ব্রেস্ট ব্যাগ থেকে স্পোর্টস ব্রা! কবে প্রথম তৈরি হয়েছিল মহিলাদের অন্তর্বাস?
History of Brassier: কোভিড পরবর্তী সময়ে মহিলারা ব্রা ছাড়া থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন বা ব্রালেট এবং স্পোর্টস ব্রা বেশি পছন্দ করছেন।
নতুন একখানা শাড়ি বা জামা কিনতে যত খরচা হয়, আজকাল যুতসই অন্তর্বাস কিনতে গেলে তার চেয়ে বেশিই টাকা খসে। তাও আবার মেয়েদের প্রতি পোশাকের সঙ্গে অন্তর্বাসও বদলে বদলে যায়! প্যাডেড, নন প্যাডেড, ওয়ারফ্রি, সেমি কভারেজ, ব্যাকলেস, স্পোর্টস— অন্তর্বাসের রকমফের বিশ্বব্যাপী এক বিশাল বাজার তৈরি করেছে। জানলে অবাক হবেন, বিশ্বে এক বছরে অন্তর্বাস বিক্রির মূল্য ৯০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি! কিন্তু, অন্তর্বাস প্রথম মানুষ পরতে শিখল কবে? বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অন্তর্বাস ঠিক কবে, কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদন বলছে, ব্রা বা ব্রেসিয়ার প্রথম কবে কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়, তবে ঐতিহাসিকরা হোমারের ইলিয়াডের মতো প্রাচীন গ্রিক রচনায় পোশাকের উপর স্তন-সহায়ক কর্ড বা বেল্টের মতো কিছু পরার উল্লেখ খুঁজে পেয়েছেন। ইলিয়াডে উল্লিখিত আছে, দেবী অ্যাফ্রোদিতি এমব্রয়ডারি করা একটি পোশাক সরাচ্ছেন তাঁর বুক থেকে। অ্যারিস্টোফেনেসের লিসিস্ট্রাটা-তে দেখা গেছে, একজন মহিলা তাঁর স্বামীকে যৌনতায় এগোতে দিচ্ছেন না এই বলে যে তিনি তার স্ট্রোফিয়ন অর্থাৎ একটি পেঁচানো কর্ড বা বেল্ট খুলে ফেলছেন যা পোশাকের বাইরে এবং নীচে বা স্তনের মাঝখানে পরা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক মিরিলি লি বলেছেন, পোশাকের নীচে এমন কোনও স্তন আচ্ছাদন পরা আসলে কিন্তু নিয়মের ব্যতিক্রমই ছিল। কারণ নীচে কিছু পরলে তা স্তন্যপান করানোতে সমস্যা করতে পারে।
আরও পড়ুন- বিড়ালের চোখ হয়ে উঠল চশমা! যেভাবে জন্ম নিল ক্যাট আই গ্লাসেস
ইতালিয়ান পোশাক
সিসিলির ভিলা রোমানা দেল ক্যাসালে খননকারী প্রত্নতাত্ত্বিকরা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর একটি মোজাইক আবিষ্কার করেন। তাতে দেখা গেছে, রোমান মহিলাদের একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্তনের সঙ্গে আবদ্ধ একটি পোশাক রয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, এটি অ্যামিক্টোরিয়াম। এই লিনেনের পোশাকটির খানিকটা ব্যান্ডের মতো। তার থেকেই ওই ম্যুরালের চরিত্রগুলিকে 'বিকিনি গার্লস' নামে ডাকা হতে থাকে। আরেকটি রোমান স্তনের আচ্ছাদন হলো ম্যামিলার যা আবার শক্ত চামড়া দিয়ে তৈরি।
ক্লাসিস্ট জ্যান রাডিকের মতে, রোমান মহিলাদের তাদের স্তন ঢেকে রাখার এবং স্তনকে আকার দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বিকল্প পোশাক ছিল বলে মনে হয়। তবে সেই পোশাকগুলি আসলে কেমন ছিল বা তাদের ব্যবহার কেবল সৌন্দর্যের জন্য ছিল কিনা, বা কোনও যৌন ভূমিকা ছিল কিনা তা নির্ধারণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
প্রাচীন ব্রেস্ট ব্যাগ
২০০৮ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা অস্ট্রিয়ার লেংবার্গ দুর্গে একটি সিন্দুকে ১৫ শতকের দু'টি লিনেন 'ব্রা' আবিষ্কার করেন। ৬০০ বছরের প্রাচীন পোশাকগুলি খানিকটা আধুনিক সময়ের লংলাইন ব্রায়ের মতো, যাতে কাপও আছে। মধ্যযুগীয় অনেক লেখকের লেখায় ব্রেস্ট ব্যাগের উল্লেখ পাওয়া গেছে, এটি তারই প্রমাণ হতে পারে। পোশাক ইতিহাসবিদ রাচেল কেস এবং মেরিয়ন ম্যাকনেলি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বিট্রিক্স নুটজ ব্যাখ্যা করেছেন যে, বড় স্তনকে মোটেও আগে 'ফ্যাশনেবল' বলে মনে করা হতো না এবং মহিলারা তাদের বুকের আকার কমাতে, বুক নিয়ে নানা রসিকতা থেকে বাঁচতেই সহায়ক পোশাক পরতেন।
আরও পড়ুন-ছিল ধনীদের বিলাস! কীভাবে মধ্যবিত্ত মহিলাদের ‘জাতীয় পোশাক’ হয়ে উঠল নাইটি?
