কাটা মুণ্ডুকে মেকআপ, একই ঘরে যৌনতা! আফতাবের মানসিক বিকৃতির আড়ালে লুকিয়ে যে সত্য
Delhi Murder Case Update: শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডু ফ্রিজ থেকে বের করে তাতে মেক আপ করাতেন আফতাব! আবার কোনও কারণে রাগ হলে সেই কাটা মুণ্ডুকে চড়ও মারতেন, এমনটাই দাবি দিল্লি পুলিশের
সারাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে এখন শ্রদ্ধা ওয়ালকার এবং তাঁর খুনি আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। নিজের প্রেমিকা, লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধাকে খুন করে ৩৫ টুকরো করে মেহরৌলির জঙ্গলে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রেমিক আফতাব। খুনের বীভৎসতা নড়িয়ে দিয়েছে সারা দেশকেই। মুম্বইয়ের এক বহুজাতিক সংস্থার কল সেন্টারে কাজ করতেন আফতাব এবং শ্রদ্ধা। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব, প্রেম, লিভ ইন হয়ে খুন হয়ে গেলেন শ্রদ্ধা। সাধারণ মানুষ তো বটেই, পুলিশ পর্যন্ত জেনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছে যে খুনের পর ৩০০ লিটারের একটি নতুন ফ্রিজ কিনে এনেছিল আফতাব। পচন আটকাতে শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলিকে প্যাকেটে ভাল করে মুড়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ফ্রিজে। প্রতিদিন রাতে একটি করে টুকরো ফ্রিজ থেকে বের করে মেহেরুলির জঙ্গলে ফেলে আসত আফতাব। তাও টানা ১৮ দিন ধরে! তবে এখানেই শেষ নয়, অবাক হওয়ার বাকি রয়েছে আরও। জেরায় আফতাব জানিয়েছে ডেক্সটার ওয়েব সিরিজ দেখেই শ্রদ্ধাকে খুনের প্ল্যান তৈরি করে সে। কিন্তু মনোবিদরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। ডেক্সটার কেন, পৃথিবীর কোনও ওয়েব সিরিজেই এমন কিছু থাকে না যা দেখে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ রাতারাতি একজন নৃশংস খুনিতে পরিণত হবে।
তাহলে কী লুকিয়েছিল এই প্রেমিকের মনে? আফতাবের ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেকে উন্নতমনস্ক এবং নারীবাদী বলে দাবি করেছেন তিনি। নিজের ফেসবুক পোস্টে একাধিক জায়গায় আফতাব নিজেকে এলজিবিটিকিউ সমর্থক হিসাবেও দেখিয়েছিলেন। তাঁর প্রোফাইল ঘাঁটলে মনে হবে, তিনি একজন পরিবেশপ্রেমী। বলাই যায় সব মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক উন্নত, উদার মানসিকতার ব্যক্তি হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনে অভিযুক্ত আফতাব একজন ফুড ব্লগার। তিনি একাধারে শেফও। তাঁর হোটেল ম্যানেজমেন্টের জ্ঞান প্রয়োগ করেই ছুরি দিয়ে মৃত প্রেমিকার দেহের ৩৫ টুকরো করেছিলেন আফতাব।
আরও পড়ুন- ৭০ টুকরো স্ত্রী, ৩০০ টুকরো প্রেমিক! প্রেমের এমন নৃশংস পরিণতি বারবার দেখেছে দেশ

