মুণ্ডু ছাড়াও খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রই বা কোথায়, তা নিয়েও ধন্দে পড়েছে পুলিশ।
শ্রদ্ধার কাটা মাথা ফেলার আগে অভাবনীয় কীর্তি আফতাবের! দেহের বাকি টুকরো কোথায় কোথায় ফেলেছিলেন?
Delhi Murder Case: মাঝেমধ্যেই জলের কল ও শাওয়ার চালিয়ে রক্ত ধুয়ে নিয়েছিলেন আফতাব। এই কুকীর্তি ঢাকতে যে কী পরিমাণ জলের ব্যবহার করা হয়েছে তা জলের বিল দেখলেই বোঝা যাচ্ছে!
আফতাব আমিন পুনাওয়ালা এবং শ্রদ্ধা ওয়ালকার। কয়েক মাস আগে এঁদের পরিচয় প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে থাকলেও বর্তমানে আফতাব খুনি এবং শ্রদ্ধা তাঁর ভিক্টিম। শ্রদ্ধা খুনের মামলা শিহরণ ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশে। একটা মানুষের মধ্যে কতটা বীভৎসতা, কতটা নারকীয়তা লুকিয়ে থাকতে পারে তা বোঝা যায় এই ঘটনাটি থেকেই। পুলিশি জেরায় প্রেমিক আফতাব জানিয়েছে, গত ১৮ মে লিভ ইন পার্টনার শ্রদ্ধাকে খুন করে সে। গত সেপ্টেম্বর মাসে শ্রদ্ধার এক বন্ধু শ্রদ্ধার বাড়িতে জানায় বিগত সাড়ে তিন মাস ধরে তাঁর বন্ধু কার্যত নিখোঁজ। সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইল ফোন- কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না শ্রদ্ধার সঙ্গে। এই কথা শুনে সন্দেহ হয় পরিবারের। শ্রদ্ধার বাবা মদন ওয়ালকার অভিযোগ জানান মুম্বই পুলিশে। যেহেতু শ্রদ্ধা মুম্বই ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন, তাই মুম্বই পুলিশের তরফে পরামর্শ দেওয়া হয় দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার। দিল্লির মেহরৌলি থানায় শ্রদ্ধার নিখোঁজ হওয়ার এফআইআর দায়ের করেন শ্রদ্ধার বাবা। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তও শুরু করে পুলিশ। তদন্তের ভিত্তিতে গত ১৩ নভেম্বর রাতে আফতাবকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। প্রথমে কিছু স্বীকার করতে না চাইলেও, জেরার মুখে পরে বাধ্য হয়ে সব স্বীকার করে আফতাব।
জেরায় আফতাব জানিয়েছে, বিয়ে নিয়ে প্রায়ই চাপ দিতেন শ্রদ্ধা। এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে বহুবার বচসাও হয়েছে। ১৮ মে আর মাথা ঠান্ডা রাখতে না পেরে শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে আফতাব। প্রথমে এক সাধারণ খুনের ঘটনা মনে হলেও এরপরেই শুরু হয় নারকীয়তার নিদর্শন। পুলিশ যখন জানতে চায় শ্রদ্ধার দেহ কোথায় তখন আফতাব যা জানান তাতে কার্যত পিলে চমকে যায় খোদ পুলিশের। আফতাব জানিয়েছেন, শ্রদ্ধার দেহের ৩৫ টুকরো করে মেহরৌলির জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। খুনের পর ৩০০ লিটারের একটি নতুন ফ্রিজ কিনে এনেছিলেন আফতাব। পচন আটকাতে শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলিকে প্যাকেটে ভালো করে মুড়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রিজে। প্রতিদিন রাতে একটি করে টুকরো ফ্রিজ থেকে বের করে মেহরৌলির জঙ্গলে ফেলে আসতেন। টানা ১৮ দিন ধরে এমনটাই করেন আফতাব। আফতাবের বন্ধুরা জানিয়েছেন, আফতাব-শ্রদ্ধার ছতরপুরের অ্যাপার্টমেন্টে গেলে সবসময়ই উগ্র ধূপকাঠি এবং সুগন্ধির ঘ্রাণ আসত। এভাবেই বোধহয় নিজের কৃতকর্মকে ঢাকা দিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন আফতাব।
আরও পড়ুন- নৃশংস খুনের আসল কারণ কী, জানতে নার্কো টেস্ট আফতাবের! ঠিক কীভাবে হয় এই পরীক্ষা
