বামেদের 'যম' হয়ে এসেছিলেন! কিষেণজির শেষ দিনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল টানটান

Kishenji: যাঁকে ঘিরে হিমশিম খেতে হয়েছিল একাধিক রাজ্যের দুঁদে গোয়েন্দাদের, সেই কিষেণজির মৃত্যু হয়েছিল এই আজকের দিনেই।

মাওবাদী। মাওবাদ এবং বঙ্গের লাল মাটির দেশের সন্ত্রাস! বাম আমলের শেষ পর্বে লালগড় থেকে শুরু করে বেলপাহাড়ি। একের পর এলাকা রক্তাক্ত হয়েছিল যে কারণে, একটার পর একটা খুনের ঘটনা ঘটছিল যে কারণে, খানিকটা বিতর্কের এক অন্ধকার জগতের প্রার্থনায় মশগুল হচ্ছিল যে জঙ্গলমহল! যেখানে রাজনীতি, বঞ্চনা আর তার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসের বাতাবরণ সাড়া ফেলেছিল বারবার। সেই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে, ওই অভিনব পরিস্থিতির মূল কারণ হয়ে উঠেছিল মাওবাদ। আদিবাসী, প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ে শান দেওয়ার নামে এক সন্ত্রাসের দিননামচা, নকশাল আন্দোলনের ইতিহাসকে খানিকটা উসকে দিয়ে ফের সামনে আসছিলেন মাওবাদীরা। আর সেই অবস্থার সৃষ্টিতে একটা সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন যিনি। যাঁকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছিল এক ভিন্ন ত্রাসের। যাঁকে ঘিরে হিমশিম খেতে হয়েছিল একাধিক রাজ্যের দুঁদে গোয়েন্দাদের, সেই কিষেণজির মৃত্যু হয়েছিল এই আজকের দিনেই।

২৪ নভেম্বর, ২০১১ সালে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু যাঁকে খুঁজে পেতে বেগ হতে হচ্ছিল পুলিশকে। চরকির মতো ঘুরছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই কিষেণজিকে কীভাবে মারল পুলিশ? কেমন করে বাহিনীর ফাঁদে হঠাৎ পা দিলেন এই মাওবাদী নেতা? কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যু হলো তাঁর?

আরও পড়ুন: বহু সরকারের ঘুম উড়িয়ে এখন নিজেই চিরঘুমে, কে এই মাওবাদী নেতা সন্দীপ

২০ মে, ২০১১
৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান। নির্বাচনে জিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। যিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দার্জিলিং এবং জঙ্গলমহলের শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ব্রতী হয় নতুন সরকার। এই মোতাবেক মাওবাদীদের অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে বলে মমতার সরকার। একাধিক প্রস্তাব, প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু এখানেও বাধে গোল। ওই বছরই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ ফের জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের হাতে খুন হন তিনজন পরিচিত নেতা। এর মধ্যে দু'জন তৃণমূলের। আর একজন ঝাড়খণ্ডি নেতা। বাবু বোস নামের ওই নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল শাসক দল তৃণমূলের। এরপরেই ফের বিগড়ে যায় পরিস্থিতি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। কয়েকজন মাওবাদী নেতা, সদস্যের আত্মসমর্পণের পরেও বিরাট নেতারা সরকারের ডাকে ফেরেননি। বরং নতুন ইস্যুতে আরও সুর কঠিন করেছেন মাও-নেতারা। ফের যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন কিষেণজি।

এই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েই ধর্মসংকটে পড়ে রাজ্য পুলিশ। অলআউট আক্রমণ না ধীরে চলো নীতির সম্মুখীন হতে হবে, এই প্রশ্নেই উত্তাল হয় প্রশাসন।

১৯ নভেম্বর, ২০১১
একাধিক কথকতা আর পরিকল্পনার মধ্যেই এই দিন থেকেই শুরু হয় কিষেণজি নিধনপর্ব। কিন্তু কীভাবে! একাধিক রাজ্যের পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীও হিমশিম খেয়েছে বারবার। হারের নাগালে পেয়েও ফস্কে গিয়েছেন কিষেণজি। ঠিক সেই অবস্থায় কেন শুরু হলো এই কাজ?

ঠিক এমত অবস্থায় এদিন হঠাৎ ফোন পান, ঝাড়গ্রামের ১৮৪ নম্বর সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নের কমান্ড্যান্ট রবীন্দ্র ভগত। সূত্র মারফতে খবর আসে, ১০-১২ জনের একটি দল নিয়ে গ্রামে ঢুকেছেন 'মোস্ট ওয়ান্টেড' কিষেণজি। চমকে উঠলেন রবীন্দ্র। তড়িঘড়ি তৎপর হলেন, একাধিক পরিকল্পনা করতে শুরু করলেন তখন থেকেই। কিন্তু এই ঘটনা জানার পরেই একাধিক গ্রামে তল্লাশির পরিকল্পনা শুরু করলেন রবীন্দ্ররা। চলছে গ্রাম ঘিরে ফেলে 'কুম্বিং' অপারেশনের ছক। এবার ধরতেই হবে কিষেণজিকে!

