গোল বাতিলের ক্ষোভ! ৩০০ মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মরে গ্যালারিতেই...

Maradona hand of God: ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ ছিল মারাদোনার বিশ্বকাপ। মারাদোনার ‘ঈশ্বরের হাত’ ছাড়া অন্যটা ছিল বাঁ পায়ের গোল, ইংল্যান্ডের রক্ষণের সবাইকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে গোলটা করেছিল।

শালপ্রাংশু মহাভুজেদের ভিড়ে খুদেরা

অ্যালাঁ জিহাস আর তার সঙ্গে প্লাতিনি, তিগানা, জঁজিনি- এই চারজনকে নিয়ে ’৮২-র বিশ্বকাপে ফ্রান্সের যে মাঝমাঠ গড়ে উঠেছিল তার তুলনা ফরাসি ফুটবলের ইতিহাস ঢুঁড়ে ফেললেও পাওয়া যাবে না। এদের মধ্যে জিহাস এতটাই বেঁটে ছিল যে টেলিভিশনে খেলা দেখালে সবসময় মনে হতো সে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

হাঙ্গেরির পুশকাশ জার্মানির জ়িলার মতোই বেঁটেখাটো কিন্তু মোটাসোটা ছিল। ওলন্দাজ ক্রুয়েফ আর ইতালির জান্নি রিভেরা ছিল হাড্ডিসার। পেলের পায়ের পাতা ছিল একেবারে সমতল, আরহেন্তিনার তুখোড় সেন্টার-হাফ নেস্তর রসি-ও তাই। ব্রাজ়িলের হিভেলিনো কোনওকালে ১২ মিনিটের কুপার টেস্ট নামক সক্ষমতার পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেনি, কিন্তু পায়ে বল পড়লে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাধ্যি ছিল না তাকে ধরে। তার দেশোয়ালি ভাই সক্রেটিসের চেহারা ছিল অনেকটা সারস পাখির মতো! শক্ত হাড়ের লম্বা পা, তবে পায়ের পাতা ছোট আর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ত। কিন্তু সে ব্যাকহিল মারায় এমন ওস্তাদ ছিল যে কী বলব, মাঝে মাঝে পেনাল্টি শটেও ব্যকহিলের কেরামতি দেখাত।

যারা মনে করে, শারীরিক গঠন এবং গতি-সক্ষমতার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে ফুটবল মাঠের পরাক্রমের কোনও সম্পর্ক আছে, দুঃখের সঙ্গে জানাই, তারা নেহাতই মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। ঠিক যেমন মানুষের প্রতিভার সঙ্গে আইকিউ পরীক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই, কিংবা লিঙ্গের আকারের সঙ্গে যৌনসুখের কোনও সম্পর্ক নেই। ভালো ফুটবলার হতে গেলে মিকেলেঞ্জেলোর টাইটান হওয়ার দরকার নেই। এই খেলায় ব্যক্তিগত ক্রীড়ানৈপুণ্য তার চেহারার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বহুক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত নৈপুণ্য খেলোয়াড়ের খামতিকে তার শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

কলম্বিয়ার ভালদেররামার পায়ের পাতা ছিল গুটনো, পায়ের অবতল আকার কাজে লাগিয়ে সে আকছার বল লুকিয়ে ফেলতে পারত। গ্যারিঞ্চার বাঁকা পায়েরও একই সুবিধে ছিল। বল কোথায় চলে যেত? কানের মধ্যে নাকি? বুটের মধ্যে? বলটা গেল কোথায়! এমনই অবস্থা দাঁড়াত। উরুগুয়ের দর্শকদের অতি আদরের আলভারেজ় হাঁটত নড়বড় করে, পায়ের পাতা দুটো একে অপরের দিকে তাক করা, তা সত্ত্বেও সে ছিল রক্ষণভাগের সেই বিরল খেলোয়াড়দের একজন যে লাথি-ঘুষি না মেরেও পেলেকে ঠেকিয়ে দিতে পারত।

