ছাপিয়ে যাচ্ছেন সুপ্রিমোকেই! মহুয়ায় কেন মউ জমল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
Mahua Moitra-Mamata Banerjee: রাজনৈতিক আঙিনায় শোনা যায়, মহুয়া খুব একটা কথা বলেন না। অর্থাৎ জনমানসে বা দলের অন্দরে শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়া বাকিদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ নেই তাঁর।
আমেরিকার নামজাদা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরাট বেতনের চাকরি ছেড়েছিলেন। জেপি মরগ্যানের ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে দেশের রাজনীতিতে পা দিয়েছিলেন তিনি। জন্মসূত্রে অসমের, পড়াশোনা-পরিবার সূত্রে কলকাতার বাসিন্দা মহুয়া মৈত্র যোগ দিলেন গান্ধি পরিবারের দলে। জাতীয় কংগ্রেসের ‘আম আদমির সিপাহি’ কর্মসূচির মাধ্যমে যাঁর পরিচিতি বাড়ল দেশজুড়ে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ঘনিষ্ঠ এই কংগ্রেস নেত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র বাম-বিরোধিতা এবং ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার মধ্যেই যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। প্রায় ৬ বছরের রাজনৈতিক লড়াই, দলের মধ্যে কখনও কোণঠাসা থেকেও ২০১৬ সালে, মমতার নির্দেশে নদিয়ার করিমপুরের মতো শক্ত বিধানসভা আসনে লড়ে জিতলেন মহুয়া। আর উত্থানে দেরি হয়নি। ৪৫ বছর বয়সে এসে মাত্র ৩ বছর বিধায়ক থাকার পর কৃষ্ণনগর আসন থেকে তাপস পাল পরবর্তী সময়ে সাংসদ নির্বাচিত হলেন মমতা-প্রিয় মহুয়া।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গতিপথ এইটুকুই। এখানেই থেমে যেতে পারত সবটা। এখানেই বলে দেওয়া যেত অন্য অনেকের মতোই একজন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র! নাহ্, সে হতে দেননি অর্থনীতির এই কৃতী ছাত্রী। সোশ্যাল দুনিয়া এবং ট্যুইটারকে হাতিয়ার করে দেশের রাজনীতিতে বারবার প্রাসঙ্গিক থেকেছেন তিনি। দিল্লির অলিন্দে হাতেগোনা যে কয়েকজন সাংসদ বিজেপি, বিশেষত নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের বিরোধিতায় ‘অলআউট খেলেন’, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে নিয়ে এসেছেন নিজেকে। প্রথমবার সাংসদ হয়ে অচিরেই জনপ্রিয় হয়েছেন তিনি। মহুয়া রাজ্য-রাজনীতির বিতর্কিত অধ্যায়কে সন্তর্পণে এড়িয়ে, দেশকে ডেকে এনেছেন নিজের দিকে! কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকিকে দিল্লি পুলিশের গ্রেফতার হোক বা বিলকিস বানো, আবার ‘কালী বিতর্কে’ও জড়িয়ে গিয়েছে মহুয়ার নাম। আদালত থেকে ট্যুইটার, সব ক্ষেত্রেই চালিয়ে ব্যাটিং করেছেন এই তৃণমূল সাংসদ। ক্রমেই যেন হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের দিল্লির মুখ! আর এখানেই কি ঘরেই বেঁধেছে গোল!
মহুয়ায় ক্রমশ জনপ্রিয়তার মউ জমলেও, জনপ্রিয়তার ঢেউ লাগলেও দলে ক্রমান্বয়ে মমতার দূরে সরেছেন তিনি? সবুজ-গৃহে কতটা প্রাসঙ্গিকতা বজায় থেকেছে মহুয়ার? মমতা-অভিষেককে ছাড়িয়ে মহুয়া কি মাত্র ৪ বছরেই দিল্লির তৃণমূলের মুখ! তিনিই কি নরেন্দ্র মোদি বিরোধিতায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন নিজের দলের নেতৃত্বকে। এই প্রশ্নও উঠেছে। আর এখানেই অনেকে বলছেন, যেকোনও বিষয়ে গঠনমূলক ট্যুইট-বিরোধিতা এবং সাংসদ জীবনের প্রথমপর্বেই সংসদের অলিন্দে বক্তব্য-ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে মহুয়া। শিক্ষিত, ভাল ইংরেজিকে সহায় করে একের পর এক বক্তৃতায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। প্রশ্ন, এখানেই কি চাপে পড়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব? কোথাও গিয়ে মাত্র কয়েক বছরেই দিল্লিতে মমতাকে ছাপিয়ে যাওয়া ‘কাল’ হয়েছে মহুয়ার জন্য?
