জোট নয়, প্রতিপক্ষ কংগ্রেস! রাহুলের ন্যায় যাত্রার দিনেই জনসভা কেন মমতার?

Mamata Banerjee Rahul Gandhi : বিজেপির বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দল হলেও কিছুকাল আগেই মমতা সাফ করে দেন কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।

বিহারে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে যাওয়ার আগে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় রাতটুকু ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাব্ধি। মঙ্গলবার রাহুল যখন বিহারের পুর্ণিয়ায় সমাবেশ করছেন, ঠিক তখন রাহুলের পথ ধরেই উত্তরবঙ্গে জনসংযোগ যাত্রা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া জোটের শরিক তৃণমূল ও কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধিতায় জোট শরিক হয়েছিলেন তারা, অথচ রাজ্যে কিছুতেই আসন ভাগ করবেন না বলে জানিয়ে দেন মমতা। আসন না ভাগ করা অবধিও ঠিক ছিল। কিন্তু রাহুলের ন্যায় যাত্রা ঘিরে প্রায় তু-তু-ম্যায়-ম্যায় শুরু হয়েছে তৃণমূল ও কংগ্রেসের। রাহুলের পথ দিয়েই পদযাত্রা, রাহুল যেখানে বলবেন, ঠিক একই সময়ে সমস্ত প্রচারের আলো কাড়তে অন্যত্র বক্তৃতা করবেন মমতা। বিজেপির বিরোধিতায় নেমে এ যেন সরাসরি কংগ্রেসেরও বিরোধিতা। এক ইঞ্চি জমি অন্যকে ছাড়তে নারাজ মমতা।

বুধবার কাটিহার থেকে লাভা হয়ে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মহানন্দা বাঁধ লিঙ্ক রোড, মহারিপাড়া ঢুকবে রাহুলের ন্যায় যাত্রা। বাসে করে রাহুল যাবেন তেলজন্না মোড়, ভালুকা রোড মোড়। সেখান থেকে ফের বাসে করেই রতুয়া স্টেডিয়াম থেকে বাহারাল, পরাণপুর, পাখুড়িয়া মোড়, মদিয়া ঘাট ব্রিজ, শোভানগর, মিল্কি, অমৃতি থেকে রথিবাড়ি ফ্লাইওভার ধরে ইংলিশবাজার পোস্ট অফিস মোড় যাবে এই জনসভা। ইংলিশবাজার মোড়েই হবে রাহুলের জনসভা।

আরও পড়ুন- ন্যায় যাত্রায় মানুষের মন জিতলেন রাহুল? ভোট পাবে কংগ্রেস?

বিজেপির বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দল হলেও কিছুকাল আগেই মমতা সাফ করে দেন কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। আসন ভাগাভাগি হবে না, সমস্ত আসনেই তৃণমূল প্রার্থী দেবে। রাহুলের ন্যায় যাত্রায় জোটসঙ্গী তৃণমূলের তরফে কাউকেই দেখা যায়নি তাই। তাবলে পাল্টা জনসভা? পাল্টা জনসংযোগ করে আখেরে কী বোঝাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? চোপড়ার পাশাপাশি ইসলামপুরেও পদযাত্রা করেন মমতা। আর বুধবার, যখন মালদায় রাহুল বক্তৃতা দেবেন, তখন ঠিক সেই সময়েই বহরমপুরে ভাষণ দেবেন মমতা। মমতা ক্রমেই স্পষ্ট করে দিচ্ছেন এই রাজ্য তাঁর, এখানে কোনও জোটে নেই তিনি। বিনা যুদ্ধে কাউকে সূচাগ্র মেদিনী দেবেন না তিনি। জোট শরিকের সঙ্গেই যুদ্ধ?

অথচ রাহুলের যাত্রায় নিরাপত্তার শঙ্কা করে কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চিঠি লিখেছিলেন। চেয়েছিলেন রাজ্যে তৃণমূলের প্রশাসন যেন সুরক্ষার বন্দোবস্ত করে। মমতা সম্প্রতি চোট পাওয়ার পরে সনিয়া গান্ধি নিজে খোঁজ করেছিলেন তাঁর স্বাস্থ্যের। কিন্তু এই রাজনৈতিক সৌহার্দ্যের যে ভোটের ময়দানে ঠাঁই নেই তা ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গের এই যে জনসংযোগ যাত্রা, তাতে কোথাও রাহুলের নামও উল্লেখ করেননি মমতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাহুল যে আবেগ তৈরি করেছিলেন মানুষের মধ্যে, সেই ঘোর কাটাতে কালবিলম্ব করতে চাননি মমতা। তাই রাহুলের যাত্রার পিছু পিছুই কর্মসূচি সাজিয়েছেন। মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাহুল বহিরাগত, তিনিই বাংলার মেয়ে। আর বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়, এখনও!

আরও পড়ুন- মমতার বিকল্প মীনাক্ষী! যে চালে রাহুলের ‘যাত্রা’র মোড় ঘোরাতে চাইছে কংগ্রেস

কংগ্রেস আর তৃণমূল আসান ভাগাভাগির ক্ষেত্রে একমত হলে সম্পর্ক কিছুটা ভিন্ন হতো। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এককালে কংগ্রেসেরই শক্ত ঘাঁটি ছিল। পরে সেখানেও দাপট বাড়ে তৃণমূলের। সেই এলাকাগুলিতেই আসছেন রাহুল। ফলে রাহুলের ক্যারিশ্মা যাতে কোনওভাবেই কংগ্রেসের ঝিমিয়ে পড়া ভোটবাক্সকে আবার জাগিয়ে না তুলতে পারে তাই পাল্টা জনসভা মমতার। মমতার সঙ্গে অধীর চৌধুরীর সম্পর্কও একেবারে সাপে-নেউলে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মমতা-সহ তৃণমূলকে সবসময়ই আক্রমণ করেন। তৃণমূলের নেতাদেরও অনেকে বলছেন, জোটের ‘কাঁটা’ একমাত্র অধীর।

তাই কাঁটাকে তৃণমূলের মসৃণ জমি থেকে উৎখাত করতেই লেগে পড়েছেন মমতা। প্রয়াত গনিখান চৌধুরীর জেলায় রাহুলের যাত্রার প্রভাব কমাতে চাইছেন তিনি। রাহুলের ন্যায় যাত্রা জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে থাকার সময়ই মমতা উত্তরবঙ্গে যান কিন্তু জোটসঙ্গীর সঙ্গে দেখাও করেন না, সৌজন্য সাক্ষাৎও না। কোচবিহারে চলে গেছিলেন তিনি। সকালে মালদহে মমতার প্রশাসনিক সভা, দুপুরে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে প্রশাসনিক সভা করে মমতা বুঝিয়ে দিলেন এই দুই জেলা তৃণমূলের কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল কি কংগ্রেসকে পুরনো ঘাঁটি ফিরিয়ে দিতে পারবেন?

More Articles