সৌরভের বদলে বিসিসিআই-শীর্ষে রজার বিনি, নেপথ্যে কোন কারণ
Roger Binny: সৌরভকে সরিয়ে শুধুমাত্র রজার বিনিকেই চেয়ারম্যান করতে চাইল বিসিসিআই?
বিনি- মানে স্টুয়ার্ট বিনি তো? না স্টুয়ার্ট নয়, রজার বিনি, আচ্ছা, স্টুয়ার্টের বাবা। এখনকার সময় যে-কোনও ক্রিকেট সমর্থকের কাছে রজার বিনির পরিচয় হলো ভারতীয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট বিনির বাবা হিসেবে। কেউ কেউ তাকে ময়ন্তি লঙ্গারের শ্বশুর হিসেবেও পরিচয় দিতে পারেন। কিন্তু, এখন আর বিষয়টা সেই জায়গায় থেমে নেই। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর দীর্ঘদিন লাইমলাইটের বাইরে থাকলেও এবার রীতিমতো রাজকীয় ঢঙে কামব্যাক করছেন রজার। আর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বসতে চলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে। সৌরভের ছেড়ে যাওয়া জুতোতেই এবার পা গলাবেন রজার বিনি। সৌরভ-যুগের পরবর্তীতে এবার শুরু হবে রজার বিনির যুগ।
১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সেরা নায়কদের মধ্যে একজন ছিলেন রজার বিনি। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের দৌড়ে বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রজার বিনি। ৮ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি। তিনি ভারতের হয়ে খেলেছেন ২৭টি টেস্ট এবং ৭২টি ওয়ানডে ম্যাচ। তিনি শুধু যে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন তাই নয়, ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের দলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
রজার বিনি প্রথম নজর কেড়েছিলেন ১৯৭৭-'৭৮ সালে। কর্নাটকের হয়ে কেরলের বিপক্ষে ২১১ রানের একটি ইনিংস খেলে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই ম্যাচে তিনি যে শুধু ২১১ রানের ইনিংস খেলেছেন তাই নয়, সঞ্জয় দেশাইয়ের সঙ্গে ৪৫১ রানের একটি রেকর্ড ব্রেকিং ওপেনিং পার্টনারশিপ করেছিলেন তিনি। তবে তাঁর দেশের হয়ে টেস্টে অভিষেকটা খুব একটা ভালো হয়নি। ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক করেন তিনি। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৫ রান করলেও, বল হাতে উইকেটের ঝুলি ছিল শূন্য।
আরও পড়ুন: জীবনে একটিও সেঞ্চুরি নেই! নতুন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট রজার বিনিকে ঘিরে নানা বিতর্ক
দুর্দান্ত একজন বোলার হওয়ার পাশাপাশি একজন বেশ আগ্রাসী ব্যাটসম্যানও ছিলেন রজার বিনি। তবে জাতীয় দলে তিনি তাঁর বোলিং করার সামর্থ্যর কারণেই পেয়েছিলেন সুযোগ। ভারতীয় দলের হয়ে বোলিং ওপেন করার দায়িত্ব থাকত তাঁর। নতুন বল দিয়ে দুই দিকে সুইং করানোর বিশেষ ক্ষমতা ছিল রজার বিনি-র হাতে। আর এই দক্ষতার কারণেই মূলত জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় খেলতে পেরেছেন তিনি। ভারতের সুবিখ্যাত স্পিন বোলিং আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন রজার বিনি। কেরিয়ারের তৃতীয় টেস্টে মুম্বইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে মাজিদ খান, জাহির আব্বাস এবং জাভেদ মিয়াঁদাদের উইকেট তুলে নিয়ে বিপক্ষের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন রজার বিনি। রজারের এই দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারনেই ভারত ১৩১ রানে জয়লাভ করতে পেরেছিল।
