রীতিমতো লড়াই করে আদায় করতে হয়েছিল ছুটি, যে কারণে আজও রবিবারই ছুটি থাকে ভারতে
Indian Holiday history : বেশিরভাগ সরকারি এবং বেসরকারি দপ্তরে এখনও ছুটির দিন বলতে এই রবিবারকেই বোঝায়। কিন্তু জানেন কি এর আসল কারণ?
“রবিবার সে কেন, মা গো, এমন দেরি করে? / ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে সকল বারের পরে।” - এই প্রশ্নের জবাব বুঝি আজকের শিশুরাও খোঁজে, শিশুরা কেন, আমরাও তো খুঁজি! সপ্তাহান্তের এই একটা দিন ঘিরেই থাকে যত রাজ্যের পরিকল্পনা। কাজের মধ্যে এই বিরতিটুকুই আবার নতুন করে কাজ করার উদ্যম জোগায়। তাই ‘রবিবার’ এই শব্দটা যেন অনেক কিছু বলে দেয়। যদিও আজকাল চাকরির ধারণাটা অনেক বদলে গিয়েছে। নির্দিষ্ট ছুটির বদলে এসেছে উইক অফের ধারণা। এখন পালা করে সপ্তাহের একটা দিন ছুটি নেন। তবে বেশিরভাগ সরকারি এবং বেসরকারি দপ্তরে এখনও ছুটির দিন বলতে এই রবিবারকেই বোঝায়। কিন্তু জানেন কি কেন এই রবিবারকে ছুটির দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল ভারতে?
ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই এই রবিবারকে ছুটির দিন হিসেবে স্থির করা হয়। কিন্তু এই একটা ছুটির দিন সহজে পাওয়া যায়নি। সেই আমলে পরাধীন ভারতবর্ষের শ্রমিকদের জীবনে আলাদা করে ছুটি বলে কোনও ধারণাই ছিল না। অথচ অপরদিকে ব্রিটিশদের জীবনে তখনও ছিল রবিবার। তাঁরা সপ্তাহের এই একটা দিন গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতেন। আর ঠিক এই বৈপরীত্যই মেনে নিতে পারেননি সেই সময়কার শ্রমিক নেতা শ্রী নারায়ণ মেঘাজি লোখন্ডে।
আরও পড়ুন - ঘুরতে আর ঘুমোতে ভালোবাসেন? পৃথিবী জুড়ে সাড়া ফেলেছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’!
অর্থাৎ শ্রমিক মালিক বিরোধ আজকের নয়, সে যুগেও ছিল এই প্রথা। মালিক শ্রেণীর অধীনস্থ শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাই সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল তখনও। যার জেরে এই আন্দোলন। প্রাথমিক পর্যায়ে অবশ্য যুদ্ধের পথে হাঁটেননি তাঁরা। প্রস্তাব দেওয়া হয় সপ্তাহের একদিন বিরতির জন্য। একে গোটা দেশ তখন পরাধীন, তার ওপর আবার মালিক শ্রেণীর কাছে শ্রমিকদের জন্য আর্জি, এই গোটা বিষয়টা কার্যত উড়িয়ে দেন শাসক গোষ্ঠী। শ্রমিক নেতা শ্রী নারায়ণ মেঘাজি লোখন্ডে ব্রিটিশদের জানান, সপ্তাহের সাতদিনই টানা কাজ করা অসম্ভব,তাই একটা দিন ছুটি দরকার। এই মর্মে তিনি আরো বলেন, হিন্দু দেবতা “খন্ডকার”-এর জন্মদিন রবিবার, তাই সপ্তাহের ওই দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
ব্রিটিশ শাসক অবশ্য এক কথায় মেনে নেয়নি কিছুই। অবশেষে শুরু হয় লড়াই। শ্রমিক মালিক দ্বন্দ্ব। দীর্ঘ সাত বছরের লড়াই চলে। অতঃপর ব্রিটিশ সরকার লোখান্ডের এই অনুরোধ মানতে বাধ্য হয়। সেই কথা মতো ১৮৯০ সালের ১০ জুন শ্রমিকদের জন্য ছুটি ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। প্রতি মাসের ১৫ তারিখে বেতন এবং কাজের মাঝে আধঘন্টা খাওয়ার সময় এটাও সম্ভব হয়েছিল লোখন্ডের জন্যই। তার পর অবশ্য জল অনেক গড়িয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ফিরে গিয়েছে নিজেদের ভূখণ্ডে। ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে। তবে ১৮৯০ সালে চালু হওয়া এই নিয়মে কোনও পরিবর্তন হয়নি। পরবর্তী কালে কোথাও কোথাও শনিবার হাফ ছুটি অথবা শনি রবি দুইদিন ছুটির ধারণা চালু হয়েছে ঠিকই তবে রবিবারের গায়ে লেগে যাওয়া ‘ছুটির দিন’ তকমাটা আজও অটুট।

Whatsapp
