১১ জন ফুটবলারকেই পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছিল হিটলারের দল
Football and Hitler: খেলার আগেই তাদের শাসানি দেওয়া হয়েছিল, ‘যদি জিতিস, তাহলে মরবি’, ফলে তারা পরিণতি বুঝেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আর খিদের জ্বালায় কাতর হয়ে হারবে বলেই মাঠে নেমেছিল।
জনতার আফিম?
ফুটবলের সঙ্গে ঈশ্বরের মিল কোথায় বলুন তো? দু'জনেই অনুগামীর মনে ভক্তিভাব জাগায় আর বুদ্ধিজীবীদের মনে অবিশ্বাস। ১৯০২-এ রুডইয়ার্ড কিপলিং লন্ডনে বসে ফুটবলকে ঠেস মারতে গিয়ে যাদের আত্মা জুড়ে এই খেলাটা বসে আছে তাদের নিয়ে মস্করা করে বলেন, "একগাদা গণ্ডমূর্খ কাদামাখা একখানা বল নিয়ে গোলের দিকে ছুটছে"। ওই শতাব্দীর তিন-চতুর্থাংশ পরে হোর্খে লুইস বোর্খেস বুয়েনস আইরেসে আরও সূক্ষ্ম একটি হুল ফোটান। ১৯৭৮-এর বিশ্বকাপে আরহেন্তিনা যেদিন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে, তিনি বেছে বেছে সেইদিন ওই একই সময়ে ‘অমরত্ব’ নিয়ে বক্তৃতা দিলেন।
অনেক রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবীই ফুটবলকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন। তাঁদের বিশ্বাস ফুটবল নিয়ে এই গণউন্মাদনা বস্তুত ধর্মীয় উন্মাদনার মতোই ক্ষতিকর। ফুটবলের ভর হলে লোকে নাকি পা দিয়ে ভাবতে শুরু করে! ওদের অবিশ্যি পা ছাড়া আর কিছু নেইও ভাবার জন্য! কিন্তু এই আদিম অস্ত্রে শান দিয়েই লোকগুলো কেমন নিজেদের স্বপ্ন সার্থক করে! জান্তব প্রবৃত্তি মানবিক যুক্তিবোধকে ছাপিয়ে যায়, অজ্ঞতা দুমড়ে-মুচড়ে ধ্বংস করে আমাদের মহতী সংস্কৃতিকে, আর যত লাগামছাড়া অপোগণ্ডের দল হাতে চাঁদ পেয়ে যায়।
আবার উলটোদিকে অনেক বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ‘ফুটবল নিপাত যাক’ স্লোগান দেন এই কারণে যে, ফুটবল নাকি জনতার বৈপ্লবিক উদ্যম আর নতুন স্বপ্নের ভোর সাকার করার সৃজন ক্ষমতা নষ্ট করে মানুষকে খোজা বানিয়ে ছাড়ে। একদিকে খাদ্য, অন্যদিকে ফুটবলের সার্কাস। খাদ্যের জন্য আন্দোলন নেই অথচ সার্কাস চলছে! ফুটবলে সম্মোহিত জনতা, একধরনের বিকৃত মুগ্ধতায় ব্যাকুল, এতে শ্রমিক শ্রেণির চেতনার অবক্ষয় ঘটে, গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে তারা ক্রমশ শ্রেণি শত্রুদের খপ্পরে পড়ে।
রিভার প্লেটে, ফুটবলের কর্তৃত্ব যখন ইংরেজ আর বড়লোকদের হাত থেকে চলে গেল, তখন ফুটবল ক্লাবগুলো গড়ে উঠছিল রেলের কিংবা জাহাজ নির্মাণের কারখানায়। অনেক নৈরাজ্যবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক নেতা শুরুতেই ক্লাবগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এসবই নাকি বুর্জোয়াদের ষড়যন্ত্র। মালিকেরা কারখানায় ধর্মঘট বন্ধ করতে আর শ্রেণিবৈষম্যের দিক থেকে চোখ ঘোরাতেই এমন চাল চেলেছে। দুনিয়া জুড়ে ফুটবলের এই রবরবা আসলে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত, যাতে শোষিত মানুষ চিরকাল নিজের বাল্য-কৈশোরের স্বপ্নেই বুঁদ হয়ে থাকে, তারা কোনওদিন বড় না হয়।
