একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন, টেকেনি বিয়ে || কেমন ছিল ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত জীবন?

বিতর্ক এবং বন্দনা- ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেত্রী এবং দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ঘিরে এই দুইই দানা বেঁধেছে চিরকাল। ১৯৬৬-'৭৭ এবং ১৯৮০-'৮৪ সাল পর্যন্ত ইন্দিরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর উদ্যোগ যেমন প্রশ‌ংসিত হয়েছে সব মহলে, তেমনই ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার কথা ঘোষণা করা যে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়, তা বজায় ছিল ইন্দিরার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। আরও একটি বিতর্কের জন্ম হয়েছিল ইন্দিরার হাত ধরেই, অপারেশন ব্লু স্টার, যার পরিণামেই প্রাণ দিতে হয় তাঁকে। তবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক জীবন নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও একাধিক বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন ইন্দিরা।

সময়টা শীতকাল। শীতের পাতাঝরা বিকেলকে সঙ্গী করে সন্ধে নামছে এলাহাবাদের রাস্তায়। নিয়ন আলোয় যেন প্রতি মুহূর্তে আরও সুন্দরী হচ্ছে এলাহাবাদ শহর। তেমনই এক দিনে, ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর, সেই এলাহাবাদে জন্ম নিলেন ভারতীয় রাজনীতির অগ্নিকন্যা ইন্দিরা গান্ধী।

শৈশব থেকে রাজনৈতিক চৌহদ্দির মধ্যেই বেড়ে ওঠা ইন্দিরার।একপ্রকার বাড়িতে বসেই রাজনীতির অ আ ক খ-র প্রথম পাঠ নিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: বিয়াাল্লিশ পর্যন্ত উদ্দাম জীবন, বিয়েই বদলে দিয়েছিল ইমরানকে

সালটা ১৯৪২। ইন্দিরা বিয়ে করলেন সাংবাদিক ফিরোজ গান্ধীকে। এর পূর্বেই, ১৯৩০ সালে ফিরোজ গান্ধী আরও একবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইন্দিরাকে। কিন্তু ইন্দিরা তখনও নাবালিকা, তাঁর বয়স তখন মাত্র পনেরো। ফলে রাজি হয়নি তাঁর পরিবার। যদিও ১৯৪২ সালে বিয়ের পরেও সুখের হয়নি ইন্দিরা-ফিরোজের দাম্পত্যজীবন। ফিরোজ ছিলেন পার্সি সম্প্রদায়ের সদস্য। এই কারণে এই বিয়ে নিয়ে প্রথম থেকেই দ্বিধাবিভক্ত ছিল গান্ধী পরিবার।

তবে শুধুমাত্র পারিবারিক ক্ষেত্রের বাধাই যে ইন্দিরা-ফিরোজের দাম্পত্য জীবনকে কণ্টকময় করে তুলেছিল, তা হয়তো নয়।কে. এন. রাও তাঁর 'নেহরু ডায়নাস্টি' বইতে উল্লেখ করেছেন, বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ইন্দিরা প্রেমে পড়েন মহম্মদ ইউনুসের। তবে এই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থেকেই যায়। কিন্তু ইন্দিরার ব্যক্তিগত জীবনে যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, ১৯৫০ সালের পর আর একসঙ্গে থাকা হয়নি ফিরোজ এবং ইন্দিরার।

মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে প্রেমের ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও একাধিকবার প্রেমে পড়েছেন ইন্দিরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানকার এক জার্মান শিক্ষকের প্রেমে মজেছিলেন তিনি। যদিও তাঁর জীবনের সবথেকে আলোচিত প্রেমের অধ্যায়টি শুরু হয় এরপর।তিন মূর্তি ভবনে কাজের সময় এম. ও. মাথাইয়ের প্রেমে পড়েন ইন্দিরা।এই প্রেম চলেছিল প্রায় বারো বছর। তবে শেষ পর্যন্ত ইন্দিরার জীবনে প্রবেশ করেন যোগগুরু ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারী। না, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারেননি এম. ও. মাথাই।ফলে ইন্দিরার নতুন প্রেমিক এবার ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারী। এরই মাঝে বিদেশমন্ত্রী দীনেশ সিংয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ইন্দিরা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একের পর এক পুরুষ এসেছে ইন্দিরার জীবনে। তাঁদের কেউই সেভাবে স্থায়ী হননি। তবে ইন্দিরা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন দৃঢ়, অবিচল। ব্যক্তিগত জীবনের জলছাপ পড়তে দেননি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে।

 

তথ্যসূত্র: 'নেহরু ডায়নাস্টি'- কে. এন. রাও

More Articles