"জিভ পুড়িয়ে দিল, এর স্বাদ..." স্যুইসাইড নোটে যেভাবে সায়ানাইডের স্বাদ লিখেছিলেন এই ভারতীয়...

Cyanide Taste: স্যুইসাইড নোট লেখার জন্য যে কলমটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি, সেই কলমের পিছনের অংশ দিয়েই মদের মধ্যে সায়ানাইড গোলেন তিনি।

"ডাক্তাররা, পটাসিয়াম সায়ানাইড। আমি পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়েছি, স্বাদ বুঝেছি। এটি জিভকে পুড়িয়ে দেয় এবং এর স্বাদ তীব্র অ্যাসিডের!”

ঝড়ের বেগে লিখেছিলেন। কয়েক সেকেন্ডেরও কম সময়ে প্রচণ্ড বেগে লিখছিলেন এই বাক্যগুলি, এই অনুভূতি। তারপরেই নিঝুম, সব শেষ। আত্মহত্যাপর্ব সমাধা হলো। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনাই এমন এক উত্তর দিয়েছিল যার সন্ধান যুগ যুগ ধরে করেছেন বিজ্ঞানীরা। মারাত্মক বিষ সায়ানাইডের স্বাদ আসলে কেমন? এই কৌতূহল মাখা প্রশ্নের উত্তর জানার ইচ্ছা ছিল সকলেরই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে এর উত্তর মেলা সম্ভব, সেই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গেলে চিরজন্মের মতো সব উত্তর বন্ধ হয়ে যায়।

এক ভারতীয়ের আত্মহত্যা সারা বিশ্বকে সেই প্রাচীন প্রশ্নের উত্তরটি জানিয়ে দিয়ে যায়। মারাত্মক বিষের স্বাদ বর্ণনাই ছিল তাঁর স্যুইসাইড নোটের বয়ান। পুলিশ জানিয়েছিল, আত্মহত্যাকারী ওই ব্যক্তির নাম এমপি প্রসাদ। পেশায় স্বর্ণকার। কেন যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা জানা যায়নি। স্যুইসাইড নোট সম্পূর্ণ লেখার আগেই বিষের জ্বালাতে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুর উদ্দেশ্য জানা যায়নি, তবে জানা গিয়েছে বিষের স্বাদের সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উত্তর।

আরও পড়ুন- নাকে আসছে পচা মাছের গন্ধ! ইরানে শ’য়ে শ’য়ে স্কুলছাত্রীকে বিষপ্রয়োগ করছে সরকার?

পুলিশ জানিয়েছিল, কোচির বাসিন্দা এই এমপি প্রসাদ একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানেই মদের সঙ্গে সায়ানাইড মিশিয়ে খান। স্যুইসাইড নোট লেখার জন্য যে কলমটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি, সেই কলমের পিছনের অংশ দিয়েই মদের মধ্যে সায়ানাইড গোলেন তিনি। এই ব্যক্তির আত্মহত্যার আগে পর্যন্ত সায়ানাইডের গন্ধ কেমন শুধুমাত্র সেটুকুই জানা গেছিল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, তেতো বাদামের মতো গন্ধযুক্ত সাদা পাউডার হচ্ছে সায়ানাইড। এই ব্যক্তির মৃত্যু না হলে, সায়ানাইডের স্বাদ জানা যেত না। সায়ানাইডের স্বাদ সম্পর্কিত কোনও লিখিত প্রামাণ ছিল না। তাই এই স্যুইসাইড নোটটিই প্রথম প্রামাণ্য নথি।

মাত্র ৩২ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন এমপি প্রসাদ। পেশায় স্বর্ণকার হওয়ায় সায়ানাইড কেনার লাইসেন্স ছিল তাঁর। পুলিশের অনুমান ছিল, যে কলমের ডগা দিয়ে তিনি মদের মধ্যে সায়ানাইড গুলেছিলেন সেই কলমের ডগাটি ভুলবশত জিভে ঠেকিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এর আগেও অনেকে আত্মহত্যার সময় সায়ানাইডের স্বাদ লিখে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পাতায় 'S' অক্ষরটুকু লিখেই প্রাণ গেছে অনেকের। এত দীর্ঘ বাক্য কেউ লিখতে পারেনি এতকাল যাবৎ।