১৯৯৪-এর বিশ্বকাপের দুই তারকা রোমারিয়ো আর মারাদোনাও তো গোলগাল গাঁট্টাগোট্টা। উরুগুয়ের যে দু'জন খেলোয়াড় ইদানীং ইতালির ফুটবল লিগে তারকা হয়ে উঠেছে সেই রুবেন সোসা আর আর কার্লোস আগিলেরাও একই রকম শারীরিক গঠনের। ভাগ্যিস ব্রাজ়িলের লেওনিদাস, ইংল্যান্ডের কেভিন কিগান, আয়ারল্যান্ড থেকে আসা জর্জ বেস্ট, হল্যান্ডের আলাঁ সিমোনসন [হল্যান্ড নয় সিমোনসেন ডেনমার্কের খেলোয়াড়] সবাই খাটো চেহারার ছিল, তাই লোকে ওদের ‘মাছি’ বলত! ওরা সবাই পিছলে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ত, প্রতিপক্ষের বিশাল চেহারার ব্যাক সর্বশক্তি দিয়ে যা যা করার সবই করত কিন্তু ওদের থামাতে পারত না। রিভার প্লেটের সেই পুরনো দিনের ‘মেশিন’ দলের ফেলিক্স লুস্ত চেহারায় খাটো হলে কী হবে, আর কিছুতে কমতি ছিল না। তার আস্তিনে ফুটবলের যাবতীয় অস্ত্র লুকনো থাকত। বন্ধুরা ওকে ‘ঘুলঘুলি’ বলে ডাকত। কারণ ও নিজের দলের খেলোয়াড়দের মাঝেমাঝেই একটু জিরিয়ে নেবার সুযোগ দিত, সেসময় প্রতিপক্ষের সবাই কেবল তারই পেছনে দৌড়ত যে! খুদেরা খেলার গতি পালটাতে পারে, একটুও ঠোক্কর না খেয়ে হঠাৎ বল নিয়ে বেদম দৌড়তে পারে। আর পারবে নাই বা কেন! তারা তো আর আকাশছোঁয়া টং-ঘরের মতো লম্বা নয়।

আরও পড়ুন- ৬ গোল হজমের শাস্তি! ভক্তদের পাথরবৃষ্টিতে ছারখার হয়ে গিয়েছিল ফুটবলাররা…

প্লাতিনি

মিশেল প্লাতিনির চেহারা আদপেই খেলোয়াড়দের মতো ছিল না। ১৯৭২ সালে মেৎস ক্লাবের ডাক্তারবাবু প্লাতিনিকে জানায় তার নাকি ‘হৃদযন্ত্র দুর্বল, আর দমেরও ঘাটতি আছে’। ডাক্তারের এমন নিদানের পর স্বাভাবিকভাবেই মেৎস-কর্তৃপক্ষ উদীয়মান খেলোয়াড়টিকে বাতিল করে দেয়। যদিও চিকিৎসকপ্রবর খেয়াল করেনি প্লাতিনির গোড়ালি অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে থাকে, ফলে গোড়ালি ভেঙে চোট পাবার সমূহ সম্ভাবনা। আবার সে বেশ খাদ্যরসিকও বটে! পাস্তার প্রতি তার যা টান, তাতে ওজন বেড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সে যাইহোক, এর দশ বছর পরে, হিস্পানি দেশে বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে, নানান শারীরিক খুঁতওলা প্লাতিনি পুরনো অপমানের মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নিল : তার দল সাঁ এতিয়েন সেই মেৎস ক্লাবকে ৯-২ গোলে হারিয়ে দিল।

প্লাতিনিকে বলা যায় ফরাসি ফুটবলের সারাৎসার : ওর লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা ছিল জুস্ত ফঁতেনের মতো, ১৯৫৮-র বিশ্বকাপে ফঁতেন ১৩টা গোল করেছিল। যে-রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি।* প্লাতিনি রেমন্ড কোপার মতো দ্রুতগামী আর কৌশলী খেলোয়াড় ছিল। প্রত্যেক ম্যাচেই সে গোলের জাদু দেখাত। তার মধ্যে কোনও কোনও গোল তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য। শুধু তাই নয়, গোটা দলকে চাঙ্গা করে সে গ্যালারির দর্শকদেরও উজ্জীবিত করত। তার নেতৃত্বে ফরাসি ফুটবল দল ছন্দময়, কেতাদুরস্ত ফুটবল খেলত। খেলার প্রতিটি মুহূর্ত দর্শকদের চেটেপুটে সুখাদ্য খাওয়ার তৃপ্তি দিত : সংক্ষেপে বললে ফরাসিদের ঠেকাতে মাঠের মাঝখান থেকে বিপক্ষের গোল পর্যন্ত একেবারে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। পরম করুণাময় ছাড়া আর কেই বা বাঁচাতে পারে এসব ক্ষেত্রে, বলুন?