আরও পড়ুন- ভোটজয়ের বছর ঘুরতেই ছন্নছাড়া তৃণমূল! কেন দল ছাড়তে চাইছেন একদল নেতা
এই জল্পনার মধ্যেই উঠে এসেছে বৃহস্পতিবারের মমতা-মন্তব্য। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের সামনে নেতাজি ইন্ডোরে দাঁড়িয়ে মহুয়ার উদ্দেশ্যে তৃণমূলনেত্রী বলেন, “তুমি (মহুয়া) তোমার জায়গা নিয়ে থাকো, করিমপুর এখন আবু তাহেরের। ও দেখে নেবে।” প্রসঙ্গত, করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র নদিয়া জেলার মধ্যে হলেও এটি মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যে আসনের সাংসদ আবু তাহের খান। যদিও করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মহুয়া মৈত্র ওই অঞ্চলেই থাকেন। এরপরেই ফের ইন্ধন জোগায় বিতর্কে। দলের তরফে মহুয়া-কৌশল কি দূরত্ব তৈরি করছে তাঁর সঙ্গে? এই আবহেই একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট করেন মহুয়া মৈত্র। তিনি লেখেন, “দয়া করে এই বার্তা শেষ অবধি পড়বেন। আমি কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। করিমপুরবাসীদের জন্য এক বিশেষ বার্তা।” তার পরেই মহুয়া মৈত্র লেখেন, “আপনারা সকলেই জানেন যে ২০১৬ সালে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ ধন্য হয়ে ও করিমপুরের জনগণের ভালবাসায় আমি করিমপুর বিধানসভার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হই। ২০১৬ থেকে ২০১৯ এই তিন বছরে সরকারের যে সর্বব্যাপী উন্নয়ন তা করিমপুরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি- এই সময় প্রায় ১৪৯ কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে বরাদ্দ করাই। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে লালন মঞ্চ, সদ্ভাবমণ্ডপের মতো সংস্কৃতি ও বিনোদনের ক্ষেত্র নির্মাণের মতো প্রকল্প থেকে শুরু করে করিমপুর আই.টি.আই, করিমপুর পান্নাদেবী কলেজের গ্রামানোন্নয়নের মতো শিক্ষা মূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়নের মানচিত্রে করিমপুরকে সামিল করার চেষ্টা করেছি এবং আপনারা তা চাক্ষুষও করেছেন।” তাৎপর্যপূর্ণভাবে মহুয়া লেখেন, “উন্নয়নমূলক প্রকল্প সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রয়োজনে মাননীয় সাংসদ জনাব আবু তাহের খান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি করিমপুরের ভোটার ও অধিবাসী হিসেবে আমার করিমপুরের বাসস্থানেই থাকব।”
এই পোস্টের পরেই শুরু হয় জল্পনা। তাহলে কি কার্যত দলনেত্রী এবং আবু তাহেরের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মহুয়া! জল্পনা বাড়িয়েছেন করিমপুরের বিধায়ক দিব্যেন্দু সিংহ রায়। তিনি বলেন, “উনি কতটা উন্নয়ন করেছেন মানুষ জানেন। এই পোস্ট তো নেত্রীকেই চ্যালেঞ্জ করছে। এটা না করলেই পারতেন।” নেত্রী বললেন নিজের (কাজের) জায়গা দেখতে, কিন্তু প্রয়োজনে যোগাযোগ এবং “আমি আগের জায়গাতেই (করিমপুর) থাকব”, এ কথা বলে সত্যিই কি মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন মহুয়া?
