জীবনে একটিও সেঞ্চুরি নেই! তবু কেন বিনিকেই বাছল জয় শাহ-র বোর্ড

Roger Binny: মাত্র ৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার যাঁর, সেই ব্যক্তিই কেন পাচ্ছেন এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব? কে এই রজার বিনি?

রজার মাইকেল হামফ্রে বিনি। আর কয়েকদিন পরেই ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতি হচ্ছেন তিনিই। যদিও এই নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রাক্তন হচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অনেকেই বলছেন, সৌরভ ফের গ্রেগ চ্যাপেলের সময়ের মতো রাজনীতির শিকার! আবার কেউ বলছেন, বিজেপি-তে যোগ না দেওয়ায় সৌরভ-পতন। আবার কারও কারও দাবি, এসব এখন অতীত‌, সৌরভ যাচ্ছেন আইসিসি-তে! যদিও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাদে বিসিসিআইয়ের নতুন কমিটির সদস্যরা খুব একটা পরিবর্তিত হননি এদিন। আর এখানেই ভাবি বোর্ড প্রধান হিসেব উঠে এসেছে রজার বিনির নাম। শুরু হয়েছে বিতর্ক।

জীবনে একটিও সেঞ্চুরি যাঁর দখলে নেই। মাত্র ৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার যাঁর, সেই ব্যক্তিই কেন পাচ্ছেন এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব? কে এই রজার বিনি?

জন্ম ও ব্যক্তিগত জীবন
১৯৫৫ সালের ১৯ জুলাই কর্নাটকের বেঙ্গালুরু শহরে জন্ম নেন রজার বিনি। ইন্দো-স্কটিশ পরিবারের এই সন্তান ছোট থেকেই ছিলেন মেধাবী। প্রথমে বেঙ্গালুরুর সেন্ট জার্মেইন অ্যাকাডেমি। পরে সেন্ট জোসেফ ইন্ডিয়ান স্কুল, এরপর পিইউ কলেজ থেকে পড়াশুনা তাঁর। একটি সন্তান। স্টুয়ার্ট বিনি। যিনি নিজেও ক্রিকেটার। বিনির স্ত্রীর নাম সিন্থিয়া।

আরও পড়ুন: আইসিসি-র শীর্ষে সৌরভ, সম্ভাবনা কতটা উজ্জ্বল?

ছোটবেলা থেকেই খেলতে ভালবাসতেন তিনি। স্কুলের হকি দলে তাঁর নাম ছিল বিখ্যাত। একের পর এক ম্যাচে জয় আসত নাকি তাঁর পায়েই।

ক্রিকেট-জীবন
১৯৭৩ সাল নাগাদ ক্রিকেটের অঙ্গনে তাঁর প্রবেশ। ১৯৭৫-এ কেরলের বিরুদ্ধে রাজ্যস্তরের  ক্রিকেটে বিরাট সফল হননি তিনি। কিন্তু প্রথম ম্যাচে খানিকটা খারাপ পারফরম্যান্স হলেও পরের সিজনে ব্যাটে-বলে ঝড় তোলেন তিনি। কেরল, মহারাষ্ট্র, একাধিক রাজ্যের ক্রিকেট দলের সংসার ভালো খেলেন বিনি। অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে ১৭৪ রানের পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিনি
২১ নভেম্বর, ১৯৭৯ সাল। বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে অভিষেক ঘটে তাঁর। ৪১১ রান করে ভারত। সেই ম্যাচে খুব একটা ভালো খেলতে পারেননি তিনি। ইমরান খান, জাহির আব্বাস, শাহবাজ শরিফের রাজত্বে তখন মধ্যগগনে পাকিস্তান।

পরে একই সিরিজের অন্য একটি ম্যাচে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ৩২ রানে ২ উইকেট এবং ৫৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে হিরো হন সুদর্শন রজার। ততদিনে দেশের মহিলা মহলেও জনপ্রিয় হয়েছেন কপিল  দেবের বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৮০। অস্ট্রেলিয়ার বেন্সন এবং হেগেন ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপের ম্যাচে ভালো খেলেন তিনি।
২৩ রানে ২ উইকেট নেন বিনি। পরের ম্যাচে ৪১ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। প্রসন্ন, চন্দ্রশেখর, বিষেন সিং বেদিদের সময়ে যোগ্য সঙ্গত দেন তিনি।

১৩ মার্চ, ১৯৮৭। শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আবার ৯ অক্টোবর ১৯৮৭ সালে একদিনের ক্রিকেটকেও বিদায় জানান তিনি।

