সেটি যথাযোগ্য জায়গায় সুরক্ষিত রাখতে। সিম্বল লোডিং ইউনিটটি সিল করে যথাযথ জায়গায় রাখার পর সেটিকে ফলাফল ঘোষণার পর অন্তত ৪৫ দিনের জন্য স্টোররুমে রাখতে হবে। সঙ্গে থাকবে ইভিএমও। এখানেই শেষ নয়। ভোটের রেজাল্টের সাত দিনের মধ্যে যদি কেউ এ নিয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করে, সেক্ষেত্রে কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট ও ভিভিপ্যাটের ৫ শতাংশ বার্ন্ট মেমরির সেমিকন্ট্রোলারটি ভোটিং মেশিন নির্মাণকারী সংস্থাগুলির ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে যাচাই করাতে হবে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানিয়েছে, যে প্রার্থীরা যাচাইয়ের জন্য লিখিত অনুরোধ করেছেন, এই যাচাইয়ের খরচ তাঁদেরই বহন করতে হবে। যদি সেই পরীক্ষায় ইভিএম যাচাইয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সেই টাকা ফেরত পাবেন অভিযোগকারী।
২০০০ সাল থেকে এ দেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার শুরু হয়। যেখানে ব্যালট ইউনিটটি ভিভিপ্যাট নামক একটি মেশিনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার পরেই ভিভিপ্যাট মেশিনে প্রার্থী ও প্রতীক লেখা একটি কাগজ উঠে আসে, এবং সেখান থেকে তা একটি নির্দিষ্ট স্টোরেজে জমা হয়। প্রতি বছরই ভোট কাটতে না কাটতে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ আনে বিরোধীরা। সেই দুর্নীতি বন্ধ করতেই আদালতে জমা পড়েছিল আবেদন।
আরও পড়ুন:ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মেলালেই ভোটারদের ভোট সঠিক জায়গায় যাবে?
সুপ্রিম কোর্ট বুধবারই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা কোনও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবেদনকারীরা ভোটে ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনার জন্য যে দাবি করেছিল, সেই দাবিও খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশ জুড়ে ভোটের মাঝেই ইভিএম ও ভিভিপ্যাট সংক্রান্ত সব আবেদন পুরোপুরি নাকচ করে দিল শীর্ষ আদালত। ফলে এই মামলার রায়দানের পরেও ভোটিংয়ের কোনও প্রক্রিয়ায় কোনও বড়সড় বদল আসছে না এই লোকসভা ভোটেও।