কয়লা কাণ্ডের জাল কতটা গভীর? অভিষেক কোথায় দাঁড়িয়ে এই মামলায়?

প্রায় সাড়ে ৮ ঘন্টার ম্যারাথন জেরার পরে দিল্লিতে ইডি অফিস থেকে বের হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কয়লা কাণ্ডে অভিষেককে লাগাতাঁর জেলার সম্মুখীন হতে হয়। যদিও দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইডি অফিস থেকে বেরিয়ে অভিষেক সাফ জানিয়েছেন, তিনি মাথা নোয়াতে নারাজ। তিনি একেবারে অন্য মেটেরিয়ালে তৈরি, তাই তিনি সহজে ভেঙে পড়েন না। এমনকী, তাকে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ইডির হাতে কোন তথ্য প্রমাণ নেই, শুধুমাত্র হেনস্থা করার জন্য ১৫০০ কিলোমিটার দূরে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে তাকে। অভিযোগ প্রমাণ হলে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করবেন বলেও চ্যালেঞ্জে জানালেন অভিষেক।

বললেন, আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য বলে আমি চোর। আর যারা বিজেপি করছে তাঁরা সব নাকি সাধু। অভিষেক বললেন, যারা সারদা-নারদা-রোজভ্যালি নিয়ে গলা ফাটাচ্ছে, তাদেরকে নিজের হাতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, সুদীপ্ত সেন তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এই সমস্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা এখন তাদের সমীহ করে চলছে। এরা সব নাকি বিজেপির বড় বড় নেতা। সিআরপিএফের নিরাপত্তায় জেড এমনকি জেড প্লাস নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিষেকের মতে, এহেন পক্ষপাতিত্বের কারণে মানুষের মধ্যে এজেন্সির তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। 

বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন তিনি। বিজেপিকে ওয়াশিং মেশিন এর ভূমিকায় কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও তোপ দেগেছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি এখনো আস্থা রেখেছেন তিনি। তদন্ত ক্ষেত্রে সমস্ত রকম সাহায্য করবেন বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি উপনির্বাচন এবং অধিবেশন চলাকালীন তাকে তলব করা হয় বলেও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে কয়লা পাচার কিংবা গরু পাচারের মত কেলেঙ্কারিতে দায় ঠেললেন সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর দিকে। তাঁর দাবি, গরু যদি ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হয়ে যায়, তাহলে বিএসএফ জওয়ানরা কি করেন? এই বিষয়টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে উল্লেখ করে অভিষেকের বক্তব্য, 'এই সমস্ত স্ক্যামকে হোম মিনিস্ট্রি স্ক্যাম বলা উচিত।' 

কয়লা কাণ্ডের সূত্রপাত

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে যতই বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসা হোক না কেন, এই কয়লা কাণ্ডের জাল ছড়িয়ে রয়েছে অনেক গভীর পর্যন্ত। এই কয়লা কাণ্ডের সমগ্র ঘটনাটি শুরু হয় কলকাতায় গত ২৭ নভেম্বর ২০২০ তাঁরিখে সিবিআই এর রেজিস্টার করা একটি মামলার মাধ্যমে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি, ৪০৯ এবং জালিয়াতি প্রতিরোধ আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের লিজ নেওয়া জায়গায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে কয়লা চুরির ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার, কুনুস্তরিয়া কাজোরা এলাকার রেলওয়ে লাইনের আশেপাশের এলাকা থেকে কয়রা চুরির ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ ওঠে সেই সময়। 

এই কয়লা চুরির ঘটনা সরাসরি অভিযোগ ওঠে এলাকার রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে ৬ জন পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গেই এফআইআর-এ নাম ওঠে আরো কয়েকজন জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির, যাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের নিজস্ব কর্মী। সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধেই ওঠে চুরির অভিযোগ, তাই তড়িঘড়ি তদন্তে নামে সিবিআই। বেআইনি কয়লা খনন, বেআইনি কয়লা খনি স্থাপন, জাতীয় সম্পত্তির অপব্যবহার, এবং কয়লা চুরি এবং পাচারের অভিযোগ ওঠে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। ইসিএল, সিআইএসএফ, ভারতীয় রেলওয়ে এবং এই মামলার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য দপ্তরের বিরুদ্ধে উঠতে শুরু করে প্রশ্ন।

