ভারতের প্রথম ডাকঘর রয়েছে বাংলার এই জেলায়, আজ ধ্বংসস্তূপ সেই ইতিহাসের স্মারক
মিরজাফর-জগৎশেঠের বিশ্বাসঘাকতায় পলাশির যুদ্ধে হার স্বীকারে বাধ্য হয়েছিলেন নবাব সিরাজ। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাতে থাকে ভারতজুড়ে। তবে শুধু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নয়, একই সঙ্গে সেই সময় ভারতের মাটিতে বাণিজ্য চালাত ওলন্দাজরা। যদিও ভারতের মাটিতে ইংরেজদের পদার্পণের পর অনেকাংশেই কমে যায় তাদের প্রতিপত্তি। তারপরেও মেদিনীপুরজুড়ে বিশেষত খেজুরি অঞ্চলে লবণ, মশলা এবং নীলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একমাত্র প্রতিযোগী হয়ে ওঠে ওলন্দাজরা।
সালটা ১৭৭২। এই ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধের জন্যই খেজুরি অঞ্চলে গড়ে উঠল ভারতের প্রথম ডাকঘর। যার মূল উদ্যোক্তা ছিল ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অতি সহজেই এক লহমায় ওলন্দাজদের পিছনে ফেলে দিল ইংরেজ বাহিনী। যদিও খেজুরির এই ডাকঘরই ভারতের প্রথম ডাকঘর কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।অনেকের মতে, খেজুরির পূর্বেই ১৮৬৮ সালে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে তৈরি হয় প্রথম জিপিও, অর্থাৎ জেনারেল পোস্ট অফিস। আবার অন্যরা মনে করেন, ১৭৬৪ সালে বোম্বাই (অধুনা মুম্বই) শহরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক তৈরি হয় ভারতের প্রথম পোস্ট অফিস।
ইংরেজরা তখন খেজুরিকে ডাকত কেডগিরি বলে। ১৮৫১ সালে খেজুরির এই পোস্ট অফিসে শুরু হয় টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা, যদিও সম্পূর্ণভাবে কাজ শুরু হয় ১৮৫২ সালে।
আরও পড়ুন: নদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জার্মানি, বাঘ-সিংহকে বশ মানাতেন এই বাঙালি
শতাব্দী পেরিয়ে আসা এই ডাকঘর আজ পরিণত ভগ্নস্তুপে।সরকারকে বারংবার সংস্কারের কথা জানালেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া মেলেনি কিছুই।
১৭৭২ সালের ৫ মে। জন্মগ্রহণ করলেন রাজা রামমোহন রায়। হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে জন্ম রামমোহনের। তার সমগ্র জীবন ভরা অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায়। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন রামমোহন। মহাজনের কাজ দিয়ে কর্মজীবনের সূত্রপাত, পরবর্তী সময়ে কাজ করেছেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী রূপে। এমনকী, কিছুদিন কাজ করেছিলেন রংপুরের দেওয়ান হিসেবেও। ১৮১৫ সাল থেকে রামমোহন জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলনে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন। ১৮৩০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজা রামমোহন রায় স্বয়ং এই ডাকঘরে রাত্রিযাপন করেন। রামমোহনের স্মৃতিবিজড়িত এই ডাকঘর আজ বিস্মৃতির অন্তরালে।
এ তো গেল ভারতের প্রথম ডাকঘরের গল্প, এরই সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘরের শিরোপাও ভারতের মুকুটে।এই ডাকঘরটি অবস্থিত ভারতের কাশ্মীরে। যুদ্ধবিধ্বস্ত কাশ্মীরে আজও স্বমহিমায় ভাসমান এই ডাকঘর, যেখানে আছে ফিলাটেলি মিউজিয়াম। যেখান থেকে খোঁজ মেলে কাশ্মীরের ডাকটিকিটের অজানা ইতিহাসের। নেহরু পার্ক পোস্ট অফিস নামক (যদিও ২০১১ সালে এর নাম পরিবর্তন হয়) এই ডাকঘরটির স্ট্যাম্পেও মেলে অভিনবত্বের স্পর্শ।এই স্ট্যাম্পে আছে কাশ্মীরের আরেক গর্ব ডাল লেকের নিসর্গ চিত্র।
সুতরাং, মেদিনীপুর থেকে ভূস্বর্গ কাশ্মীর ডাকঘরের ইতিহাস ছড়িয়ে ভারতের সর্বত্র। আজ বিশ্ব ডাকঘর দিবসে ফিরে দেখা হল ভারতীয় ডাকঘরের উজ্জ্বল ইতিহাস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা চাপা পড়েছে মহাকালের গর্ভে।