ঘুরতে আর ঘুমোতে ভালোবাসেন? পৃথিবী জুড়ে সাড়া ফেলেছে 'স্লিপ ট্যুরিজম'!

Sleep Tourism: কবে থেকে এত জনপ্রিয় হলো স্লিপ ট্যুরিজম? ঘুমের স্বাস্থ্য ফেরাতে ছুটিতে যাওয়ার এই অভিনব প্রবণতা খুবই সাম্প্রতিক।

সকাল হতে না হতেই দৌড় শুরু, ল্যাপটপের খটাখট, বাসে, ট্রেনের ভিড়ে গলদঘর্ম হওয়া। রাত যখন গভীর হতে শুরু করে তখন বাড়ি ফেরা, ফিরে এসে পরেরদিনের কাজের পরিকল্পনা। সবটুকুর মাঝে যে জিনিসটি বিসর্জনে যায়, তা আমাদের ঘুম। দ্রুতগতির জীবন রাতের ঘুমকে বাতিলের তালিকায় ফেলেছে। ফলে, পরেরদিন যে নির্বিবাদে, শান্ত মনে কাজ করা যায় তাও নয়, তবু, আমরা দৌড়ই। রাতে আরাম করে ঘুম না হওয়ায় ক্লান্তি, বিরক্তি, উদ্বেগ দিনের পর দিন আমাদের আরও ক্ষয়িষ্ণু করে তোলে। এই চক্রব্যূহ থেকে বেরোবার পথ নেই। যে সময়টা মানুষ ঘুমোচ্ছে সেই সময় ঘুমোতে ঘুমোতে যদি ঘুরে আসা যেত, বা স্রেফ ঘুমের জন্য ঘুরতে যাওয়া যেত? অবাস্তব ঠেকলেও বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্লিপ ট্যুরিজম! যদি ঘুরতে আর ঘুমোতে ভালোবাসেন তবে অবশ্যই স্লিপ ট্যুরিজম চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

স্লিপ ট্যুরিজম আসলে কী?

ভ্রমণ এবং অবসর এই দুইকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সম্প্রতি। আর তারই মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল স্লিপ ট্যুরিজম, যা মূলত ছুটিতে যাওয়া এবং রাতের দুর্দান্ত ঘুম সংক্রান্ত পরিষেবা ও সুবিধা প্রদান করে। অর্থাৎ মানুষ ছুটি কাটাতে যান কেবল ঘুমোতে! নিশ্চিন্তে ঘুমোতে মানুষ ছুটি চায়। দিনের পর দিন প্রবল চাপে থেকে না ঘুমনোর যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে, ঘুমের হাল ফেরাতে মানুষ সেই হোটেলের ঘুম-সম্পর্কিত আরামের প্যাকেজ এবং পরিষেবা বুক করেন। জানলে অবাক হবেন, এই ২০২৩ সালের স্লিপ ট্যুরিজম হচ্ছে চরমতম ট্রেন্ডিং এক বিষয়।

আরও পড়ুন- ব্রহ্মার দেওয়া কোনও বর নয়, যে রোগের কারণে এতো ঘুমাতেন কুম্ভকর্ণ

কবে থেকে এত জনপ্রিয় হলো স্লিপ ট্যুরিজম? ঘুমের স্বাস্থ্য ফেরাতে ছুটিতে যাওয়ার এই অভিনব প্রবণতা খুবই সাম্প্রতিক। মানুষ ঘুমকে প্রাধান্য দিতে এবং গভীর, আরামদায়ক ঘুম অর্জন করতে সবটুকু চেষ্টা করতে শুরু করেছে কোভিড মহামারী পর্ব থেকেই। যাদের ঘুম হয় না ভালো, বা দীর্ঘদিন যাদের পর্যাপ্ত না ঘুমিয়েই কেটেছে দিন-রাত তারা ঘুমের মান বাড়ানোকে মাথায় রেখেই ছুটির দিন হোটেল বুক করেন। সেই হোটেলে স্পায়ের বিশেষ বন্দোবস্ত থাকে 'স্লিপ ডেপ্রাইভড'দের জন্য।

এই ধরনের স্পাগুলি বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজের বিকল্প দেয় হোটেলের অতিথিদের। এই স্পা-তে নির্দিষ্ট যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক এবং মেডিটেশন ক্লাস সহ যোগ স্টুডিও রয়েছে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের নানা ব্যায়াম করা এবং মাথা থেকে নেতিবাচক চিন্তা দূরে সরাতে সাহায্য করে। কোনও ব্যক্তির সামগ্রিক আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে যা রাতে আরও ভাল এবং আরও শান্তিতে ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।

আরও পড়ুন- নাক ডাকিয়ে ঘুম মানেই সুখনিদ্রা নয়! মৃত্যুকে রোজ রাতে ডেকে আনছে আপনার ছোট্ট ভুলই

এই হোটেল এবং রিসর্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা হলো রিফ্লেক্সোলজি। এটি এক ধরনের থেরাপি যাতে আপনার হাত, পা, কানের মতো শরীরের বিশেষ অংশগুলিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাপ প্রয়োগ করে মানসিক চাপ কমাতে এবং শান্ত হতে সাহায্য করে। যার ফলে গভীর ঘুম আসে।

লন্ডনের একটি হোটেল ক্যাডোগান, স্লিপ কনসিয়ার নামে একটি বিশেষ পরিষেবা দেয়। একটি হোটেল অ্যাপের মাধ্যমে হোটেলের নির্দিষ্ট ঘরে একটি মেডিটেশন রেকর্ডিং বাজিয়ে অতিথিকে গভীর ঘুমের দিকে নিয়ে যায় এই হোটেল। যারা কোলবালিশ এবং মাথায় অনেক বালিশ নিয়ে ঘুমোতে ভালোবাসেন, তাদেরও চাহিদা মেটায় এই হোটেল। নিরবচ্ছিন্ন ঘুমকে আরও সুস্থির করতে অতিথিদের বিশেষ ধরনের বালিশের তালিকাও দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। রাতে ভালো করে ঘুম্অনোর জন্য মোটা কম্বল বা শোবার সময় বিশেষ চা-ও বেছে নিতে পারেন অতিথিরা।

জেডওয়েলকে লন্ডনের প্রথম হোটেল যা অতিথিদের ঘুমের হাল ফেরানো নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করে। এই হোটেলে নির্দিষ্ট কিছু ঘর রয়েছে যা শব্দরোধী। নিউইয়র্কের পার্ক হায়াতে ঘুমের জন্য এক বেডরুমের স্লিপ স্যুট পাওয়া যায়। এআই-চালিত ঘুম প্রযুক্তি কোম্পানি ব্রাইট অতিথিদের রাতের শান্তিপূর্ণ ঘুমে সম্পূর্ণ সহাযোগিতা করে। সুতরাং এবারের ছুটিতে ঘুমই হোক সেই মোক্ষম অভীষ্ট, যার জন্যই ছুটে যাওয়া যেতে পারে সেই বিশেষ ঠিকানায়, দু'দণ্ডের শান্তি যেখানে বসত করে।

 

More Articles