’৮২-র বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্স জার্মানির কাছে পেনাল্টিতে হারল। ওই ম্যাচটাকে প্লাতিনি আর রুমেনিগের ডুয়েলও বলা যায়। রুমেনিগে সেদিন চোট নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নেমেও ম্যাচ জিতে যায়। ফাইনালে অবিশ্যি জার্মানি ইতালির কাছে হারে। প্লাতিনি কিংবা রুমেনিগে, ফুটবলের ইতিহাসে যাদের সত্যিকারের অবদান আছে, তারা কেউ কোনওদিন বিশ্বমানের কোনও ট্রফি জেতেনি।

* মন্তব্যটি তথ্যগতভাবে ঠিক নয়। অনু.

আরও পড়ুন- ফুটবলার না হোর্ডিং! জুতোর ফিতে বাঁধার নামে আসলে ব্র্যান্ড দেখাতেই চান খেলোয়াড়রা?

অধার্মিকের কুরবানি

১৯৮৫-তে ফুটবলের উন্মত্ত দর্শকরা ব্রাসেলসের পুরনো হেজ়েল স্টেডিয়ামের চাতালে ইতালির উনচল্লিশজন সমর্থককে থেঁতলে মারে। সেদিন ইংল্যান্ডের লিভারপুল ইওরোপিয়ান কাপের ফাইনালে খেলছিল ইতালির জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে গুণ্ডারা গ্যালারি তছনছ করে। ইতালির সমর্থকদের তারা দেওয়ালে ঠেসে ধরে কচলে কচলে মেরেছিল, নইলে ওপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। খেলা কিন্তু বাতিল হয়নি, ফলে খেলা দেখানোর নামে টিভিতে কার্যত ইংল্যান্ডের গুণ্ডাদের হাতে ইতালির সমর্থকদের জবাই হওয়াটা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

এই ঘটনার পরে ইতালি সেদেশে ইংল্যান্ডের দর্শকদের খেলা দেখতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমনকী ভদ্রলোকের সন্তান বলে কোনও শংসাপত্র দেখালেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হতো না। কিন্তু ১৯৯০-এর বিশ্বকাপের সময় সারদেনা [সার্দিনিয়া] দ্বীপপুঞ্জে ইংল্যান্ডের খেলা পড়ায় ইতালি ইংরেজতনয়দের প্রবেশাধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়। এবার কিন্ত ইংল্যান্ড নিজেও যথেষ্ট সতর্ক ছিল। ফুটবল গুণ্ডার চেয়ে অনেকগুণ বেশি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা পাঠিয়েছিল তারা। ব্রিটিশ ক্রীড়ামন্ত্রী নিজে গোটা বিষয়টার দেখভাল করেছিল।

ঠিক এক শতাব্দী আগে, ১৮৯০ সালে, লন্ডন টাইমস দেশের মানুষকে সতর্ক করে জানিয়েছিল : ‘দেশের “গুণ্ডা-বদমাশগুলো' পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলছে… ঘোরালো বলছি কেননা ওরা সংখ্যায় ক্রমশ বাড়ছে… 'গুণ্ডা-বদমাশগুলো' সভ্যতার কুৎসিত বর্জ্য’। আজকের দিনেও ওইসব সভ্যতার বর্জ্য পদার্থরা ফুটবল নামের আড়ালে অপরাধ আর কু-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

গুণ্ডারা যেখানে যায় সেখানেই আতঙ্ক ছড়ায়। তারা শরীরের বাইরের দিকটা ট্যাটু দিয়ে লেপে রাখে, আর ভেতরে শিরায়-শিরায় বইতে থাকে কোহলের নেশা। গলায়-কানে ঝোলে উগ্র দেশপ্রেমের টুকিটাকি স্মারক। তারা কব্জিতে পেতলের বালা পরে আর হাতে ঝোলে পুলিশের লাঠি। ঔপনিবেশিক যুগের দাপট স্মরণ করাতে তারা ঘামতে ঘামতে এক সমুদ্র হিংসা বুকে চেপে ‘রুল ব্রিটানিয়া’র সুরে চিৎকার করে কিংবা বিদ্বেষের আরও যত ভাষা জানা আছে সব উগরে দেয়। ইংল্যান্ডে বা অন্য দেশেও এই সব খুনেবাহিনী প্রায়শই নাৎসি প্রতীক নিয়ে ঘোরে, আর যত কৃষ্ণাঙ্গ-আরবের মানুষ-তুর্কি-পাকিস্তানি-ইহুদিদের নামে ঘৃণা ছড়ায়।

রিয়াল মাদ্রিদের এক উগ্র ভক্ত যেমন মাঠে গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের দিকে অবজ্ঞা ছুঁড়ে দিয়ে বলত, "যা না হারামি, আফ্রিকায় গিয়ে মর"। তার একটাই যুক্তি, "ওরা এদেশে গেড়ে বসে আমাদের চাকরিবাকরিগুলোই তো গিলে খাচ্ছে না কি!"