এই অভিযোগের পরেই ইসিএলের একটি স্পেশাল টাস্কফোর্স এবং সরকারের ভিজিলান্স ডিপার্টমেন্ট ইসিএলের অধীনস্থ এলাকায় তদন্ত শুরু করে। মে ২০২০ থেকে এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ইসিএলের লিজ নেওয়া এলাকায় গিয়ে পৌঁছান ইসিএল টাস্কফোর্সের আধিকারিকরা। খোঁজ পাওয়া যায় বিভিন্ন বেআইনি কয়লা খাদান এবং কয়লা খনির। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় ৯.০৫০ মেট্রিক টন বেআইনিভাবে উত্তোলিত কয়লা। পাণ্ডবেশ্বর এলাকার রেললাইনের ধারে তদন্ত চালানোর সময় ইসিএল আধিকারিকদের হাতে আসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ। জানা যায়, এই কয়লা পাচারের মামলায় শুধুমাত্র ইসিএলের আধিকারিকরা জড়িত নন, তাঁর সাথে জড়িত আছেন ভারতীয় রেলওয়ের একাধিক কর্মী। 

এফআইআর-এ নাম ওঠে ইসিএলের একাধিক আধিকারিকের। অভিযুক্তদের তালিকায় ছিলেন কুনুষ্টরিয়া এলাকার তৎকালীন ইসিএল জেনারেল ম্যানেজার অমিত কুমার ধর, কাজোরা এলাকার জেনারেল ম্যানেজার জয়েশ চন্দ্র রায়, চিফ সিকিউরিটি অফিসার তন্ময় দাস, আসানসোল এলাকার সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর ধনঞ্জয় রায়, এবং কাজোরা এলাকার সিকিউরিটি ইনচার্জ দেবাশীষ মুখার্জী। এদের সাথে সাথেই আরো একটি নাম এই এফআইআর-এ উঠে আসে। জানা যায় নাকি এই ব্যক্তির সঙ্গে, তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও ছিল। তিনি হলেন অনুপ মাজি ওরফে লালা। 

লালার ভূমিকা

সিবিআইয়ের এফআইআর অনুযায়ী, লালা ছিলেন ইসিএল এলাকার সমস্ত বেআইনি কয়লা খনির এবং কয়লা পাচার কাণ্ডের প্রধান হোতা। বিভিন্ন কয়লা খনি থেকে বেআইনিভাবে কয়লা খনন করা, কয়লা খাদান তৈরি করা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কয়লা পাচার, সবই চলতো এই লালার নির্দেশে। এফআইআর-এ অভিযোগ ছিল, উপরিউক্ত এই সমস্ত কাজগুলি হত এই লালার নির্দেশে এবং তাঁর সঙ্গে নাকি অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের যোগসাজশ ছিল। লালার সূত্র ধরেই এই সরকারি কর্মচারীদের নাম জানতে পারে সিবিআই। জানা যায়, এই সরকারি কর্মচারীরা টাকার বিনিময়ে লালার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল এই কয়লা পাচারের ব্যবসায়। ইসিএলের অধীনস্থ এলাকায় বেআইনি কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা পাচারের অভিযোগে লালার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। 

অন্য দিকে, সিবিআইয়ের এফআইআরের সূত্র ধরে এই মামলায় একটি এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফর্মেশন রিপোর্ট ওরফে ইসিআইয়ার দায়ের করে ইডি। নয়াদিল্লিতে তাদের সদরদপ্তরে এই মামলা নিয়ে আলাদা একটি তদন্ত শুরু করে ইডি। সিবিআইয়ের এফআইআর অথবা ইডির ইসিআইআর, কোথাও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পর্যন্ত উল্লেখ ছিল না। কিন্তু, মাস কয়েকের মধ্যেই এই মামলায় আরো একজনের নাম সংযুক্ত হয়, যার সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা নজরে চলে আসেন সস্ত্রীক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক, রুজিরা ও বিনয় 