২০ নভেম্বর, ২০১১
'দ্য বেঙ্গল স্টোরি'-র 'কিষেণজি মৃত্যু রহস্য' নামক একটি সিরিজে সাংবাদিক বিতনু চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ঠিক এই অবস্থায় ওই খবর পেয়েই রবীন্দ্র ভগতের দফতরে পৌঁছন পশ্চিম মেদিনীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী। ঠিক সেই সময়ে ছুটিতে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার। দায়িত্বে ওই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। প্রবীণ এবং রবীন্দ্র শুরু করেন গোপন বৈঠক। সিআরপিএফ-এর কমান্ড্যান্ট জানান, জামবনি-বিনপুরের সীমান্তে এক মহিলা-সহ দেখা গিয়েছে কিষেণজিকে। তাঁদের ধরতে প্রায় ৮ কোম্পানি বাহিনীও প্রস্তুত করে ফেলেছেন রবীন্দ্র।

একদিকে পুলিশের 'ব্যর্থতা'। অন্যদিকে ২০০৯ সাল থেকে এলাকায় নামা সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নের বিরাট সাফল্য, ততক্ষণে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আইপিএস প্রবীণকে। ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা, এই চিন্তার মধ্যেই এত বড় সাফল্যের জন্য খানিকটা আশ্বস্থও হচ্ছেন তিনি।

ঠিক এই সময়েই তাঁর মনে পড়ল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি কমান্ড্যান্ট রবীন্দ্রকে বললেন, এত বাহিনী দিয়ে বিরাট অভিযানে নামলে ব্যর্থ হতে পারে লক্ষ্য। কারণ, লক্ষণপুরের জঙ্গলে প্রায় একই কারণে ধরা যায়নি ওই মাও-নেতাকে। তিনি পরামর্শ দেন, অল্প বাহিনী দিয়ে কাজ সারতে। সঙ্গে অন্যান্য গ্রামে তল্লাশি চালানোর কথা বললেও কুশবনি গ্রাম ছেড়ে রাখতে বলেন তিনি। কারণ, প্রবীণ জানেন বাহিনীর তাড়া খেয়ে জঙ্গল হয়ে পালানোর পথে কুশবনি গ্রামে আশ্রয় নিতে পারেন কিষেণজি। আর সেখানেই রয়েছে ফাঁদ!

ঠিক এর আগেই শালবনি থেকে সুমন মাহাতো নামের এই মাও-নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যাঁর কাছ থেকে জানা যায়, কিষেণজির গতিবিধি সম্পর্কে। যেখানে এনকাউন্টারে মৃত মাও-নেতা শশধর মাহাতোর স্ত্রী সুচিত্রা মাহাতোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও নিশ্চিত হয় পুলিশ। যে খবর এদিন আসে, সেখানে যে মহিলার কথা বলা হচ্ছে, তিনি যে সুচিত্রা। এই বিষয়ে নিশ্চিত হন পুলিশ সুপার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী।

২১ নভেম্বর, ২০১১
এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় যৌথবাহিনীর অভিযান। একের পর এক গ্রামে চলে তল্লাশি।

২২ নভেম্বর, ২০১১
একইভাবে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। খবর যায় সংবাদমাধ্যমে। একাধিক সাংবাদিক পৌঁছে যান ঝাড়গ্রামে। কিন্তু কোথায় কী! একের পর ব্রেকিং নিউজ তখন উত্তপ্ত করেছে বঙ্গের সংবাদমাধ্যম।

২৩ নভেম্বর, ২০১১
এদিন আরও উত্তেজনা বেড়েছে সকাল থেকেই অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। নিজের দফতরে বসে রয়েছেন প্রভীন ত্রিপাঠি। ঠিক এমন সময়েই সন্ধে নাগাদ হঠাৎ একটি ফোন। প্রায় দেড় বছর আগে আলাপ হওয়া একজনের নম্বর থেকে ফোন পেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। অপর প্রান্তের বিশ্বস্ত সূত্রের দেওয়া খবরে চমকে উঠলেন তিনি। নিমেষেই বদলে গেল পরিস্থিতি। জানা গেল, কুশবনি গ্রামে ঢুকেছেন সুচিত্রা!