কিন্তু আরহেন্তিনোস জুনিয়র ক্লাবটি আবার তৈরি হল শিকাগো শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে, সেই সব নৈরাজ্যবাদী শ্রমিকদের সম্মানজ্ঞাপন করতে। বুয়েনস আইরেসের চাকারিতার এক গ্রন্থাগার ছিল সেখানকার নৈরাজ্যবাদীদের ঠেক। সেই গ্রন্থাগারেই ক্লাবের উদ্বোধন হল। আর তারিখটিও বাছা হল পয়লা মে। গত শতাব্দীর শুরুতে বাঁ দিকে ঝুঁকে থাকা সব বুদ্ধিজীবী কিন্তু ফুটবলকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেননি। তারা সবাই বোধহয় মনে করতেন না এই খেলা জনতার চেতনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে, নাম না করলে অন্যায় হবে, ইতালীয় মার্কসবাদী আন্তোনিও গ্রামশি ফুটবলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছিলেন, "সূর্যের নীচে খোলা মাঠের সবুজে এমন মুক্তির স্বাদ মানুষকে আরও বেশি মানবিক করে তোলে"।
আরও পড়ুন- দর্শক তো তার মুণ্ডু চায়, যন্ত্রণার বিনিময়ে কী পায় রেফারি?
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন
১৯১৬-র গ্রীষ্মে, তখন বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে, নেভিল নামে ব্রিটিশ বাহিনীর এক ক্যাপ্টেন হঠাৎ একদিন আক্রমণ শানাল ফুটবলে লাথি কষিয়ে। নিজেদের আস্তানার সামনে খাড়া করা সুরক্ষার পলকা দেওয়াল টপকে সে বলটাকে তাড়া করে সামনের জার্মান ট্রেঞ্চের দিকে এগোতে থাকে। তার সঙ্গীরা প্রথমে কিঞ্চিৎ দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও শেষমেশ তাকে অনুসরণ করে। সেদিন ক্যাপ্টেন নেভিল জার্মানদের বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়, কিন্তু ইংল্যান্ড ওই নো ম্যানস ল্যান্ড দখল করে নেয় এবং সীমান্তে ব্রিটিশ ফুটবলের প্রথম জয় বলে একে স্বীকৃতি দেয়।
এর অনেক পরে, বিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষের দিকে এ সি মিলানের মালিক সিলভিয়া বার্লুসকোনি ওদেশের গ্যালারির চিরপরিচিত ‘এগিয়ে চলো ইতালিয়া’ মন্ত্রেই নির্বাচনে জেতে। বার্লুসকোনির নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল ফুটবলময়। যেভাবে সে বিশ্বের সেরা ফুটবল ক্লাবগুলির শিরোমণি এ সি মিলানকে এতকাল রক্ষা করে এসেছে, সেভাবেই নাকি ইতালিকে রক্ষা করবে। কিন্তু ফুটবল-পাগল ইতালির আম আদমি ভেবেই দেখেনি যে বার্লুসকোনি যতই গালভরা প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, ওর বেশ কয়েকটা কোম্পানি তখন একেবারে খাদের ধারে দাঁড়িয়ে আছে, যেকোনও দিন লালবাতি জ্বালবে।
