নেই নির্দিষ্ট চিকিৎসা, অধিকাংশ মহিলাকেই পোহাতে হচ্ছে এই নরক যন্ত্রণা! উপসর্গ কী?

Endometriosis: এখনও অবধি, এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিরোধের কোনও সুনির্দিষ্ট উপায় নেই।

নাম যতটা খটমটো, উপসর্গ ততই ভয়াবহ! অথচ মহিলাদের মধ্যে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে এই বিশেষ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা। জরায়ুর নানা সমস্যায় মহিলারা ভোগেন, তারই মধ্যে বেশ জটিল রোগ হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিস। জরায়ুর ভেতরের আস্তরণটি এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর মতো টিস্যু দিয়ে তৈরি। এই বিশেষ রোগে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু জরায়ুর বাইরের অঞ্চলেও বাড়তে থাকে। এই টিস্যু পিরিয়ডের সময় সাধারণ জরায়ু টিস্যু হিসাবে কাজ করে। এই টিস্যুগুলিই ভেঙে যায় এবং ঋতুচক্রের শেষে রক্তপাত ঘটায়। কিন্তু এই রক্তের কোথাও যাওয়ার নেই। যার ফলে আশেপাশের অঞ্চলগুলি ফুলে যেতে পারে। এই রোগটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে যার ফলে পেলভিস এবং শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষত তৈরি হতে পারে, জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মহিলা, যাদের বয়স প্রজননকালের সীমার মধ্যে রয়েছে তারা এই রোগে আক্রান্ত। কেন এই রোগ জটিল?এই রোগে যে প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয় তাকে অনেকেই পিরিয়ডস চলাকালীন ব্যথার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন, যার ফলে চিকিৎসা শুরু হতে বড্ড দেরি হয়ে যায়।

বেশিরভাগ মহিলাই জীবনের প্রথম পিরিয়ডের সময় থেকে শুরু করে মেনোপজ অবধি এন্ডোমেট্রিওসিসের কবলে পড়ে জেরবার হয়ে যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এন্ডোমেট্রিওসিসের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।

আরও পড়ুন- মাসের অর্ধেক দিনই মেয়েদের ঠাঁই গোয়ালঘরে! এ কেমন অমানবিক প্রথা ভারত-নেপালে

এন্ডোমেট্রিওসিসের প্রকারভেদ

এন্ডোমেট্রিওসিস শ্রোণি বা পেটের কোন অংশকে প্রভাবিত করে তার উপর ভিত্তি করে একে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

সুপারফিসিয়াল পেরিটোনিয়াল এন্ডোমেট্রিওসিস

পেরিটোনিয়াম হচ্ছে একটি পাতলা ঝিল্লি যা পেট এবং শ্রোণি অঞ্চলে থাকে। এক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু পেরিটোনিয়ামের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি সবচেয়ে কম ক্ষতিকারক।

এন্ডোমেট্রিওমাস

এগুলি হচ্ছে ঘন, তরল-ভরা সিস্ট। এদেরকে চকোলেট সিস্টও বলা হয়। এগুলি আকারে পরিবর্তিত হয় এবং পেলভিস বা পেটের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে তবে ডিম্বাশয়েই সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়।

ডিপলি ইনফিলট্রেটিং এন্ডোমেট্রিওসিস

এই প্রকার রোগে, এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু শ্রোণি গহ্বরের ভিতরে বা বাইরে অঙ্গগুলিতে আক্রমণ করে। ডিম্বাশয়, মলদ্বার, মূত্রাশয় এবং অন্ত্রকে হামলা করে টিস্যু। এটি বেশ বিরল, তবে কখনও কখনও এই ক্ষতযুক্ত টিস্যু বিভিন্ন অঙ্গগুলিকে এমন জড়িয়ে ফেলে যে সেগুলি এক জায়গায় আটকে যায়। এই অবস্থাকে হিমায়িত শ্রোণি বলা হয়। কিন্তু এটি এন্ডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত ১%-৫% মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে।

অ্যাবডোমিনাল ওয়াল এন্ডোমেট্রিওসিস

কিছু ক্ষেত্রে, এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু পেটের দেওয়ালে বৃদ্ধি পেতে পারে।

এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ

এন্ডোমেট্রিওসিস মানেই তীব্র ব্যথা, ক্লান্তি, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং বন্ধ্যাত্ব। এই রোগের অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে বেদনাদায়ক পিরিয়ডস, পেলভিক অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, যৌন মিলনের সময় বা পরে ব্যথা, মলত্যাগের সময় ব্যথা, প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং পেট ফোলা ও বমি বমি ভাব।

মূল উপসর্গ

পিরিয়ডের সময় পিঠে ব্যথা

তীব্র পিরিয়ডস ক্র্যাম্প

পিরিয়ডসেরর সময় অস্বাভাবিক বা ভারী রক্তপাত

মল বা প্রস্রাবে রক্ত

ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

গর্ভধারণ করতে সমস্যা

আরও পড়ুন- ‘মাসের সেই বিশেষ দিন’ আর নয়! জানেন, টিভিতে প্রথম কবে ব্যবহৃত হয় ‘পিরিয়ড’ শব্দটি?

এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিত্সা

এখনও অবধি, এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিরোধের কোনও সুনির্দিষ্ট উপায় নেই। সচেতনতা এবং প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় এবং ব্যবস্থা নেওয়া এই রোগের স্বাভাবিক অগ্রগতিকে কমাতে বা থামাতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলিকেও ধীরে ধীরে কমানো যেতে পারে।

গর্ভনিরোধক স্টেরয়েড, নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ এবং ব্যথানাশক ওষুধই এই রোগের মূল চিকিৎসা।

অস্ত্রোপচার করে এন্ডোমেট্রিওসিসের ক্ষত, আঠালো এবং ক্ষতযুক্ত টিস্যু সরিয়ে ফেলা যায়। তবে, ব্যথা কমাতে অস্ত্রোপচারের সাফল্য এবং গর্ভাবস্থার হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা সবটাই রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে।

More Articles