আধুনিক ব্রা তৈরি
স্তনের গঠন এবং স্তনকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যেই নতুন উপায়ে ব্রা তৈরি হতে থাকে। তবে আধুনিক ব্রা আবিষ্কারক সম্পর্কে মতামত আছে বিভিন্ন। ১৮০০-র দশকের শেষের দিকের ফরাসি বিপ্লবী এবং খুচরা বিক্রেতা হারমিনি ক্যাডোল একটি কাঁচুলিকে দুই ভাগে কেটে একটি টপ তৈরি করেন যাকে কর্সেলেট-গর্জ বলা হয়। আবার ১৮৭৬ সালে পোশাক নির্মাতা অলিভিয়া ফ্লিন্ট 'ফ্লিন্ট ওয়েস্ট' তৈরি করেন কাঁচুলির বিকল্প হিসেবে। ১৯৩০-এর দশকে, কাঁচুলির জায়গায় আসে ব্রেসিয়ার। সেই দশক থেকেই অন্তর্বাস শিল্পে প্রয়োজনীয় পোশাকের জন্য প্রমিত কাপের আকার এবং সামঞ্জস্যযোগ্য স্ট্র্যাপ উভয়ই চালু হয়েছিল।
১৯৬৮ সাল নাগাদ, আকৃতি-বর্ধক ব্রা খুব জনপ্রিয় হয়। মহিলাদের যৌনতা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী এই ব্রা নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ করেন তৎকালীন নারীবাদীরা। নিউ জার্সির আটলান্টিক শহরে মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতার প্রতিবাদ করে তাঁরা এমন ব্রা আবর্জনার গাদায় ফেলে দেন। তাঁদের 'ব্রা বার্নার্স' হিসাবে ডাকা হলেও প্রতিবাদকারীরা আসলে কিন্তু ব্রেসিয়ারে আগুন দেননি। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ব্রা ভর্তি ওই আবর্জনার গাদায় আগুন দেওয়ার কিন্তু পুলিশ বিভাগ তা পোড়াতে দেয়নি।
তারপর আসে স্পোর্টস ব্রা। স্পোর্টস ব্রা আসার আগে অনেক মহিলা ক্রীড়াবিদই সাধারণ ব্রা পরতেন বা প্রাচীন রোমান বিকিনি গার্লসদের মতো কাপড় দিয়ে স্তন বাঁধতেন।
১৯৭০-এর দশকে, তিনজন মহিলা পুরুষদের জকস্ট্র্যাপ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে জগব্রা তৈরি করেন, সেটিই প্রথম আধুনিক স্পোর্টস ব্রা হিসাবে বিবেচিত হয়। মার্কিন সকার তারকা ব্র্যান্ডি চ্যাস্টেইন স্পোর্টস ব্রাকে স্বতন্ত্র পোশাক হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন ১৯৯৯ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় সকার পিচে তাঁর শার্ট খুলে স্পোর্টস ব্রা পরে বিশ্বকাপ জয় উদযাপনের ভঙ্গি আজও অমলিন।
কোভিড-১৯ মহামারী ব্রা পরার ক্ষেত্রে আরেকটি পরিবর্তন এনেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একদা জনপ্রিয় হওয়া প্লাঞ্জ, পুশ-আপ এবং টি-শার্ট ব্রা-এর পরিবর্তে মহিলারা ব্রা ছাড়া থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন বা ব্রালেট এবং স্পোর্টস ব্রা-ই বেশি পছন্দ করছেন।