এই মামলা শুরু হবার প্রথম দিকে যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েদের সন্দেহ করেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। কিন্তু, অনুপ মাজি ওরফে লালার সমস্ত টাকা একটি বিশেষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ট্রান্সফার হতো বলে জানতে পারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। অন্য দিকে, ইডির নজরে আসে দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, যার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্রের। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, বিনয়ের মাধ্যমেই লালার টাকা সরাসরি অভিষেকের পরিবারের কাছে আসত। অভিষেকের স্ত্রী এবং শ্যালিকার সঙ্গেও বিনয়-র যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ করে সিবিআই এবং ইডি। 

এরপরেই এই মামলার গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং সিবিআই এর নজরে চলে আসেন সস্ত্রীক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিনয় মিশ্র। জানা যায়, অভিষেক যখন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সেই সময় থেকেই বিনয়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেশ ভালো। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বেশ গভীর সম্পর্ক ছিল বহুদিন যাবত। পরে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি সিবিআই এবং ইডি অধিকর্তাদের। 

তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিনয়ের যোগসাজশ শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মাধ্যমে নয়। এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হিসেবে পরিচিত হতেন বিনয় মিশ্র। জুলাই ২০২০ সালে মিশ্র তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখার জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবেও নিয়োজিত হন। শুধুমাত্র কয়লা কান্ড নয়, গরু পাচার কাণ্ডেও তিনি সিবিআইয়ের আতস কাচের নিচেই রয়েছেন। সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সিবিআই এবং ইডি। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তাঁরিখে কলকাতায় তাঁর তিনটি বাসভবনে একের পর এক খানা তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। 

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দেশ ছেড়ে দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিনয় মিশ্র। তাঁর খোঁজ না পেয়ে কয়লা কাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে তাঁর ভাই বিকাশ মিশ্র এবং বাঁকুড়া পুলিশ স্টেশনের তৎকালীন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অশোক মিশ্রকে গ্রেফতাঁর করে ইডি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এরা দুজনেই বিনয় মিশ্রর সঙ্গে সরাসরি ভাবে যোগাযোগ রাখতেন এবং কয়লা পাচার এবং গরু পাচার কাণ্ডে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। জানা যায় ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০-তেই দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছেন বিনয় মিশ্র। বিনয়ের আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, ১৯ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ভারতীয় পাসপোর্ট জমা দিয়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে নেন বিনয়। জানা যায় দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এর অন্তর্গত একটি ছোট্ট দ্বীপ ভানাতুর নাগরিকত্ব নিয়ে আছেন মিশ্র।

বিনয়ের বাবা-মাকে একাধিকবার হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হলেও তেজ বাহাদুর এবং ললিতা দুজনেই জুলাই মাসের মাঝামাঝি নাগাদ দেশ ছেড়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কোন একটা জায়গায় পালিয়ে যান। সিবিআই এবং ইডি মনে করে, বিকাশ এবং অশোকের মাধ্যমে প্রথমে লালার টাকা আসতো বিনয়ের কাছে। তাঁরপর এই সেই টাকা পৌঁছে যেত রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের কাছে। শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর শ্যালিকা মানেকা গম্ভীর, তাঁর স্বামী অঙ্কুশ আরোরা, এবং অঙ্কুশের পিতা পবন আরোরাকেও সিবিআই এ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। দফায় দফায় অভিষেককে জেরা করেছেন ইডি আধিকারিকরা। বিনয়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে দুটি বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়লা পাচারের টাকা ট্রান্সফারের হদিশ, সব কিছু নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 

