জম্বিদের মস্তিষ্ক কেমন? তিন 'মৃতের' মাথা পরীক্ষা করে শিউরে ওঠা তথ্য জানালেন গবেষকরা

Zombies of Haiti: তিনজন জম্বির ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি এবং ডিএনএ পরীক্ষা করে সত্যটা জানা যায় অবশেষে

সাধারণত মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে কোনও ক্লিনিকাল স্টাডি হয় না। মানে যে দেহে প্রাণই নেই সেই দেহে চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোন পরীক্ষাই বা করা সম্ভব? দেহ তো সাড়াই দেবে না। যদিও কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি নয়। মৃত ব্যক্তিদের নিয়েও এমন পরীক্ষা হয়েছে। যে সে মৃত নয়, একেবারে জম্বি! তিনজন জম্বির মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরীক্ষা করে দেখেছিলেন হাইতির গবেষকরা। আসলে ওই তিন জম্বিই রাজি হয়েছিল গবেষকরা তাদের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করুক। গবেষকদের লক্ষ্য ছিল এই তিন জম্বির পরিচয় অনুসন্ধান করা ও প্রকাশ করা। স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছিলেন, এই তিন জনই বহুকাল আগে মারা গিয়েছেন এবং এখন ফিরে এসেছেন।

হাইতিয়ান ভুডু বিশ্বাস অনুসারে, মৃতদের আত্মাকে কখনও কখনও বোকর নামক জাদুকররা বন্দি করতে পারে। এই জাদুকররা আবার সেই বন্দি আত্মাদের ব্যবহার করে তাজা মৃতদেহকে জম্বি হিসেবে পুনর্জীবিত করতে পারে। গ্রামীণ হাইতির জলা অঞ্চলে প্রায়শই নাকি এই জম্বিদের দেখা যায়। মৃত অথচ জ্যান্ত এই ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়ার ঘটনা নিয়মিত স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কানে আসে। প্রতি বছর নাকি প্রায় হাজার খানেক জম্বি দেখা যায় এখানে।

১৯৯৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, গবেষকরা এই হেঁটে চলে বেড়ানো মৃতদেহের যৌক্তিক ব্যাখ্যা খোঁজার উদ্দেশে এই তিনজন জম্বির পরীক্ষা করেন, ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে এই পরীক্ষা করা হয়।

আরও পড়ুন- মৃত্যুর পরেও মেলেনি কবর! কীভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা?

এর মধ্যে প্রথম জম্বি ছিলেন এমন একজন মহিলা যিনি ৩০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তিন বছর পরে পরিবারের সদস্যরা এই মৃত মহিলাকে ফের দেখতে পান। ওই মহিলার মুখের বিশেষ একটি চিহ্ন দেখেই তারা তাকে চিনতে পারেন। স্থানীয় আদালত তখন ওই মহিলার কবর খুলে দেখার অনুমোদন দেয়। কবর খুলে দেখা যায় ভেতরে কেবল পাথর ভর্তি!

জম্বির বর্ণনা দিতে গিয়ে গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, "তিনি মাথা নিচু করে রেখেছিলেন এবং অত্যন্ত ধীরে আর শক্তভাবে হাঁটতেন। হাত প্রায় নাড়াতেনই না। কোনও কথাবার্তা বা যোগাযোগ করতেও পারতেন না। তবে মাঝে মাঝে কিছু শব্দ বলতেন যা বোধগম্য হতো না।"

মহিলাকে সকলেই জম্বি বললেও গবেষকরা জানান যে তার ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের পরীক্ষার ফল ছিল অসাধারণ। ওই মহিলার অবস্থা বিষয়ে তাদের মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা জানান, মহিলা ক্যাটাটোনিক স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু তিনি কীভাবে মৃত অবস্থা থেকে ফিরে এসেছেন তা ব্যাখ্যা করতে পারেন না গবেষকরা।

বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে, গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন যে, সম্ভবত মোটেও মারা যাননি ওই মহিলা। ওই মহিলাকে 'নিউরোমাসকুলার টক্সিন' বিষ দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত এটি ওই বোকর জাদুকরদেরই খেলা যাতে বিষের ফলে ক্যাটেলেপসি (অচেতনতা, খিঁচুনি) দেখা দেয় এবং আত্মীয়দের ভুল বোঝানো যায় যে মহিলা মারা গেছেন। চেতনা ফিরে পাওয়ার কিছুক্ষণ আগে কবর দেওয়া ওই মহিলার দেহটি খুঁড়ে বের করত জাদুকরই। কবরের মধ্যে অক্সিজেনের অভাবের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে, যে কারণে হাবভাব জম্বির মতো হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- মৃত্যুর চারশো বছর পরও কবর জোটেনি! রানিকে দেখতে এসে পর্যটকরা কেন খাবলে নিতেন হাড়?

গবেষকরা ২৬ বছর বয়সী একজন ব্যক্তির বর্ণনা করেছেন যাকে কবর দেওয়ার ১৯ মাস পরে স্থানীয় এক মোরগ লড়াইয়ে দেখা গিয়েছিল। পরে জানা যায়, ওই যুবকের কাকা জম্বি তৈরি করার জন্য জাদুবিদ্যা ব্যবহার করেছেন! ক্লিনিকাল পরীক্ষায় কোনও অতিপ্রাকৃত ফলাফল পাওয়া যায়নি। ওই জম্বির 'অরগ্যানিক ব্রেন সিন্ড্রোম' এবং মৃগী রোগ ধরা পড়ে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, এই যুবক সেই ব্যক্তিই নন যিনি মারা গিয়েছিলেন!

৩১ বছর বয়সী একজন মহিলা, ১৩ বছর আগে মারা গিয়েও নাকি ফিরে এসেছেন বলে জানা যায়। মেডিকেল পরীক্ষায় দেখা যায় যে, তিনি তখনও মানুষই রয়েছেন! জেনেটিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৩ বছর আগে মারা যাওয়া মহিলা তিনি নন।

এই শেষ দু'টি উদাহরণকে একসঙ্গে বিবেচনা করে গবেষকরা জানান, মানুষের অন্ধবিশ্বাস আর রোগ- এই দুই মিলেই যত বিভ্রান্তি, যত অযৌক্তিকতা। মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের সমস্যাকে মানুষই অতিপ্রাকৃত করে দেখেছে। শোকার্ত আত্মীয়দের ভুল বোঝানোও সবচেয়ে সহজ, তাই ভুডু বিশ্বাসকে ফলাও করে জম্বি ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছে। এই তিন 'জম্বি'র পরীক্ষা না করলে সত্যটা কোনওদিন জানাই যেত না।

 

More Articles