ফুটবলের নামের আড়ালে ইতালির নব্য-নাৎসিরা কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের দেখলেই টিটকিরি মারে আর বিপক্ষের সমর্থকদের ইহুদি বলে দেগে দিয়ে চেঁচায়, "শালা, ইব্রেই!"

বেহেড মাতালরা যেমন সুরার অসম্মান করে, তেমনই ফুটবল গুণ্ডারা খেলাটার অসম্মান করে। কিন্তু সমস্যাটা শুধু ইওরোপের একার নয়। প্রায় সমস্ত ফুটবল খেলিয়ে দেশই এই সমস্যায় অল্পবিস্তর ভোগে এবং ফুটবল ভক্তের ভেকধারী এইসব পাগলা কুত্তার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমি কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেখেছি চিলের দর্শকরা বেশ বন্ধুবৎসল ছিল : গ্যালারিতে নারী-পুরুষ-বাচ্চা মিলে গান গাইত, এমনকী কাদের গান-বাজনা ভালো হলো তার প্রতিযোগিতাও হত। কিন্তু এখন কোলো-কোলো দলের নিজস্ব গুণ্ডাবাহিনী আছে ‘শ্বেত নখর’ নামে, আর চিলে বিশ্ববিদ্যালয় দলের মস্তান বাহিনীর নাম ‘আন্ডারডগ’।

হোর্খে ভালদানো ১৯৯৩ সালে হিসেব কষে দেখেছিল আগের পনেরো বছরে শুধু আরহেন্তিনার স্টেডিয়ামগুলোয় একশোর ওপর মানুষ খুন হয়েছে। ভালদানোর মতে, এই হিংসা সামাজিক অন্যায়-অসাম্য এবং দৈনন্দিন জীবনে মানুষের হতাশার সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাড়ে। সর্বত্রই অল্পবয়সীরা গুণ্ডারা দলে নাম লেখায় সেরেফ চাকরিবাকরির বেহাল অবস্থা আর জীবনের প্রতি অনুরক্ত হবার মতো যথেষ্ট আশা না পেয়ে। ভালদানোর মন্তব্যের মাস দুয়েকের মধ্যেই আরহেন্তিনার বোকা জুনিয়র্স ২-০ গোলে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিভার প্লেটের কাছে হারে। স্টেডিয়াম থেকে বেরনোর সময় দু'জন রিভার সমর্থককে গুলি করে মারা হয়। টিভিতে বোকা জুনিয়র্সের এক অল্পবয়সী ভক্ত বলে গেল, "ওদের দুটোকে মেরে ম্যাচটা ড্র করে গেলাম"।

আরেকবার কোনও একটা কাগজে কলাম লিখতে গিয়ে ভালদানো অন্য খেলা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে যিশুর জন্মের দুই শতাব্দী পরে দিয়োনে ক্রিসোস্তোমো রোমের ক্রীড়াপ্রেমীদের যে ছবি তুলে ধরেছিলেন তা উল্লেখ করে বলেছিল : "তারা এমনভাবে স্টেডিয়ামে যেত যে মনে হত ওরা বুঝি বা নেশার সামগ্রীর কোনও গুপ্তভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছে। তারা নিজেদের সমস্ত সামাজিক সত্তার কথা ভুলে গিয়ে, লাজলজ্জার মাথা খেয়ে যা মনে হতো তাই করে বেড়াত"। খেলাধুলোর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টা রোমেই হয়েছিল এর ঠিক চারশো বছর পরে। ৫১২ খ্রিস্টাব্দে কয়েক হাজার মানুষ, কেউ কেউ বলে তিরিশ হাজার, যদিও সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য, রাস্তায় দু'দল ভক্তের লড়াই চলে বেশ কয়েকদিন ধরে। তারা অবিশ্যি ফুটবলের ভক্ত ছিল না, তাদের প্রিয় বিনোদন ছিল রথের দৌড়।