এমপি প্রসাদের পরিবার জানিয়েছিল, সায়ানাইড সম্পর্কে কৌতূহলী ছিলেন তিনি বরাবরই। কেরল পুলিশের প্রাক্তন ক্রিমিনোলজিস্ট ডক্টর জেমস ভাদাকুমচেরির একটি বই পড়ার পর প্রসাদ সায়ানাইড সম্পর্কে আরও আগ্রহী ও কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। প্রসাদের দেহের ময়নাতদন্ত করে চিকিৎসকরা জানান, প্রসাদের শরীরে প্রবেশ করা সায়ানাইডের প্রাথমিক পরিমাণ মাত্র ১০ মিলিগ্রামেরও কম হতে পারে। সেই কারণেই প্রসাদ সায়ানাইডের স্বাদ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি লাইন লেখার মতো অবস্থাতে ছিলেন।

পটাসিয়াম সায়ানাইড আসলে এমন এক দ্রুত কার্যকরী বিষ যা খাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মৃত্যু ঘটে। নাৎসি নেতা থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগার বিদ্রোহীরা অবধি এই বিষ খেয়েই আত্মহত্যা করতেন। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে বা জিজ্ঞাসাবাদের আগে, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই আত্মহত্যা করার উপায় হিসাবে সায়ানাইড ছিল বিশ্বস্ত বিষ। সাহিত্যের নানা অংশে সায়ানাইড মেশানো বইয়ের পাতা উল্টে আত্মহত্যার উল্লেখ মেলে। পাতার মধ্যে সায়ানাইড মিশিয়ে, জিভের থুতুতে আঙুল লাগিয়ে পাতা উল্টানোর মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনা রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পে নতুন নয়। 

আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদে ঠিকাদারের টিপসই বদলে দিল তদন্তের দিশা! যেভাবে আবিষ্কার হলো ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’

সায়ানাইড আসলে কী?

কার্বন-নাইট্রোজেন (CN) যৌগ ধারণকারী যেকোনও রাসায়নিকই সায়ানাইড। অনেক পদার্থেই সায়ানাইড থাকে, কিন্তু তাদের সবই মারাত্মক বিষ নয়। সোডিয়াম সায়ানাইড (NaCN), পটাসিয়াম সায়ানাইড (KCN), হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN), এবং সায়ানোজেন ক্লোরাইড (CNCl) প্রাণঘাতী।

সায়ানাইড বিষক্রিয়ার লক্ষণ

মাথাব্যথা
মাথা ঘোরা
দুর্বলতা
বিভ্রান্তি
ক্লান্তি
শারীরিক সমন্বয়ের অভাব
নিম্ন রক্তচাপ
অজ্ঞান হওয়া
খিঁচুনি
হৃদস্পন্দন ধীর হওয়া
ফুসফুসের ক্ষতি
শ্বাসযন্ত্র বিকল হওয়া
কোমা

সায়ানাইড কতখানি পরিমাণে গেলে তা প্রাণঘাতী?

কতটা সায়ানাইড প্রাণ নিতে পারে তা খুব বেশি নির্ভর করে কীভাবে তা গ্রহণ করা হচ্ছে, কতটা ডোজ এবং কতক্ষণ আগে খাওয়া হয়েছে সেসবের উপর। সায়ানাইড খাওয়ার চেয়েও সায়ানাইডের ঘ্রাণ বেশি মারাত্মক। সায়ানাইড ত্বকের সংস্পর্শে এলে বিষয়টা ততটা উদ্বেগের নয় (যদি না সায়ানাইড DMSO-এর সঙ্গে মেশানো থাকে)। প্রায় অর্ধেক গ্রাম সায়ানাইডই একজন প্রাপ্তবয়স্ককে মেরে ফেলতে পারে। বেশি ডোজের সায়ানাইড শ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে গেলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন মানুষ, মৃত্যুও ঘটতে পারে।

More Articles