'দ্য বেঙ্গল স্টোরি'-তে প্রকাশিত ওই সিরিজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এখবর যিনি দিচ্ছেন, একদা তিনি সিপিআইএম করতেন। মাওবাদীদের ভয়ে দল ছাড়েন। একবার সিপিআইএম করার অপরাধে মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতো তাঁকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন। এই প্রতিশোধ নেওয়ার তাগিদ থেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় ওই সূত্রের। ফোনে এই খবর পেয়েই ওই সূত্রকে নিজের দফতরে ডেকে পাঠান পুলিশ সুপার।

সঙ্গে সঙ্গে হাতে চাঁদ পান প্রবীণকুমার। ওই বিশ্বস্ত সূত্র প্রবীণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, সুচিত্রা গ্রামে ঢুকেই তাঁর সাহায্য চেয়েছেন। গ্রামে না থেকে খানিকটা দূরের জঙ্গলে রয়েছেন তাঁরা। সেখানেই খাবারের বন্দোবস্ত করার ভার পড়েছে তাঁর ওপরেই।

ব্যস! সুযোগ পেলেন ওই দুঁদে পুলিশ কর্তা। সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে ভাবতে শুরু করলেন কী করা উচিত! যোগাযোগ করলেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে।

২৪ নভেম্বর, ২০১১
বিশ্বস্ত সেই সূত্রকে আগেই শিখিয়ে দিয়েছিলেন সবটা। এদিকে সিআরপিএফ থেকে শুরু করে কোবরা বাহিনীর প্রধান, কাউকেই কিছু বলেননি পুলিশ সুপার। তিনি ওই সূত্রকে বলে রেখেছিলেন, সকালে খাবার দিতে যাওয়ার পরে ফিরে খবর দিতে। একটুও দেরি হল না। প্রবীণের নির্দেশ মতো ফের কিষেণজির অবস্থান স্পষ্ট করলেন ওই সূত্র। আরও নিশ্চিত হলেন প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী। কিন্তু এত সহজে অপারেশন করা যাবে না! এবার রিস্ক নিয়ে বসলেন মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। ফোন করলেন মেদিনীপুর রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি বিনীত গোয়েলকে।

সকাল ১১টা
বিনীত গোয়েলকে জানিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন অর্থাৎ রেইকি করতে উদ্যত হলেন প্রবীণ। সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে, অলোক রাজোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে, খানিকটা ঘুরপথে জামবনি ছাড়িয়ে পৌঁছলেন কুশবনির দিকে। বেশ খানিকক্ষণ পর পৌঁছলেন বুড়িশোলের জঙ্গলের কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি খালের কাছে। যে খালটি পেরিয়ে খানিকটা এগোলেই একদিকে বুড়িশোলের জঙ্গল আর একদিকে কুশবনি গ্রাম। সেখানে গিয়ে কালো কাচের সাদা স্করপিও গাড়িতে উঠলেন সেই বিশ্বস্ত সূত্র।

গাড়ির সামনের আসনে নিরাপত্তারক্ষী আর পিছনে অলোক আর প্রবীণ। দুই আইপিএস আধিকারিকের মাঝখানে বসে ওই ব্যক্তি। যাঁর কাজ শুধু ওই এলাকা ইশারায় দেখিয়ে দেওয়া, যা দূর থেকে দেখেই বিদায় নেবেন দুই পুলিশ আধিকারিক।

দুপুর ১.৩০
এবার 'রেইকি' করে ফিরলেন দুই পুলিশ আধিকারিক। শুরু হলো জরুরি বৈঠক। ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি ফোন নাড়িয়ে দিল আবার! ওই বিশ্বস্ত সূত্র জানালেন, কুশবনি গ্রামে প্রবেশ করেছে সিআরপিএফ। তল্লাশি চলছে। ততক্ষনে অলোক রাজোরিয়ার দেওয়া জিপিএস মেশিন আর সুচিত্রা-কিষেণজির দুপুরের খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সেই সূত্র। প্রায় গুছিয়ে নেওয়া পরিকল্পনায় জল! এই তল্লাশির কথা মাওবাদী নেতার কানে গেলেই সর্বনাশ!

প্রবীণকুমার ত্রিপাঠীর ফোন পেয়ে কুশবনি গ্রামে তল্লাশি বন্ধ করালেন রবীন্দ্র ভগত। কিন্তু কেন বন্ধ করতে বললেন প্রবীণ? এই প্রশ্নেই কৌতূহল বাড়ে ওই কমান্ড্যান্টের। যদিও তখনও গোপনে রয়েছে অভিযানের তথ্য।

দুপুর ৩টে
এদিকে খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রাম পৌঁছেছেন বিনীত গোয়েল। বিকেল ৩টের আগেই প্রায় ১৫-২০ জনের দল নিয়ে রওনা হলেন দুই আইপিএস আধিকারিক। রবীন্দ্র ভগতকে বাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করতে বললেন খানিকটা দূরে।

দুপুর ৩.৩০
ওই খালের কালভার্টের কাছে পৌঁছে থামলেন তাঁরা। সেখান থেকে খানিকটা এগিয়ে কুশবনির গ্রামের বিপরীত দিকে মাটির রাস্তা ধরে অনেকটা গিয়ে কিষেণজির বর্তমান আস্তানা!