পুলিশ সূত্রে খবর, আফতাব পুনাওয়ালা জানিয়েছেন শ্রদ্ধার দেহের ৩৫ টুকরো করতে তাঁর ১০ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল। খুনের পরের দিন অর্থাৎ ১৯ মে আফতাব শ্রদ্ধার দেহ বাথরুমে নিয়ে যান। সেখানেই একে একে দেহের টুকরো করতে শুরু করেন। মাঝেমধ্যেই জলের কল ও শাওয়ার চালিয়ে রক্ত ধুয়ে নিয়েছিলেন আফতাব। এই কুকীর্তি ঢাকতে যে কী পরিমাণ জলের ব্যবহার করা হয়েছে তা জলের বিল দেখলেই বোঝা যাচ্ছে! পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মুম্বইয়ের বহুজাতিক সংস্থার কল সেন্টারে চাকরি করার আগে একটি রেস্তোরাঁয় শেফের কাজ করতেন আফতাব। ফলত ছুরি নিয়ে কাটা-ছেঁড়া করার ক্ষমতা তাঁর নখদর্পণে। পুলিশকে আফতাব জানিয়েছেন, শ্রদ্ধার দেহ কাটার মাঝখানে যখনই তাঁর ক্লান্ত লেগেছিল, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিয়ার আর সিগারেট খাচ্ছিলেন তিনি। নিজের মনকে শান্ত করার জন্য নেটফ্লিক্সও দেখেছিলেন। এমনকী রাতে অনলাইনে খাবারও অর্ডার করেছিলেন আফতাব। কাজ শেষ হবার পর ঘরে যাতে রক্তের দাগ না থাকে, তার জন্য গরম জল, জীবাণুনাশক ও ব্লিচিং দিয়ে ঘর মোছেন তিনি। পুলিশের জেরায় আফতাব জানিয়েছেন, জনপ্রিয় আমেরিকান ক্রাইম সিরিজ ডেক্সটার দেখে ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েই এইভাবে প্রেমিকার দেহ লোপাট করেছেন। তবে এখন পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন শ্রদ্ধার দেহাংশগুলি কোথায়?
আফতাব জানিয়েছেন, শ্রদ্ধার দেহাংশগুলি যাতে জন্তু-জানোয়ার খেয়ে নেয় সেই উদ্দেশ্যেই সেগুলি মেহরৌলির জঙ্গলে ফেলে এসেছিলেন। বলাইবাহুল্য, প্রায় ছয় মাস পর সেই দেহাংশ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে গত বুধবার, আফতাবকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই ঘটনা পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা করেছে দিল্লি পুলিশ। সেখানে আফতাব দেখান, জঙ্গলের কোন কোন অংশে শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলি ফেলেছিলেন। সূত্রের খবর, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর দেহের প্রায় ১৩টি অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অনুমান করা হচ্ছে, উদ্ধার করা দেহাংশগুলি মানুষেরই। দেহাংশগুলি মানুষের কিনা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে খবর। উদ্ধার হওয়া দেহাংশ মানুষের প্রমাণিত হলে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। শ্রদ্ধার বাবা মদন ওয়ালকারের ডিএনএর সঙ্গে সেই হাড়ের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। আফতাবের বাড়ি থেকেও সাত-আটটি হাড়ের টুকরো ও রক্তের দাগ মিলেছে বলেই জানানো হয়েছে দিল্লি পুলিশের তরফে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় এক ফুট দৈর্ঘের একটি করাত দিয়ে শ্রদ্ধার দেহ টুকরো করে ধৃত আফতাব। ফ্রিজে রাখা যাবে এমন মাপ করেই প্রতিটি টুকরো করা হয়। শ্রদ্ধার অন্ত্রটিকে কার্যত কিমা করে ফ্রিজে রাখে সে।
আরও পড়ুন- কাটা মুণ্ডুকে মেকআপ, একই ঘরে যৌনতা! আফতাবের মানসিক বিকৃতির আড়ালে লুকিয়ে যে সত্য
সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত শ্রদ্ধার মোট ১৮-২০টি দেহাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। বাকি গুলির খোঁজ এখনও চলেছে। পুলিশের আশঙ্কা, শ্রদ্ধার বেশ কিছু দেহের টুকরো জন্তু-জানোয়ার খেয়ে ফেলেছে। তবে মানুষের যে সবচেয়ে বড় অঙ্গ অর্থাৎ মাথা, তার খোঁজ এখনও মেলেনি। পুলিশকে আফতাব জানিয়েছেন, প্রতিদিন রাতে শ্রদ্ধার কাটা মুণ্ডু ফ্রিজ থেকে বার করে তার সঙ্গে কথা বলতেন আফতাব। মেকআপও করাতেন, এমনকী রেগে গেলে থাপ্পড়ও মারতেন। তবে সেই মাথা আফতাব কোথায় রেখেছেন সেই তথ্য এখনও বের করতে পারেনি দিল্লি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আফতাব দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছেন, শ্রদ্ধার মুণ্ডু ফেলার আগে, তিনি তা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। যাতে মুণ্ডু খুঁজে পেলেও, কার মুণ্ডু তা বোঝা না যায়। মুণ্ডু ছাড়াও খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রই বা কোথায়, তা নিয়েও ধন্দে পড়েছে পুলিশ। শ্রদ্ধার ফোনও খোঁজার চেষ্টা করছে তারা। এই কেসের জট কিছুটা খুললেও এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তরই অজানা, এমনটাই মত দিল্লি পুলিশ আধিকারিকদের।