মূল্যবৃদ্ধির কোপে দুর্গাও! এই বাজারে কতদিন টিকবে সাবেকি ডাকের সাজ?
Durgapuja 2022: পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে কলকাতায় বনেদি বাড়িগুলিতে বাড়তে থাকে দুর্গোপুজোর চল। পুজোর সঙ্গে যোগ ছিল ইউরোপের। প্রতিমার সাজ আসতো জার্মানি থেকে।
সমস্ত আধুনিকতার মধ্যেও প্রতিমার সনাতনী ডাকের সাজের কদর বরাবরই আলাদা ছিল। প্রতিবছরই রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় দেবী দুর্গার ডাকের গহনা। এই ডাকের সাজের সঙ্গে বরাবরই সুনাম জড়িয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের ঝুরিয়া গ্রামের। তবে, দিন বদলেছে। পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলেও দ্রব্যমূল্যের বাজারে ঝিমিয়ে রয়েছে ডাকের সাজের শিল্প। জিনিসপত্রের চরম দামের মাঝে প্রবল অনটনে ডাকের সাজের শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। অভাবের মধ্যেই কোনও রকমে দুর্গাপুজোর প্রতিমার সাজ তৈরির কাজ চলছে। দুর্গা প্রতিমার সাজে ব্যাপক বদল এসেছে বিগত বেশ কিছু কাল ধরে। মাটির কারুকাজ বা একেবারেই অন্যরূপে শিল্পীর দেবীকে নির্মাণ তাক লাগিয়েছে মানুষকে। তবে সাবেকি সাজের প্রতিমার গড়ন ও সাজ আজও অনন্য। গায়ে শোলার গয়না, মাথায় সোনার মুকুট- এই শোলার সাজ তৈরি করেন যে মালাকাররা, কেমন রয়েছেন তাঁরা?
পুরাণ কথা অনুযায়ী, হিমালয় কন্যা পার্বতী সঙ্গে দেবাদিদেব মহাদেবের বিয়ে চূড়ান্ত। বিয়েতে সাদা মুকুট পরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন মহাদেব। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার উপর সেই মুকুট তৈরির ভার পড়ল। মহাদেবের ইচ্ছায় তৈরি হল এক ধরনের নরম উদ্ভিদ। পৃথিবীতে জন্ম নিল শোলা গাছ। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিল অন্য জায়গায়। শোলার মত নরম হালকা সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত নন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। সেই সমস্যার কথা তিনি জানালেন দেবাদিদেবকে। তখন মহাদেবের ইচ্ছায় নাকি জলাশয়ে এক সুকুমার যুবকের আবির্ভাব ঘটে। মালাকার হিসেবে পরিচিতি পান সেই যুবক। তিনিই নির্মাণ করেন মহাদেবের শোলার মুকুট।
আরও পড়ুন- কলকাতার দুর্গাপুজোয় বিশেষ আকর্ষণ অষ্টধাতুর প্রতিমা! দৈর্ঘ্য থেকে ওজন, সবেতেই চমক
তাঁর থেকেই বিস্তার হয় মালাকার সম্প্রদায়ের। তবে প্রতিমার ‘ডাকের সাজ’ কথাটার পেছেনে রয়েছে এক ইতিহাস। পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে কলকাতায় বনেদি বাড়িগুলিতে বাড়তে থাকে দুর্গোপুজোর চল। পুজোর সঙ্গে যোগ ছিল ইউরোপের। প্রতিমার সাজ আসতো জার্মানি থেকে। ডাক মারফত সেই সাজসজ্জা আসত বলেই ডাকা হয় ‘ডাকের সাজ’ নামে।
আজও মালাকার পরিবারগুলিই দেবীর এই গহনা তৈরি করে আসছেন। দু’বছর মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে এবার আবার ছন্দে ফিরছে দুর্গাপুজো এবং পুজো এবার বিশ্বজনীন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ২ নং ব্লকের ঝুরিয়া গ্রামের জয়দেব গিরি একজন শোলা শিল্পী। সারাবছরই ডাকের শিল্পের সঙ্গেই যুক্ত থাকেন তিনি, ভালোওবাসেন এই কাজ। কিন্তু লাভের ঘর শূন্যই থাকে। রকেট গতিতে বাড়ছে আঠা, চুমকি, শোলার দাম। কীভাবে এই ব্যবসা ধরে রাখবেন বুঝে উঠতে পারছেন না কিছুতেই। বাড়ির বাকিরাও কাজে সাহায্যে এগিয়ে এলেও, পকেট ভরছে না মোটে।
আরও পড়ুন- এবার পুজোয় সাবেকিয়ানা আর থিমের মেলবন্ধন দেখতে আসতেই হবে হাতিবাগানের এই মণ্ডপগুলিতে
জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেই অনুপাতে লাভ হচ্ছে না। ফলে, দুর্গার সাজে নিমগ্ন থেকেও মলিন হয়েছে শিল্পীদের হাসি। দেবীর অলঙ্কার তৈরির গর্ব পেট ভরাতে পারছে না। সংসার চালাতে নাজেহাল শিল্পীরা। তাঁদের আবেদন, সরকার মুখ তুলে তাকাক। সরকারি সাহায্যে যদি না বাঁচানো যায়, অচিরেই প্রায় লুপ্ত হয়ে যেতে বসবে এই শিল্প।