নিরীহ নয় H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা, দেশে ফিরছে কোভিডের আতঙ্ক? উপসর্গ চিনবেন যেভাবে
H3N2 Influenza Virus: ২০০১ সালের পরে জন্ম নেওয়া শিশুদের H3N2v ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল বা প্রায় ছিলই না।
কোভিডের ভয় মানুষকে আর ততখানি বিপাকে ফেলবে না এমনটা মোটামুটি সকলেই বুঝে গিয়েছেন। ফলে কোভিড ধরা পড়লে, বা ধরা পড়ার খবর এলেও তত আর উদ্বিগ্ন হচ্ছে না জনতা। তবে, গুরুত্ব না দেওয়ার এই অভ্যাসে বেড়ে চলেছে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণ। ভারতে ইতিমধ্যেই এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে দু'জনের মৃত্যু ঘটেছে। একজন কর্ণাটকের এবং অন্যজন হরিয়ানার বাসিন্দা। কর্ণাটকে ২৬ জনের দেহে H3N2 ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে। সাধারণত ১৫ বছরের কম বয়সীদেরই H3N2 ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে ষাটোর্ধ্বরাও রয়েছেন বিপদের ঠিক দোরগোড়ায়।
বাড়তে থাকা কোভিড এবং H3N2 ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সম্প্রতিই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছে কর্ণাটক সরকার। সব মিলিয়ে যা তথ্য উঠে এসেছে তা মোটেও সুবিধার নয়। অ্যাডিনোভাইরাসের মোট ৬০ টি সংক্রমণের ঘটনা মিলেছে কর্ণাটকে। শুধু কর্ণাটক না, সারা দেশেই ফের কোভিড এবং H3N2-এর বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ভারতে গত সপ্তাহেই সংক্রমণের সংখ্যা ৬৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, H3N2 ভাইরাস প্রতি বছর এই সময়ে পরিবর্তিত হয় এবং ড্রপলেট বা ফোঁটার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কোভিড ভীতি কেটে যাওয়ার পরে ছয় মাস ধরে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা অবধি মাস্ক পরেননি, সাধারণ মানুষের কথা নাহয় বাদই রইল।
আরও পড়ুন- দেশজুড়ে জ্বরজারি, করোনা নয় তবে কী? কী বলছে কেন্দ্র?
H3N2 আসলে কী, কীভাবেই বা বাঁচবেন?
১) H3N2 INFLUENZA A
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ, বা ICMR বলছে, সারা দেশে যে জ্বর এবং সর্দির দেখা যাচ্ছে এখন, তার উত্স হচ্ছে H3N2। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা এ-এরই একটি ভ্যারিয়েন্ট। ইউএস সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে, যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, যা সাধারণত শূকরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তা মানুষের দেহেও শনাক্ত করা হয়, তখন তাদের 'ভ্যারিয়েন্ট' ভাইরাস হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
২০১১ সালের জুলাইয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা A H3N2 ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস (সাধারণত ‘H3N2v’ নামে পরিচিত) মানুষের দেহে আবিষ্কৃত হয়। ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাস শূকরের দেহে মিলেছিল৷ ২০১১ সালে ১২ টি সংক্রমণ ঘটে, ২০১২ সালের পর থেকে এই ভাইরাসের বেশ কয়েকটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, যার ফলে সংক্রমণ বেড়ে হয় ৩০৯টি৷
২) এর উপসর্গ কী?
H3N2 সংক্রমণের লক্ষণগুলি ঋতু বদলের সময়কার ফ্লু ভাইরাসের মতোই খানিক। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, সারা শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি বা ডায়রিয়া এর উপসর্গ।
৩) গুরুতর উপসর্গ কি দেখা দিতে পারে?
গত দুই-তিন মাস ধরে এই ভাইরাসটি ব্যাপকভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে। সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের, বিশেষ করে H3N2v-এর মতো ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের সংক্রমণ গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। H3N2v ভাইরাস আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে
২০০১ সালের পরে জন্ম নেওয়া শিশুদের H3N2v ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল বা প্রায় ছিলই না। প্রাপ্তবয়স্কদের এই সংক্রমণ ঠেকানোর সম্ভাবনা বেশি কারণ তারা আগেও এই একই ধরনের ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন।
আরও পড়ুন- অ্যাডিনোভাইরাস কী, কেন এত শিশু আক্রান্ত হচ্ছে বাংলায়
৪) প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
ICMR জানাচ্ছে:
মাস্ক পরতেই হবে
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে
কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে
হাত দিয়ে নাক-চোখ বারবার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
জ্বর এবং শরীরের ব্যথা কমাতে ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল খেতে হবে
৫) চিকিত্সা কী?
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক এক্কেবারে নয়। আইএমএ চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছে যে, কেবলমাত্র প্রচণ্ড জরুরি অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে, নতুবা নয়। মানুষ না জেনেবুঝেই অ্যাজিথ্রোমাইসিন এবং অ্যামোক্সিক্লাভের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে শুরু করে দেন। সেগুলি কতদিন খাওয়া উচিত বা কত ঘন ঘন খাওয়া উচিত, সেসব না জেনেই খেয়ে ফেলেন। এর ফলে হিতে বিপরীত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক তখনই ব্যবহার করা হয় তখন প্রতিরোধের আর অন্য কোনও উপায় কাজ করে না।