ফুটবলের সঙ্গে পিতৃভূমির আবেগকে মিশিয়ে দিয়ে আত্ম-পরিচয়ের রাজনীতি করা নেতা বা একনায়কেরা বারবার ফয়দা লুটেছে। ১৯৩৪ আর ’৩৮-এর বিশ্বকাপে ইতালির দল পিতৃভূমি আর মুসোলিনির নামে জয়ধ্বনি দিয়ে জিতেছে। প্রতি ম্যাচের আগে খেলোয়াড়রা ফ্যাসিস্ত কায়দায় ডান হাত সামনে এগিয়ে দিয়ে জনতাকে অভিবাদন জানিয়ে শপথ নিয়েছে।
নাৎসিদের কাছেও ফুটবল নিছক কোনও খেলা ছিল না, ছিল পুরোদস্তুর রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। ১৯৪২-এ ডায়নামো কিভ ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের স্মৃতিতে ইউক্রেনে একটি সৌধ নির্মিত হয়েছে। জার্মানি যখন বুটের নীচে মাড়িয়ে দিচ্ছে দেশটাকে, তখন স্থানীয় এক স্টেডিয়ামে ডায়নামো কিভের খেলোয়াড়রা হিটলারের দলকে খেলায় হারিয়ে দেওয়ার মতো মারাত্মক অপরাধ করে ফেলে। খেলার আগেই তাদের শাসানি দেওয়া হয়েছিল, ‘যদি জিতিস, তাহলে মরবি’, ফলে তারা পরিণতি বুঝেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আর খিদের জ্বালায় কাতর হয়ে হারবে বলেই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু ফুটবলের এমনই জাদু যে মাঠে নামার পর নিজেদের মর্যাদা খুইয়ে আসার কথা তারা ভাবতেই পারল না। জেতার অদম্য বাসনায় হারিয়ে দিল জার্মানদের। ম্যাচ শেষের পর এগারোজন খেলোয়াড়কেই জার্সি-পরা অবস্থায় খাড়া পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড় করিয়ে একে একে গুলি করে মারা হয়।
ফুটবল আর স্বদেশ, স্বদেশ আর ফুটবল। ১৯৩৪-এ চ্যাকোর যুদ্ধে বলিভিয়া আর প্যারাগুয়ে যখন মানচিত্রের একখণ্ড জনবিরল এলাকার জন্য একে অপরকে কচুকাটা করছে, তখন প্যারাগুয়ের রেড ক্রস কোনওমতে একটা দল বানিয়ে আরহেন্তিনা আর উরুগুয়ের বিভিন্ন শহরে ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করে। ওই সব খেলায় তারা যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করতে পারে, যা দিয়ে বলিভিয়া-প্যারাগুয়ে উভয় পক্ষের আহত সেনার শুশ্রূষা সম্ভব হয়।
এর তিন বছর পরে জেনারেল ফ্রাঙ্কো যখন হিটলার আর মুসোলিনির হাত ধরে নিজের দেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেই দেশের গণতন্ত্রের ভিতটা নড়বড়ে করতে ব্যস্ত, তখন বাস্ক-ভাষী এলাকা থেকে একটি ফুটবল দল বেরিয়ে পড়ে ইওরোপের অন্য দেশের দিকে। ওদিকে বার্সেলোনা তখন খেলছে যুক্তরাষ্ট্র আর মেহিকোয়। বাস্ক সরকার ইয়ুসকাদি দলটিকে ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশে পাঠায় তাদের সংকটের কথা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে এবং কিছু অর্থ সাহায্যের প্রত্যাশায়। বার্সেলোনাও একই উদ্দেশ্যে সাগরপাড়ি দিয়ে আমেরিকা পৌঁছেছিল। ১৯৩৭-এই বার্সেলোনার সভাপতিকে ফ্রাঙ্কোর বাহিনী গুলি করে খুন করে। দুটো দলেরই লক্ষ্য ছিল মাঠে এবং মাঠের বাইরে প্রচার করা যে তাদের দেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে।