ফুটবলের স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টা ১৯৬৪ সালে ঘটে পেরুর রাজধানীতে। রেফারি সেদিন আরহেন্তিনার বিরুদ্ধে খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে হোম টিমের একটা গোল বাতিল করে। ব্যস, অমনি আগুন জ্বলে উঠল পেরুর সমর্থকদের মনে। কমলালেবু, বিয়রের ক্যান থেকে শুরু করে আর যা কিছু ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সব উড়তে লাগল হাওয়ায়। রাগে ফেটে পড়তে থাকল গ্যালারি। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাল, কয়েক রাউন্ড গুলিও চালাতে হলো। তার ফল আরও মারাত্মক হলো! মানুষ ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যেতে লাগল। পুলিশের তাড়া খেয়ে লোকে যেদিক দিয়ে বেরতে চেষ্টা করছিল, সেদিকের দরজা বন্ধ করা ছিল। সেদিন তিনশোর বেশি মানুষ মারা যায়। সেই সন্ধেতে লিমার রাস্তায় বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবাদে নামে। কিন্তু তারা পুলিশের উপরে নয় বরং সেদিনের রেফারির উপরে ক্ষুব্ধ ছিল।

আরও পড়ুন- “জয় অথবা মৃত্যু”! বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে ফুটবলারদের টেলিগ্রাম করলেন মুসোলিনি

১৯৮৬-র বিশ্বকাপ

‘খুদে ডাক্তার’ দুভালিয়ে হাইতি ছেড়ে পালাল, যাবার সময় যতটা পারল লুটে নিয়ে গেল। একই রকমভাবে ফিলিপিন্সের ফার্দিনান্দ মারকোসও লুটপাট চালিয়ে শেষে দেশ ছেড়ে পালাবার তাল করছিল। একসময় জানা গেল যে, ফিলিপিন্সের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক ফার্দিনান্দ মারকোস দেশ ছেড়ে ভেগেছে। মার্কিন গোয়েন্দারা তার দেশ ছাড়ার আগে পর্যন্ত কিছুই জানাতে পারেনি।

দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর হ্যালির ধূমকেতু আমাদের আকাশে উঁকি দিয়ে গেল। ইউরেনাস নামক গ্রহটির ন'খানা চাঁদ আবিষ্কৃত হলো। সূর্যের প্রখরতা থেকে ওজ়োনের যে পর্দা আমাদের বাঁচায়, তাতে প্রথম ছিদ্রটি ধরা পড়ল। জিন গবেষণার সুফল হিসেবে লিউকেমিয়ার নতুন একটা ওষুধ বাজারে এল। জাপানে এক জনপ্রিয় গায়ক আত্মহত্যা করল, তার তেইশজন ভক্ত সেই মহিলাকে অনুসরণ করে নিজেদের জীবন শেষ করে দিল। ভয়ংকর ভূমিকম্পে সালভাদোরের দু'লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ল। ওদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পরমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের ভয়াবহ বিপর্যয়ে তেজস্ক্রিয় বিষের মেঘ আকাশে ছড়িয়ে পড়ল। চেরনোবিলের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ কত মাইল দূরে ছড়িয়ে গিয়েছিল, কত লোক মারা গেল, কেউ জানে না। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষা যেমন অসম্ভব ছিল, তাকে থামানোও ছিল দুঃসাধ্য।

ফেলিপ গঞ্জালেস ‘না, না’ বলে অনেক দিন ধরে চেঁচিয়ে শেষমেশ অতলান্তিক মহাসাগর এলাকার সামরিক জোট ‘ন্যাটো’-কে হ্যাঁ বলতে বাধ্য হলো। ইউরোপীয় কাউন্সিলের ভোটের সুবাদে পর্তুগিজ় আর হিস্পানিরা ইয়োরোপের সাধারণ বাজারে [কমন ইউরোপিয়ান মার্কেট] ঢুকে গেল। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পালমেকে দিনদুপুরে দুষ্কৃতীরা রাস্তায় গুলি করে মারল, গোটা দুনিয়া এই সংবাদে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল। শিল্প সাহিত্যের জগতেও বিষাদের হাওয়া : বিখ্যাতদের মধ্যে আমাদের ছেড়ে গেলেন শিল্পী হেনরি মুর, লেখক সিমোন দু বোভোয়া, জ্যঁ জ্যনে, হুয়ান রুলফো আর হোর্খে লুইস বোর্খেস।