অভিষেকের ম্যারাথন জেরা 

দিল্লিতে ইডি দপ্তরে প্রবেশের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে হোম মিনিস্ট্রি স্ক্যাম হিসেবে কয়লা কাণ্ডকে উল্লেখ করে খুব একটা রেহাই পেলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই দফায় তাকে এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো ইডির তরফে। জানা গিয়েছে এদিন থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে এই অ্যাকাউন্টের মালিকের ব্যাপারে। অভিষেক সে বিষয়ে মুখ না খুললেও, এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে কয়লা পাচার কাণ্ডের সরাসরি যোগাযোগ আছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। 

সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, 'কি এই কয়লা কেলেঙ্কারি? কি এই গরু পাচার কেলেঙ্কারি?' তাঁর দাবি, গরু তো একটা ছোট কীট নয়, একটা বেশ বড় প্রাণী। তাই যদি ভারত থেকে গরু বাংলাদেশে চলে যায় তাহলে প্রশ্ন ওঠে বিএসএফ কি করছে? জেরায় অভিযোগের থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সমস্ত কাগজ তিনি জোগাড় করে দিয়ে দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। এর পরেই ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের যুবরাজ। তিনি বললেন, 'কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে যারা নিজেদের স্বার্থ চরিতাঁর্থ করতে চাইছে, তাদের আমি বলতে চাই, আমি কিন্তু অন্য মেটিরিয়াল। এসব যত করবে, আমি আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হব, তত নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকবো।'

​​​​​​মামলা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে?

গত ১ বছরে কয়লা কাণ্ডের তদন্তে আরো কিছু তথ্য এবং প্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে এসেছে এবং সেগুলিকে সামনে রেখেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও এর আগে অভিষেক এবং রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা, কিন্তু সেই আবেদন সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে আদালত। রবিবার দিল্লি পৌঁছেই বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগে সরব হন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। তবে এই সরব হওয়া নিয়ে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের। একটা সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভা থেকে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বিনয়কে চেনেন না এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিনয়ের কোন সম্পর্ক নেই। পরবর্তীতে জানা যায়, তৃণমূলের সঙ্গে বিনয়ের দারুন যোগাযোগ আছে কারণ তিনি তৃণমূলের যুব শাখার একজন প্রথম সারির নেতা।

অভিষেককে ইডি দপ্তরে ডেকে পাঠানো নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তিনি যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে কোন সাফাই গাইতে যাননি। বরং তিনি সরাসরি তোপ দেগেছেন শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। কুনাল ঘোষের দাবি, 'নারদ মামলায় নাম রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। অথচ তাকে ডাকা হচ্ছে না কেন? যারা বিজেপিতে চলে গেছেন তাদের কি তাহলে ডাকা হবে না? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেরবারও সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, এবারও তিনি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।' 

কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও, যার বয়ান এখন ইডি এবং সিবিআই-এর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তিনি হলেন অভিষেক-পত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। জন্মসূত্রে তিনি থাইল্যান্ডের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম নিয়েও বিভ্রাট রয়েছে। ব্যাংককে তাদের হোটেল এবং ব্যবসা। পরে তাদের পরিবার যুক্ত হয় আমদানি-রপ্তানি সহ আরো অনেক ব্যবসার সঙ্গে। কাকতালীয়ভাবে, যে দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই সম্পূর্ণ ঘটনাটি ঘটানো হত, সেটাও থাইল্যান্ডের। অভিষেক এবং রুজিরার বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ কিভাবে সামলানো হয়েছিল সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল একটা সময়ে। রুজিরার বাবার নামের গোলমাল নিয়ে তাকে নাকি একবার শোকজের সম্মুখীনও হতে হয়। এত কিছুর পরেও ইডির বারংবার তলব সত্বেও ইডি দপ্তরে হাজিরা দিতে নারাজ রুজিরা। তাহলে কি তাঁর সঙ্গে সত্যিই এই মামলার যোগাযোগ আছে? প্রশ্ন উঠছে অনেক মহলেই।

More Articles