শুধু তাই নয়, শ্রদ্ধার লিভারকে কার্যত কিমায় পরিণত করেছিলেন এই প্রেমিক শেফ। হোটেল ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়া হলেও একটি কল সেন্টারে চাকরি করতেন আফতাব। পাশাপাশি চলত ইনস্টাগ্রামে ফুড ব্লগিং। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। জানা গিয়েছে, প্রায় ২৮ হাজার মানুষ ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ফলো করতেন। তবে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইনস্টাগ্রামে নতুন কোনও ভিডিও আপলোড করেননি আফতাব। ইনস্টাগ্রাম মারফতই জানা গেছে, শেষবার শ্রদ্ধাকে নিয়ে হিমাচল প্রদেশ ঘুরতে গিয়েছিলেন আফতাব। ফিরে এসে গত মে মাসেই খুন করে দেন প্রেমিকাকে।
শুধুমাত্র এই খুনের বীভৎসতাই নয় আফতাবের বিকৃত মনস্কতাও ভাবাচ্ছে সকলকে। একজন মানুষ যে নিজেকে স্বাভাবিক মস্তিষ্কের বলে দাবি করে, সে কীভাবে এতটা বিকৃতভাবে ঘটনা ঘটাতে পারে? সম্প্রতি কিছু উদাহরণ এসে বদলে দিচ্ছে মানবিক আচার আচরণের ধ্যান ধারণা। জানা যাচ্ছে, প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফ্রিজে রাখা কাটা মুণ্ডুর সঙ্গে কথা বলতেন আফতাব। শরীরের অন্যান্য অংশগুলিকে ফেলে দিয়ে এলেও শ্রদ্ধার মাথা নিজের কাছে রেখে দেন তিনি। শুধু তাইই নয়, শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডু ফ্রিজ থেকে বের করে তাতে মেক আপ করাতেন আফতাব! আবার কোনও কারণে রাগ হলে সেই কাটা মুণ্ডুকে চড়ও মারতেন, এমনটাই দাবি দিল্লি পুলিশের।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই ৩০০ লিটারের ফ্রিজে শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডুর পাশাপাশিই খাবারও রাখতেন আফতাব। বাড়িতে বন্ধু এলে অবশ্য সেই মুণ্ডু সরিয়ে দেওয়া হত। আফতাবের বন্ধুদের অনেকেই জানিয়েছেন, আফতাবের ফ্ল্যাটে সারাক্ষণ ধুপকাঠি জ্বলত এবং বিভিন্ন সুগন্ধি স্প্রে করা থাকত। শ্রদ্ধা ছাড়াও অন্যান্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল আফতাবের। পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্রদ্ধাকে খুনের পর ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আরও এক তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিলেন আফতাব। মাঝেমধ্যেই সেই বান্ধবীর সঙ্গে রাত্রি যাপন করেছে আফতাব। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এছাড়াও অন্যান্য মহিলাদেরও বাড়িতে ডেকে এনে যৌনতায় লিপ্ত হতেন আফতাব। গত কয়েক মাসে নানা মহিলার সঙ্গে ওই বাড়িতেই তাঁর শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অবশ্য, যে মহিলারা আফতাবের সঙ্গে সময় কাটাতে তাঁর বাড়িতে আসতেন, শ্রদ্ধার খুন সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণা ছিল না।
আরও পড়ুন- ক্রাইম থ্রিলারে ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েই প্রেমিকাকে ৩৫ টুকরো! কী আছে এই ওয়েব সিরিজে

মনোবিদদের মতে, আফতাবের ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। যে এমন নৃশংসভাবে খুন করতে পারে, দেহ লোপাট করতে পারে; সে আর যাই হোক সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নয়। আফতাব বিগত পাঁচ বছর ধরে ওই কল সেন্টারে চাকরি করছেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রায় চার বছরের। এছাড়াও পরিবার-পরিজন রয়েছে, বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে আসে, কেউ কি কখনই আফতাবের মধ্যে এমন মানসিক বিকৃতির লক্ষণ দেখেননি? নাকি দেখেও আড়াল করে গিয়েছেন। এই বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতেও এই ধরনের কোনও ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন আফতাব। তখন ধরা না পড়ায় এই ধরনের কাজ করার সাহস বেড়েছে।
এই প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী সন্দীপ ভোহরা বলছেন, “হয় তিনি এক জন দাগী অপরাধী, নয়তো সম্পূর্ণ মানসিক বিকারগ্রস্ত বা সাইকোপ্যাথ। অতীতে ওঁর এমন অপরাধের নজির থাকলেও থাকতে পারে। পুলিশের খতিয়ে দেখা উচিত।” ভোহরার দাবি, সাধারণ মস্তিষ্কের মানুষের এমন ঘৃণ্য অপরাধ করার সম্ভাবনা ১ শতাংশের চেয়েও কম। সেহেতু ধরে নেওয়াই যায় আফতাব আমিন পুনাওয়ালা বিকৃত মস্তিষ্কের। তবে যদি সত্যিই বিকৃত মস্তিষ্কের হয়ে থাকেন, তাহলে আশঙ্কা থেকেই যায় আগেও এমন ধরনের খুন হয়ে থাকতে পারে তাঁর হাতে।

Whatsapp