এই সময়েই ইরানগেট কেলেঙ্কারির বোমা ফাটছে, নিকারাগুয়ায় প্রতিবিপ্লবী শক্তি ‘কন্ট্রা’ মনের সুখে সেদেশে বন্দুক আর ড্রাগের চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছিল, আর তাতে জড়িয়ে গেল মার্কিন রাষ্ট্রপতি রেগন এবং তার গোয়েন্দাবাহিনী সিআইএ-র নাম। মহাকাশযান ‘চ্যালেঞ্জার’ও পেটের মধ্যে সাতজনকে নিয়ে কানভেরাল অন্তরীপ থেকে উড়াল দেবার সময় ফেটে গেল। মার্কিন বিমান বাহিনী লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ করে কর্নেল গদ্দাফির এক মেয়েকে হত্যা করল। ওরা মেয়ের বাপকে কোনও একটা আক্রমণের জবাব দিতে চাইছিল, পরে জানা যায় সে-আক্রমণের দায় গদ্দাফির নয় বরং ইরানের।

লিমার কারাগারে চারশো কয়েদিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারা হলো। মিয়ামির সর্বজ্ঞ মাতব্বররা বলে বেড়াচ্ছিল খুব শিগগিরই নাকি ফিদেল কাস্ত্রোর পতন অনিবার্য। আর সেরেফ কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা শুধু ! ঠিক আগের বছর মেহিকো শহরের ভয়াল ভূমিকম্পে গোড়া নড়বড়ে কিন্তু গাদা-গাদা লোক থাকত এমন বাড়িগুলো ধূলিসাৎ হয়ে গেল। শহরের একটা বড় অংশ তখনও ধ্বংসস্তূপ হয়ে রয়েছে, এমন সময় ত্রয়োদশ বিশ্বকাপ শুরু হলো।

এবারে ইওরোপের চোদ্দোটা আর আমেরিকার ছ'টা দেশের সঙ্গে সঙ্গে খেলতে এল মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক আর আলজিরিয়া। এবারের বিশ্বকাপেই গ্যালারিতে শরীর দুলিয়ে দর্শকরা উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ [মেক্সিকান ওয়েভ] তুলতে শুরু করে, তার জনপ্রিয়তা এতই বাড়ে, আজও দুনিয়ার যেকোনও প্রান্তের স্টেডিয়ামে একই দৃশ্য দেখা যায়। ’৮৬-র বিশ্বকাপে কিছু খেলা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে মাথার চুল খাড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। যেমন ব্রাজ়িল-ফ্রান্সের ম্যাচটার কথাই ধরুন না! প্লাতিনি, জ়িকো, সক্রেটিস- যাদের খেলা দেখতে মানুষ স্টেডিয়ামে ভিড় করেছিল, তারা সবাই পেনাল্টি নষ্ট করল। ডেনমার্ক দু' দুটো গোল-উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকল : তারা উরুগুয়েকে ছ' গোল মারল আর হিস্পানিদের বিরুদ্ধে পাঁচটা হজম করল।

সে যাইহোক, ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ ছিল মারাদোনার বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডর বিরুদ্ধে দুটো ন্যাটা গোল করে সে ফকল্যান্ডের যুদ্ধে ঘা খাওয়া জাতীয় অহংকারের প্রতিশোধ নিল। মারাদোনার ন্যাটা গোল দুটোর একটা বাঁ-হাতে ঘুষি মেরে, যাকে মারাদোনা ‘ঈশ্বরের হাত’ বলেছিল; অন্যটা বাঁ পায়ের গোল, ইংল্যান্ডের রক্ষণের সবাইকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে গোলটা করেছিল।

ফাইনালে আরহেন্তিনা জার্মানির মুখোমুখি হলো। খেলার শেষের দিকে মারাদোনার নির্ণায়ক পাসেই বুরুচাগা বল নিয়ে একা গোলে ঠেলে দিয়ে ৩-২ গোলে জিতল। কিন্তু তার আগেও একটা নয়নাভিরাম গোল হয়েছে : ভালদানো নিজেদের গোললাইন থেকে দৌড় শুরু করে গোটা মাঠ পেরিয়ে জার্মানির বক্সে ঢুকল। শুমাখার গোল ছেড়ে এগিয়ে এসে বল কাড়ার চেষ্টা করতেই সে আলতো করে বলটা ভাসিয়ে দিয়ে জালে জড়াল। ভালদানো যেন এগোতে এগোতে বলের সঙ্গে কথা বলছিল : "গোলের মধ্যে যাও না, পায়ে পড়ি, মাইরি"।