বার্সেলোনার মাত্রই চারজন খেলোয়াড় যুদ্ধের সময় দেশে ফিরতে পেরেছিল। বাস্ক দলটির একজন। দেশের প্রজাতান্ত্রিক সরকার হেরে যাওয়ার পর ফিফা বাইরের দেশে খেলতে আসা ওইসব খেলোয়াড়দের বিদ্রোহী বলে দেগে দেয় এবং তাদের আজীবন নির্বাসনের হুমকি দেয়। সেইসব খেলোয়াড়ের মধ্যে সামান্যই কয়েকজন লাতিন আমেরিকার দেশগুলির দলে জায়গা পায়। পরে অবিশ্যি বেশ কয়েকজন বাস্ক মিলে মেহিকোতে এস্পানিয়া ফুটবল ক্লাব তৈরি করে, প্রথম দিকে যে ক্লাবকে কেউ হারাতেই পারত না। ইয়ুসকাদি সেন্টার ফরোয়ার্ড ইসিদ্রো ল্যাঙ্গারা ১৯৩৯ সালে আরহেন্তিনায় খেলতে শুরু করে সান লোরেঞ্জোর হয়ে প্রথম ম্যাচেই চার-চারটে গোল করেন। ওই ক্লাবেই খেলতেন অ্যাঙ্খেল জুবিয়েতা, সেই ইয়ুসকাদি দলে যিনি মাঝমাঠের বিশ্বস্ত খেলোয়াড় ছিলেন। পরে আবার ল্যাঙ্গারা মেহিকোয় ১৯৪৫-এর চ্যাম্পিয়ানশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন।
ফ্রাঙ্কোর দেশের আদর্শ ক্লাব ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ওরা ১৯৫৬ থেকে ’৬০ পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থে বিশ্ব শাসন করেছে। রিয়ালের অত্যাশ্চর্য দলটা ওই ক'বছরে চারবার নিজের দেশের লিগ, পাঁচবার ইওরোপিয়ান কাপ আর একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টও জিতেছে। সেকালে রিয়াল মাদ্রিদ যেখানেই যেত দর্শকদের তাক লেগে যেত। লোকে হাঁ করে দেখত খেলা কাকে বলে! স্বৈরাচারী ফ্রাঙ্কোও রীতিমতো ভ্রাম্যমাণ দূতাবাস পেয়ে গিয়েছিল, যাদের হারানো ছিল দুঃসাধ্য। দেশের জনতাকে জাতীয় সংগীত কারা আল সোল গাইয়ে যতটা না দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তার থেকে ঢের বেশি কাজ হয় রেডিওয় রিয়াল মাদ্রিদের খেলার ধারাবিবরণী শুনিয়ে। এক একটা গোল যুদ্ধজয়ের ট্রাম্পেট-ধ্বনির চেয়ে অনেক বেশি কাজে দেয়। ১৯৫৯-এ সেই জমানার এক রাজনৈতিক নেতা, হোসে সোলিস, একবার খেলোয়াড়দের অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছিল, "তোমাদের ধন্যবাদ, যারা এতদিন আমাদের ঘৃণা করত, তারা এখন আমাদের বুঝতে পারছে।" মধ্যযুগের হিস্পানি যোদ্ধা এল সিদ-এর মতো রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের দেশের অমরত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তবে রিয়াল মাদ্রিদের ওই বিখ্যাত দলটিকে কেমন যেন বিদেশি সেনাবাহিনীর মতো মনে হয়। ওই দলে ছিল ফরাসি তারকা কোপা, দুই আরহেন্তিনীয় দি স্তেফানো আর রিয়াল, উরুগুয়ের সান্তামারিয়া এবং হাঙ্গেরির পুসকাস।
আরও পড়ুন- মহিলাদের যাতে অসম্মান না হয়, তাই সর্বাঙ্গ ঢাকা জামা পরে মাঠে নামতেন ফুটবলাররা!