১৯৮৩ সালে আমেদাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স এবং ভয়ংকর ভিভিয়ান রিচার্ডসকে সিঙ্গেল ডিজিটে আউট করে দিয়ে নিজের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন রজার বিনি। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে মাইকেল হোল্ডিংয়ের দুর্দান্ত বোলিং-র কারণে খুব সহজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ জিতে গেলেও, ওই টেস্টে নিজের একটা আলাদা ছাপ রেখে গিয়েছিলেন রজার বিনি। ১৯৮৬ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বেশ দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন রজার বিনি। টেস্ট ম্যাচে মাত্র ৫৮ রান দিয়ে ইংল্যান্ডের সাত-সাতটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন রজার বিনি। তার এই অসাধারণ বোলিং-এর কারণেই সহজেই ম্যাচ জিতে যায় ভারত। সঙ্গেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজও পকেটে পোরে টিম ইন্ডিয়া।
রজার বিনি তাঁর কেরিয়ারের সেরা বোলিং করেছেন কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে প্রথম স্পেলে ৯ রানে তুলেছিলেন ৪টি উইকেট। ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি যথেষ্ট ভালো। ১৯৮৩ সালের নিজের ঘরের মাঠ বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। মদন লালের সঙ্গে তিনি ১৫৫ রানের জুটি তৈরি করেছিলেন এই ইনিংসে। এই ইনিংসের ওপর ভর করেই ভারত ৬ উইকেটে ৮৫ রান থেকে ২৭৫ রান করতে সমর্থ হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে রজার বিনির অভিষেক ঘটেছিল বেঙ্গালুরুতে। আর সেই মাঠেই তিনি নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ করেছিলেন। তার কেরিয়ারের সেরা সময় ছিল ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৮৩ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন রজার বিনি।
তবে প্রচারের আলোয় না থাকলেও, ক্রিকেট-প্রশাসক হিসেবেও তিনি যথেষ্ট সফল। জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবে তিনি বহুদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। একটা দীর্ঘ সময় ধরে কর্নাটক কিন্তু ভারতের সবথেকে ভালো ক্রিকেট টিম হয়ে রয়েছে। রঞ্জি ট্রফি নিয়ে আলোচনা হলে, রজার বিনি-র প্রসঙ্গ উঠবেই। তার আমলেই কর্নাটক ক্রিকেট নতুন নতুন সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছে। তবুও, খেলোয়াড়ি গরিমার বিচারে রজার বিনি এখনও কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের থেকে অনেক পিছিয়ে। পাশাপাশি, যদি সৌরভকে সরাতেই হতো, তাহলে শুধুমাত্র রজার বিনি কেন, এমন অনেক মুখ ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে রয়েছেন যাঁরা রজার বিনির থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তাহলে কেন শুধুমাত্র রজার বিনিকেই চেয়ারম্যান করতে চাইল বিসিসিআই?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, রজার বিনি ছাড়া এই দৌড়ে কে কে শামিল ছিলেন। প্রথমত, সৌরভ বোর্ড থেকে সরে গেলে বোর্ড প্রশাসক হওয়ার দৌড়ে সবার আগে নাম ওঠার কথা অমিত শাহ-পুত্র জয় শাহের। ক্ষমতাশালী হওয়ার পাশাপাশি তিনি সৌরভের আমল থেকেই বোর্ডের সচিবও ছিলেন। তাহলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ কি?
জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা খবর রাখেন, তাঁরা বলছেন, জয় এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, কারণ নরেন্দ্র মোদি নিজে চাননি। এর আগেই তিনি এই মর্মে একটি সংকেত দিয়ে রেখেছিলেন। কত স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ভাষণ দেওয়ার সময় পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতা করে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সভা থেকে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, "সির্ফ রাজনীতি হি নহি, দেশ কে কঁয়ি সারে সংস্থাঁও মে ভি পরিবারবাদ কি ছায়া দিখ রাহা হে।" তখন জয় শাহ প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বললেও, ধারে-ভারে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সরকার তো বটেই, বিভিন্ন সংস্থা থেকেও তিনি পরিবারতন্ত্র তুলে দিতে চাইছেন। আর এই কারণেই মূলত অমিত-পুত্র জয়ের বোর্ড সভাপতি হবার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল।
দ্বিতীয়ত, এই তালিকায় রাখা যেত ব্রিজেশ প্যাটেলকেও। ২০১৯ সালে যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ড সভাপতি হয়েছিলেন, সেই সময় এই বোর্ড সভাপতি হওয়ার দৌড়ে সৌরভের থেকেও এগিয়েছিলেন। তাহলে তাকে কেন সুযোগ দেওয়া হলো না? এর কারণ অবশ্য তাঁর বয়স। আর কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বয়স হবে ৭০ বছর। এত বেশি বয়সে তিনি ক্রিকেট থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাই তাঁকে আর নেওয়া যায়নি।
অতঃপর, কেন রজার বিনি? প্রথমত, তিনি ভারতের বিশ্বকাপ-জয়ী দলের সদস্য ছিলেন এবং তাঁর ভাবমূর্তি যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। তিনি প্রচারের আলোয় কখনওই থাকতে চান না। সবথেকে বড় কথা, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সুবিধা। সৌরভকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথম থেকেই নানা সমস্যায় পড়েছিলেন বোর্ড কর্তারা। একই সঙ্গে যদি রজার বিনিকে বোর্ডের শীর্ষে বসানো যায় তাহলে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে একটা নির্দিষ্ট বার্তা দেওয়া যাবে যে, ফুটবল এবং হকির মতো এবার ক্রিকেটেও প্রাক্তন খেলোয়াড়ের হাতেই গেল বোর্ডের দায়িত্ব। আরও একধাপ এগিয়ে বলতে গেলে, প্রাক্তন অধিনায়কের কাছ থেকে আরেক প্রাক্তন পেস বোলিং অধিনায়কের কাছে গেল বোর্ডের দায়িত্ব।
পাশাপাশি, প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব সামলালেও, এত বড় জায়গায় কখনও প্রশাসনের দায়িত্ব সামলাননি রজার বিনি। তিনি কখনওই জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন না। সবসময় তাঁকে দেখা গিয়েছে একজন সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে। তাই রজার বিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার ওপর বোর্ডের প্রভাব খাটানো খুব সহজ। তিনি কখনওই জাতীয় ক্রিকেটের বর্ণময় চরিত্র হয়ে উঠতে পারেননি। সম্ভবত তিনি কখনও চানওনি। তিনি নিজের শহর বেঙ্গালুরু ছেড়েও খুব একটা বেরতে পছন্দ করেন না। তাই সকলকে বাদ দিয়ে রজার বিনিকে সামনে নিয়ে আসার বিষয়টা অনেকেরই সহজপাচ্য হচ্ছে না।
কিছু মহল থেকে মনে করা হচ্ছে, সৌরভকে মূলত বোর্ড সভাপতি করা হয়েছিল একটি বিশেষ মূল্য দেওয়ার বিনিময়ে। আর ওইসব মহলের দাবি, এই মূল্য ছিল মূলত বিজেপিতে যোগদান। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। এই কারণেই লোকসভা নির্বাচনের ঠিক পরেই ২০১৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি করা হয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এরপর থেকেই নানাভাবে বিজেপি তাকে নিজের দলে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। কখনও জয় শাহ প্রস্তাব দিয়েছেন, আবার কখনও অমিত শাহ নিজেই খেতে গিয়েছেন তাঁর বাড়িতে। সৌরভের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ও একবার মন্তব্য করেছিলেন, সৌরভ রাজনীতিতে এলে তিনি হয়তো ভালোই করবেন। সেই সময় থেকেই মনে হয়েছিল, বিজেপির সঙ্গী হবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একটা সময় তো, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার গুঞ্জনও