ফ্রান্স তৃতীয় স্থান পায়। তারপরেই ছিল বেলজিয়াম। ইংল্যান্ডের লিনেকার ছ'টা গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়। মারাদোনা পাঁচটা গোল করেছিল, ব্রাজ়িলের কারেকা আর হিস্পানি বুত্রোগেনিয়োও পাঁচটা করে গোল করে।

আরও পড়ুন- এক হাতে রিভলবার, অন্য হাতে চিঠি! মাঝমাঠেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন ফুটবলার

টেলিতন্ত্র

আজকালকার সব স্টেডিয়ামই কার্যত বিশালাকার টিভি স্টুডিও। ফুটবল খেলাটাই হয় টিভির জন্য যাতে আপনি ঘরে বসে সব দেখতে পারেন।

১৯৮৬-র বিশ্বকাপ নিয়ে ভালদানো, মারাদোনা এবং আরও কয়েকজন খেলোয়াড় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছিল। কারণ সেবার প্রতিটি বড় ম্যাচই খেলা হয়েছিল দুপুর রোদে, মেহিকোর রোদ যেখানে পড়ে সে জায়গাটা ভাজা-ভাজা হয়ে যায়। মেহিকোয় যখন দুপুর তখন ইওরোপের রাত্রি, ফলে ইওরোপীয় টেলিভিশন কোম্পানিগুলোর কাছে এর চেয়ে ভালো সময় আর কীই বা হতে পারে। জার্মান গোলকিপার হেরাল্ড শুমাখার একটা গল্প বলেছিল : "আমি দরদরিয়ে ঘামতাম, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত। আর মাঠের ঘাসকে মনে হতো গুয়ের মতো নোংরা, শক্ত, বিকট দর্শন, শত্রুর মতো। ভর দুপুরে স্টেডিয়ামের ওপর খাড়া রোদ পড়ত, আর আমাদের চাঁদি ফাটত। একটু ছায়াও পেতাম না। ওরা বলত টেলিভিশনের জন্য নাকি এটাই জরুরি।"

ফুটবল এখন শুধুই দর্শনধারী হয়ে উঠছে, ভালো ফুটবলের কদর আর করে কে? খেলোয়াড়রা শুধুই বলে শট মারতে পারে আজকাল, তাদের অশ্রুপাতের অবসর নেই। এবং আভেলাঞ্জি ফুটবল ব্যাবসায় কঠোর ডিক্রি জারি করে বলে দিয়েছে : "ওরা শুধু খেলবে আর প্রতিপক্ষকে আটকাতে ফাঁদ পাতবে।"
১৯৮৬-র বিশ্বকাপটা চালিয়েছিল কারা? মেহিকোর ফুটবল ফেডারেশন? আজ্ঞে না, গিয়েলমো কানিয়েদো, টেলিভিসা কোম্পানির সহ সভাপতি কিন্তু কোম্পানির আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সভাপতি। এই বিশ্বকাপটা ছিল একবারেই টেলিভিসা কোম্পানির, যারা মেহিকোর সাধারণ মানুষের অবসর সময়ের বড় অংশ দখল করে থাকত এবং যাদের মেহিকো ফুটবলের বেতাজ বাদশা বললে ক্ষতি হয় না। টেলিভিসা এবং সেইসূত্রে ফিফার কাছেও টাকাটাই ছিল শেষ কথা, আর ওরা বড় দাঁও মেরেছিল ইওরোপে খেলা দেখানোর স্বত্ব বেচে। মেহিকোর এক সাংবাদিক যখন সাহস করে প্রশ্ন করে বিশ্বকাপের লাভক্ষতির অঙ্কটা কেমন দাঁড়াল, কানিয়েদো তাকে ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়, "দেখুন, এটা একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমরা কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই।"

টেলিভিসা মেহিকোর জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবলকেই শুধু নিয়ন্ত্রণ করে না। তিনটে প্রথম ডিভিশনের ক্লাবও তাদের তাঁবে রয়েছে। আমেরিকা তার মধ্যে সব থেকে শক্তিশালী দল, তাছাড়া আছে নেকাক্সা আতলান্তে।