ফেরেন্শ পুসকাসের বাঁ পায়ের তীব্র শটকে লোকে বলত ‘খুদে কামানের গোলা’। সে যেন নরম চামড়ার দস্তানার মতো মোলায়েম। হাঙ্গেরির অন্য বিখ্যাতরা, যেমন লাদিশ্লাভ কুবালা, জোলতান জিবোর, শান্দোর কোচিস তখনকার দিনে বার্সেলোনায় খেলত। ১৯৫৪-য় মূলত কুবালার জন্যই বার্সেলোনাকে কাম্প নৌ-এর বিখ্যাত স্টেডিয়াম নির্মাণ শুরু করতে হয়। কুবালার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পাস আর আগুনে গোলার মতো শট দেখতে যে হারে দর্শক আসছিল তাতে পুরনো স্টেডিয়ামে আর জায়গায় কুলোচ্ছিল না। ওদিকে জিবোরের বুট থেকে স্ফুলিঙ্গ ছুটছিল। বার্সার আরেক হাঙ্গেরীয় কোচিসের মূল অস্ত্র ছিল অসামান্য হেড। ‘সোনা বাঁধানো হেড’ বলত সবাই, সে একটা করে গোল করত আর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দর্শকদের রুমাল উড়ত আকাশে। মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল চার্চিলের পরে কোচিসের মতো অমন মাথা সারা ইওরোপে আর নেই।
১৯৪৯-এ সোভিয়েত ইউনিয়ন হাঙ্গেরিকে কব্জা করে ফেলল। ১৯৫০-এ কুবালা স্বনির্বাসিত অবস্থায় একটা ফুটবল দল তৈরি করে। ফলস্বরূপ ফিফা তাকে দু'বছরের জন্য নির্বাসিত করে। ১৯৫৬-য় হাঙ্গেরির মানুষের গণপ্রতিরোধ যখন সোভিয়েতের ট্যাঙ্কের তলায় পিষে ফেলা হয়, তখন ফিফা দেশের স্বার্থ না-দেখে অন্য দলে খেলার জন্য পুসকাস, জিবোর, কোচিসকে এক বছরেরও বেশি সময়ের জন্য নির্বাসিত করে।
আবার ১৯৫৮-য়, সেসময় তাদের স্বাধীনতার লড়াই তুঙ্গে, আলজিরিয়া একটা ফুটবল দল গড়ে। এই দল প্রথমবার স্বাধীন আলজিরিয়ার পতাকার রঙে রং মিলিয়ে জার্সি পরে। সেই দলে মাখলোফি, বেন তিফোর ছাড়াও অন্যান্য আলজিরিয় খেলোয়াড়েরা ছিল, যারা এতকাল ফ্রান্সে পেশাদার ফুটবল খেলত।
ঔপনিবেশিক ফ্রান্স বাগড়া দেওয়ায় আলজিরিয়া কেবল মরক্কোর সঙ্গেই খেলতে পেরেছিল। এমন ভয়ঙ্কর অপরাধের জন্য ফিফা মরক্কোকেও কয়েক বছরের জন্য নির্বাসিত করে। ফলে আলজিরিয়ার দল বাধ্য হয় আরব দেশগুলো আর পূর্ব ইওরোপের হাতে গোনা কয়েকটা দেশের ফুটবল সংস্থা আয়োজিত তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাচ খেলতে। ফিফা আলজিরিয়ার মুখের উপর সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফরাসি লিগেও ওই দলের খেলোয়াড়দের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। চুক্তির নানারকম ফেরে পড়ে তারা পেশাদার ফুটবলেও আর ফিরতে পারছিল না। কিন্তু যখন স্বাধীন হল আলজিরিয়া, মুক্তির সেই ভোরে কালো তালিকাভুক্ত খেলোয়াড়দের ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া ফরাসিদের সামনে অন্য বিকল্প ছিল না। কেননা, সেদেশের দর্শকদের কাছে এইসব খেলোয়াড় ছিল নয়নের মণি।