বিকেল ৪টে
রবীন্দ্র ভগতদের আসতে বলে ওই মাটির রাস্তার দিকে এগোলেন অলোক। সঙ্গে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে, হাতে একে ৪৭ নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করেছে বাহিনী। একদিকে ঘন জঙ্গল, অন্যদিকে সন্ধ্যা নামার আগের মুহূর্ত। বেগ পেতে হচ্ছিল বাহিনীকে। ঠিক এমন সময়েই শুনশান জঙ্গলে হঠাৎ গুলির আওয়াজ। চমকে উঠলেন পুলিশ কর্তা অলোক। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা গুলি চালানোর কথা ভাবলেন না কেউ! অনেকেই বলেন, প্রতিপক্ষের অবস্থান বুঝতে পাল্টা গুলি প্রথমেই চালানো ঠিক নয়। খানিকটা সেই কৌশল নিলেন তাঁরাও।

এবার আর নয়। বাচ্চা ছেলেটির পরিবর্তে গুলি চালাতে শুরু করলেন বহুদিন ধরে পুলিশ-সিআরপিএফের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা কিষেণজি! স্বয়ং ধরা দিলেন তিনি! 

সুচিত্রা আর পরে নাম উদ্ধার হওয়া মঙ্গল মাহাতোর জীবনরক্ষায় এবার তৎপর হলেন নেতা কিষেণজি। সঙ্গে থাকা দু'জনকে পালাতে বলে বাহিনীকে লক্ষ করে অনবরত গুলি চালাতে শুরু করেন মাল্লোজুলা কোটেশ্বার রাও। বহুদিন সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা হওয়া প্রিয় সঙ্গী সুচিত্রা এবং পাহারাদার মঙ্গল অনিচ্ছাসত্ত্বেও পালালেন। পড়ে রইলেন একদা দাপুটে নিঃসঙ্গ সম্রাট।

বিকেল ৪.৩০
বাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হলো শরীর। জঙ্গলের আবছা অন্ধকারে উইঢিবির পিছনে লুটিয়ে পড়লেন কিষেণজি। রক্তাক্ত শরীর আর ক্ষতবিক্ষত মুখে চলল সঠিক টার্গেটের দেহ মিলিয়ে নেওয়ার কাজ। খবর গেল মহাকরণে। শেষ হলো একটা অধ্যায়। মাওবাদ নির্মূল না হলেও শেষ হলেন এক স্তম্ভ। শেষ হলো একটা যুগ। একদা যাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল কথকতা। সেই গল্পের নটেগাছের মৃত্যু হলো বেঘোরে!

বাম আমলে একের পর রক্তাক্ত ইতিহাসের উপজীব্য কিষেণজি মারা গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরেই। প্রশ্ন উঠল বিস্তর। কীভাবে এত সহজেই মারা গেলেন এই মাও-নেতা! একাধিক গুলির মধ্যেও কীভাবে পালিয়ে বাঁচলেন সুচিত্রা! একাধিক প্রশ্নের অবতারণার মধ্যেও সত্যি হলো মৃত্যু। এক অংশের কাছে ত্রাসের নিধন।

অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগরে জন্ম এই মাও-নেতার। পেশায় স্থাপত্যবিদ। শিক্ষিত কিষেণজি অচিরেই ভিড় করেছিলেন কমিউনিস্টদের মাওবাদী দলে। একাধিক অভাব-অভিযোগ আর বঞ্চনা নিরসনের নীতিগত লড়াইয়ে নেমেও সেই কিষেণজি হয়ে উঠলেন জঙ্গলমহলের বিপদের হাতছানি। ঘুম কেড়ে নিলেন পুলিশ-প্রশাসনের। রক্তাক্ত ইতিহাসের মূল উপজীব্য হয়ে উঠলেন তিনি। অবশেষে সেই কিষেণজি-ই সহযোদ্ধাদের বাঁচিয়ে দিয়ে প্রাণ হারালেন শেষে। জঙ্গলের লড়াইয়ের মঞ্চেই রক্তাক্ত হলেন তিনি। শেষ হলো এক আতঙ্কের আবহ। এক ভয়ানক আর বিতর্কের ইতিহাসও। কেন মাওবাদ, কেন লড়াই! কেন কিষেণজিদের উঠে আসা! একাধিক প্রশ্নের বেড়াজালেই হারিয়ে গেলেন তিনি।

More Articles