ক্রিকেট-পরিসংখ্যান
রজার বিনির মোট ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচও পূর্ণ হয়নি। ভোল হায়দায়নি থেকে ৯৯টি ম্যাচের মধ্যে ২৭টি টেস্ট, ৭২টি একদিনের ম্যাচ খেলেন তিনি। মোট রান করেন ১৪৫৯। আর উইকেট নেন ১২৪টি। একদিনের খেতে তাঁর রান ৬২৯ আর টেস্ট ম্যাচ মিলিয়ে তাঁর রান ৭৩০। একদিনের ক্রিকেটে মোট উইকেট নেন ৭৭টি আর টেস্টে ৪৭। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর সর্বোচ্চ রান ৫৭। টেস্টে ৮৩। যদিও একটিও সেঞ্চুরি তিনি না করতে পারলেও দুটি ম্যাচে ৫টি করে উইকেট। একটি ম্যাচে ৮ উইকেট নেন তিনি।

১৯৮৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ
কপিল দেব অধিনায়ক। মদন লাল, সৈয়দ কির্মনি, কর্সন ঘব্রিদের সঙ্গেই দাপট দেখান বিনি রজার। ওই সিরিজে ১৮টি উইকেট নিয়ে সেরা হন তিনি। ২ বছর পরে ১৯৮৫ এর চ্যাম্পিয়নশিপে ১৭ উইকেট পান তিনিই।

কর্মজীবন
ক্রিকেট ছাড়িয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন অনেক আগে থেকেই। কর্ণাটকের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি তিনি। ২০০০ সালে অনূর্ধ্ব উনিশ দলের দায়িত্ব নেন। যখন ওই দলের দায়িত্বে মহম্মদ কাইফ। স্বল্প সময়ের এই দায়িত্বের পাশাপাশি ২০১১ সালে বিনি একটি ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকেন। এদিকে ২০১২ সালে পাঁচ সদস্যের নির্বাচক কমিটির সদস্য হন তিনি। এছাড়াও একাধিক জায়গায় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

বিতর্কে রজার বিনি
একদা মহিলা মহলে প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সুদর্শন বিনিকে নিয়েও তখন আলোচনা কম হয়নি। আবার অনূর্ধ্ব উনিশ ক্রিকেট দলের কোচ থাকার সময়ে যুবরাজ সিংয়ের মতো ক্রিকেটার তুলে আনেন রজার। তাঁর হাত ধরেই মূলত যুবরাজের প্রবেশ।

আবার নিজের নির্বাচক কমিটিতে জায়গা পাকা হতেই ছেলে স্টুয়ার্ট বিনিকে ভারতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা দেওয়া হয়। যা নিয়েও তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।

জীবনী-সিনেমা
তাঁকে নিয়ে নয়, তবে ১৯৮৩ সালের প্রেক্ষাপটে 'এইট্টিথ্রি' ছবিটি করেছেন কবীর খান। এখানে বিনির চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিশান্ত দহিয়া।

Nishant Dahiya as Roger Binny

নিশান্ত দহিয়া, রজার বিনির ভূমিকায়, '83' ছবিতে

কেন সরলেন সৌরভ
দেশের 'দাদি' ও বাংলার 'দাদা'-র বিসিসিআই সভাপতির পদ ছাড়ার খবরের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে, মহারাজের ভিন্ন মুকুট এবার কি আরও উন্নত! তাঁকে আইসিসি সভাপতি হওয়ার দিকেই কি এগিয়ে রাখা হচ্ছে? দাবি উঠেছে এমনও। যেখানে, আবেগ দিয়ে নয়, যুক্তি দিয়ে ভেবেই এমন করেছেন দাদা, একথাও বলছেন কেউ কেউ। যদিও একথার আবহে কোনও নিশ্চিত ইঙ্গিত দেননি কেউ-ই। অনেকেই বলছেন, বিনির পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক যোগ। বরাবরই ক্রিকেট প্রশাসন চালালেও তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে কর্নাটকের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার। এর সঙ্গেই কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রী, নেতার সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। এমনকী, তাঁর পুত্র ক্রিকেটার স্টুয়ার্টের সঙ্গেও বিজেপি-র সম্পর্ক ভালো। আর এর জন্যই সৌরভের পরে বহু যোগ্য নাম থাকলেও বাজি জিতে নিয়েছেন তিনিই! বলছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। 

More Articles