১৯৯০-এ টেলিভিসা দেখিয়ে দিয়েছে মেহিকোর ফুটবলের ওপর তারা কী নৃশংস দখলদারি বজায় রেখেছে। সেবছর পুয়েবলা ক্লাবের সভাপতি এমিলিয়ো মউরা একটা সাংঘাতিক ধাঁধার সমাধান করে ফেল : ও হিসেব কষে দেখায় সম্প্রচার স্বত্ব বাবদ টেলিভিসা অক্লেশেই ক্লাবগুলোকে আরও বেশি টাকা দিতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবেই মউরার এই উদ্যোগ মেহিকো ফুটবল ফেডারেশনের অনেক নেতৃস্থানীয় মানুষের মনে ধরে। একচেটিয়া ব্যাবসার দাপটে টেলিভিসা ক্লাবগুলোকে কমবেশি এক হাজার ডলার করে দিত, কিন্তু নিজেরা বিজ্ঞাপন থেকে বিপুল টাকা শুষে নিত।

তবে গোটা ব্যাপারটা টেলিভিসা যেভাবে সামলাল তাতেই বোঝা গেল পুতুল নাচের সুতোটা কার হাতে আছে। মউরাকে তারা নির্দয়ভাবে ধসিয়ে দিয়েছিল : রাতারাতি পাওনাদাররা তার কোম্পানি-ঘরবাড়ি সব বাজেয়াপ্ত করল, তাকে হুমকি দেওয়া শুরু হল, মারধরও জুটল কপালে। পলাতক ঘোষণা করে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা বের করা হলো। শুধু তাই নয় একদিন সকালে হঠাৎ করে তার ক্লাবের স্টেডিয়ামে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হল। ছলে-বলে কৌশলে কোনওভাবেই যখন তারা মউরাকে পেড়ে ফেলতে পারল না, তখন তাকে সোজা শ্রীঘরে পাঠিয়ে দিয়ে বিদ্রোহী ক্লাবের পরিচালন সমিতি এবং মেহিকো ফুটবল ফেডারেশন থেকেও হঠিয়ে দেওয়া হলো। তার সঙ্গে যারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল তারাও ছাড় পেল না।

তামাম দুনিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে টেলিভিশনই স্থির করে কোথায়, কখন এবং কীভাবে ফুটবল খেলা হবে। খেলাটার শরীর, মন, পোশাক-আশাক সবই ছোটপর্দার কাছে বেচে দেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়রা এখন রীতিমতো টেলি-তারকা। তাদের সঙ্গে পাল্লা দেয় এমন কোনও অনুষ্ঠান টিভিতে হওয়া কি সম্ভব? ১৯৯৩ সালে ফ্রান্স এবং ইতালিতে সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখেছে ইওরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের ফাইনালে অলিম্পিক দে মার্সেইয়ের সঙ্গে এসি মিলানের খেলা। মিলানের মালিক তো সর্বজনবিদিত, সিলভিয়ো বার্লুসকোনি, ইতালির টেলি-সম্রাট। ফ্রান্সে বেরনার তাপির কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না, তবু তার ক্লাব অলিম্পিক সেবছর ছোটোপর্দার স্বত্ব থেকে ১৯৮০-র তুলনায় তিনশো গুণ বাড়তি টাকা পেয়েছিল। বুঝতেই পারছেন খেলার প্রতি তাপির মোহভঙ্গ হবার কোনও কারণ ছিল না।

আজকাল লাখে লাখে মানুষ টিভির পর্দায় ফুটবল দেখে, স্টেডিয়ামে তো ঢুকতে পারে মাত্রই কয়েক হাজার মানুষ। ফুটবল ভক্তের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে, এমনকী খেলার সময় বিজ্ঞাপনে যেসব পণ্যের ছবি-ছক্কা দেখানো হয় তার সম্ভাব্য ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বেসবল এবং বাস্কেটবলের সঙ্গে ফুটবলের একটা মৌলিক তফাৎ আছে। ফুটবলে নিরবচ্ছিন্নভাবে খেলা চলে, ফলে বিজ্ঞাপনের বিরতির জন্য সামান্যই সময় পাওয়া যায়। খেলায় একটা মাত্র হাফ-টাইম নিয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের বড়ই সমস্যা হচ্ছে। মার্কিন টেলিভিশন তাই ফুটবলের এই বিতিকিচ্ছিরি খুঁত সংশোধন করে পঁচিশ মিনিট করে চারটে ভাগে খেলার প্রস্তাব পেশ করেছে এবং আভেলাঞ্জি সে প্রস্তাব মেনেও নিয়েছে।

More Articles