প্রসঙ্গত, সংসদে প্রবেশ করেই আলোচনার কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন মহুয়া। বাকপটু এই তৃণমূলনেত্রী কাকলি, শতাব্দীদের ছাপিয়ে প্রথম ইনিংসেই ভাল ব্যাটিং শুরু করেন। ২৬ জুন, ২০১৯। নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সরকারের ‘ফ্যাসিজম’ ইস্যুতে ৭ টি দিক তুলে ধরেন তিনি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে যায় মহুয়ার সেই বক্তব্য। ২০২০-এর ডিসেম্বর। বক্তব্যে জনপ্রিয় মহুয়া সমালোচিত হন সংবাদমাধ্যমকে ‘দু’পয়সার মিডিয়া’ বলে। ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, আবার বিতর্ক বাড়ান মহুয়া। রাজ্যসভার সাংসদ দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির নাম না করে লোকসভায় দাঁড়িয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়েও। শোরগোল হয়। হট্টগোল আর দেশজুড়ে বিতর্কের মুখে পড়েন মহুয়া মৈত্র। ৭ এপ্রিল, ২০২২। ‘ক্রিমিনাল প্রসডিউর বিল’ প্রসঙ্গে লোকসভায় মহুয়া-মন্তব্য বিতর্ক বাড়ায়। এর সঙ্গেই ট্যুইট। একের পর এক ইস্যুতে কেন্দ্রকে তুলোধোনা, মহুয়ার সোশ্যাল-জনপ্রিয়তা বাড়ায় নিমেষেই। ৫ জুলাই, ২০২২। তৃণমূল সাংসদ খানিকটা বেকায়দায় পড়েন ‘কালী’ বিতর্কে। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তিনি মন্তব্য করেন, “কালী আমার কাছে মদ, মাংস অর্পণের দেবতা।”
সমস্ত আবহে কালীই কাল হয় মহুয়ার। সরাসরি তাঁর মন্তব্যের জন্য দল দায়ী নয়, জানিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের পক্ষে মহুয়ার এই মন্তব্যের বিরোধিতা শুরু হয়। খানিকটা কোণঠাসা হন তিনি। অনেকেই বলেন, এই কোণঠাসা হওয়ার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল গোয়া থেকে। সংবাদমাধ্যম অথবা ট্যুইটে সক্রিয় মহুয়া বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি গোয়া তৃণমূলের দায়িত্ব। তাঁর ক্ষমতা-খর্বে অভিষেক, মমতার চাহিদায় যোগ দিয়েছেন মহুয়ার প্রাক্তন রাজনৈতিক সহকর্মী সুস্মিতা দেবরা। অর্থাৎ তিনি একা যে আর সামলে নিতে পারবেন না গোয়া, এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয় তখনই। এর পাশাপাশি কৃষ্ণনগরের অলিন্দে কান পাতলেই শোনা যায়, স্থানীয় বা জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই মহুয়ার। অভিযোগ ওঠে, নিজেকে নিয়ে বড়াই আর অহংবোধ কাজ করে নেত্রীর মধ্যে। তাই তাঁর কাছে সহজে ঘেঁষতে পারেন না দলীয় নেতা, কর্মীরা। জনতার মধ্যেও মহুয়া খুব একটা সুলভ নন। তাঁর মধ্যে একটু ‘এলিট এলিট’ প্রভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতাদের কাছে কি অস্বস্তির কারণ হচ্ছিলেন মহুয়া, না কি সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে খানিকটা ভিন্ন ধারার রাজনীতি করে দলের চিরাচরিত প্রথা ভাঙছেন তিনি! মহুয়া ঠিক কতটা দলের আর কতটা নিজস্ব রাজনীতির বাহক এই প্রশ্নের মধ্যেই দলনেত্রীর মহুয়া-মন্তব্য সামনে এসেছে বারবার। কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক সভা বা নেতাজি ইন্ডোরে দলের অধিবেশন, মমতা বারবার বাঁধার চেষ্টা করেছেন মহুয়া মৈত্রকে। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের ভাল দিনে মহুয়া মৈত্রের উপস্থিতি চোখে পড়লেও সংগঠনের কাজে বারবার তিনি সফল। প্রায় ৬ বছর রাজ্যের একাধিক জায়গায় তৃণমূলের সংগঠন শক্ত করেছেন মহুয়া। এর পাশাপাশি কালী বা মিডিয়া বিতর্ক, দল তাঁর পাশে না দাঁড়ালেও মহুয়া থেকেছেন অনুগত সৈনিক। দলনেত্রীর কথায় মান্যতা দিয়ে দলের বিরুদ্ধে যেতে দেখা যায়নি মহুয়াকে। আবার নিজের মন্তব্য থেকেও সরেননি এই তৃণমূল নেত্রী। ক্রমেই দিল্লির নেতাদের কাছে, নেটিজেনদের কাছে পরিচিতি বেড়েছে তাঁর।
বঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পরিচিতি বাড়া নিয়েও সন্দেহের অবকাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন সাধারণ সাংসদের পরিচিতি বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয়-অলিন্দে প্রভাব বিস্তার, মোদি বিরোধিতায় ভিন্ন মাত্রা দলের জন্য, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘ইমেজে’র জন্য কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। যদিও বিলকিস বানো ধর্ষণকাণ্ডে অপরাধীদের জামিন এবং দেশজুড়ে বিতর্কের মধ্যে কাজের কাজ করেছিলেন মহুয়া মৈত্র। সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন তিনি। এছাড়াও ‘সুইগি’ এবং মুসলমান ডেলিভারি বয় বিতর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। আবার তৃণমূলের হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হতে মহুয়ার বিকল্প পাওয়ায় কঠিন! এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে মহুয়া মৈত্রের দরুন বারবার সুবিধাই পেয়েছে তৃণমূল। দিল্লির রাজনীতিতে মমতার সাংসদ জীবনের পর বিকল্প হিসেবে মহুয়া উপস্থাপিত হয়েছেন। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা, রাজপথের নাম বদলে ‘কর্তব্যপথ’ নিয়েও বিতর্ক বাড়িয়েছেন তিনি। “মোদির বাসভবনের নাম কর্তব্যবিমূঢ়মঠ হোক” বলে ট্যুইটও করেন মহুয়া।
আরও পড়ুন- ভাঙলেন এক দশকের নীরবতা, অতল থেকে এবার উঠছেন সুদীপ্ত-সহযোগী দেবযানী!
সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মহুয়া যেমন তৃণমূলের জন্য স্বস্তির তেমনই অস্বস্তিরও বটে। কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের যুক্তি; অন্যান্য জননেত্রীর অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলা জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মহুয়ার ফারাক রয়েছে। শিক্ষিত শুধু নন, প্রকাশ্যে মহুয়ার ব্যক্তিত্ব এবং চশমা থেকে ব্যাগের সমারোহ ঠিক কতটা জনতাবান্ধব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি কী করবেন, কী পরবেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ না থাকলেও লোকসভায় মহুয়ার লক্ষাধিক মূল্যের ভ্যানিটি ব্যাগ খুব একটা ভাল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনি।
রাজনৈতিক আঙিনায় শোনা যায়, মহুয়া খুব একটা কথা বলেন না। অর্থাৎ জনমানসে বা দলের অন্দরে শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়া বাকিদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ নেই তাঁর। এমনকি তাঁদের মতামতের ক্ষেত্রে প্রাধান্য কম দেন তিনি। যা দলের তৃণমূলস্তর এবং মহুয়া-সম্পর্কে ছেদ ফেলেছে। মহুয়ার ব্যবহার নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই মহুয়া মন্তব্য করেন। ট্যুইটকে হাতিয়ার করে প্রায় সব ইস্যুতেই মুখ খোলেন মহুয়া। দলের গতিবিধি অথবা মতামত ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে আছে না নেই, তার ধার ধারেন না তিনি!
সামগ্রিক এই অভিযোগেই কি ক্রমেই লুপ্ত হচ্ছেন দাপুটে মহুয়া। নিজের এলাকাতেই খানিকটা কোণঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে তাঁকে? যে আবহ কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক সভা থেকে শুরু হয়েছিল, গোয়া-পর্বে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাই-ই কি ফের বুঝিয়ে দিলেন দলনেত্রী মমতা। অর্থাৎ বেশি নয়, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করুক মহুয়া, বাকিটা বুঝে নেবে দল! এই বার্তাই কি দেওয়া হল তাঁকে? প্রসঙ্গত, কালী এবং দু’পয়সার মিডিয়া মন্তব্যে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়েছিল দল। আবার করিমপুরে ছড়ি ঘোরানো নিয়েও দলনেত্রীর কাছে অভিযোগ আসছিল। এই আবহেই কি এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন মমতা! অনেকেই বলছেন, দিল্লির সংসদ রাজনীতিতে একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠেছিলেন প্রবল জনপ্রিয়। যা এখনও অনেকটাই বহাল। একজন মহিলা সাংসদ হিসেবে তিনিই ছিলেন সমকালীন সেরা! সেই ভাবনা, সেই পন্থাই নিচ্ছিলেন মহুয়া মৈত্র, চেষ্টা করছিলেন দিল্লির দ্বিতীয় মমতা হয়ে ওঠার? আর সেখানেই বাড়ন্ত গাছে তির নিক্ষেপ করলেন নেত্রী? প্রশ্ন উঠছে একাধিক, উত্তর দেবে সময়!