উঠেছিল সৌরভের ব্যাপারে। কিন্তু, সৌরভ কোনও ভাবেই রাজনীতিতে যোগদান করেননি। তাই তাঁকে আর একটি মেয়াদ শেষের পর আর বোর্ড সভাপতি পদে রাখা হলো না। আনুষ্ঠানিক স্তরে এই ব্যাখ্যার কোনও সত্যতা না পাওয়া গেলেও, এটা সত্যি যে, সৌরভের কাছে রাজনীতিতে তথা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। হয়তো সৌরভ যদি বিজেপিতে যোগদান করতেন, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হলেও হতে পারত। কিন্তু সৌরভ সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেননি। বিজেপির সঙ্গে কোনও সম্পর্কই তিনি রাখেননি। বরং উল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে তাঁর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন হাসিমুখে। 'দিদি'-র সঙ্গে করেছেন সৌজন্যর সম্পর্ক। দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে মমতার পাশেই দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তাই, সৌরভের মমতার সঙ্গে সম্পর্ক যে একেবারেই ভালো লাগেনি সেটা বলাই বাহুল্য।
পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, এই মুহূর্তে সৌরভ কোনও সময়ই সভাপতির দৌড়ে ছিলেন না। বিরাট কোহলির সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাত এবং বিবিধ কারণে সৌরভ দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে খুব একটা জনপ্রিয় এই মুহূর্তে নন। তিনি এও জানতেন যে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তিনি যদি ভোটে লড়াই করেন, তাহলে তাঁর দশা বাইচুং ভুটিয়ার মতো হতে পারে। তাই মঙ্গলবার সকালেই সৌরভ ঘনিষ্ঠ মহলে এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি নন, বরং সভাপতি হতে চলেছেন রজার বিনি।
তবে, আরও একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণের নেপথ্যে ছিলেন প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে রজার বিনি-র নাম কিন্তু নিজে প্রস্তাব করেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুম্বইয়ে বোর্ডের অফিসে থাকলেও নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া একেবারেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সকলের শেষে বোর্ডের অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন সৌরভ। তারপর দ্রুত গাড়িতে বসে কাচ তুলে সৌরভ চলে যান বলে জানা যায়। বোর্ডের একজন সদস্য সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, সেই দিন সৌরভকে দৃশ্যতই বিচলিত এবং হতাশ লাগছিল।
সৌরভ জানতে পেরেছিলেন, একই ব্যক্তি পরপর দু'টি মেয়াদ সম্পূর্ণ করেননি বলে সরকারিভাবে যুক্তি দেখানো হলেও সৌরভকে সরানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চলতে পাকানোর কাজ চলছিল বোর্ডের অন্দরে। মঙ্গলবারের আগেই তাঁকে বলা হয়েছিল, ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি হিসেবে ঠিকমতো পারফর্ম করতে তিনি পারেননি। সেই সঙ্গে বোর্ডের স্পনসরের 'শত্রু' সংস্থার হয়ে যেভাবে বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছিলেন সৌরভ, সেটাও কখনওই ভালো চোখে দেখেননি বোর্ড সদস্যরা।
আর সৌরভের সঙ্গে শ্রীনিবাসনের সম্পর্ক যে খুব একটা ভালো না, সেটা মোটামুটি অনেকেই জানেন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সুযোগ থাকলেও সৌরভ যে দ্বিতীয় দফায় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না, তার নেপথ্যে আছেন খোদ নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। এই মুহূর্তে তিনি বিসিসিআই কর্তাদের মেন্টর হিসেবে পরিচিত। সৌরভের তীব্র সমালোচক ছিলেন এন শ্রীনিবাসন। শশাঙ্ক মনোহরের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক ভালো থাকলেও শ্রীনিবাসনের সঙ্গে কিছুটা অম্লমধুর সম্পর্ক ছিল সৌরভের। পাশাপাশি, এবার হয়তো আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়েও ভারতের প্রতিনিধি হতে পারেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। তাই যদি তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠেন, তখন ভারতীয় ক্রিকেটের ওপর ছড়ি ঘোরাতে গেলে এমন একজনকে দরকার, যিনি তাঁর কথামতো কাজ করতে পারেন। তাই হয়তো শ্রীনিবাসনের প্রভাবেই বোর্ড সভাপতি হতে চলেছেন রজার বিনি।

Whatsapp
