মমতার বিকল্প মীনাক্ষী! যে চালে রাহুলের 'যাত্রা'র মোড় ঘোরাতে চাইছে কংগ্রেস

Bharat Jodo Nyay Yatra: রাহুলের ন্যায় যাত্রায় যোগ দিতে পারেন কংগ্রেসের 'পুরনো বন্ধু' বামেরা। শোনা যাচ্ছে, সূজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমের পাশাপাশি যাত্রায় যোগ দিতে পারেন বামনেত্রী মীনাক্ষীও।

বহু দিনের জোটসঙ্গী। একসময়ে কেন্দ্রে সরকারও বানিয়ে ফেলেছিল এই দুই দল। তারপরের দীর্ঘদিনের দূরত্ব পিছনে ফেলে ফের কাছাকাছি আসে বাম ও কংগ্রেস। ফের জড়ে ওঠে জোট। এবার ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার মঞ্চে সেই বন্ধুতার ছবিই কি দেখা মিলতে চলেছে ফের একবার?

ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই একবার বাংলায় ঘুরে গিয়েছে কংগ্রেস। ফের ৩১ তারিখ বিহার ঘুরে বাংলার মালদহে প্রবেশ করবে যাত্রা। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাবে যাত্রা। ঘটনাচক্রে সেদিনই আবার মালদহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়েরও জনসভা। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের তরফে একাধিক বার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে তিনি শেষপর্যন্ত আসেনি। এমনকী গোটা যাত্রার সময়টাই উত্তরবঙ্গ সফরেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবু ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গী কংগ্রেসের থেকে বেশ খানিকটা দূরত্বই বজায় রেখে চলেছেন তৃণমূল।

আরও পড়ুন: যে কারণে মালদহ মুর্শিদাবাদ রাহুলের ‘কাঁটো কা সফর’

তবে রাহুলের ন্যায় যাত্রায় যোগ দিতে পারেন কংগ্রেসের 'পুরনো বন্ধু' বামেরা। যতদূর শোনা যাচ্ছে, সূজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমের পাশাপাশি রাহুলের এই যাত্রায় নাকি যোগ দিতে পারেন বামেদের তরুণ তুর্কি মীনাক্ষী। জানা গিয়েছে, বাম যুব সংগঠনের নতুন 'মুখ' মীনাক্ষীকে নাকি বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। বিগত কয়েক বছর ধরেই বামেরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে মীনাক্ষীকে। এমনকী তাঁকে 'ক্যাপ্টেন' বলেও সম্বোধন করেন দলের বহু প্রবীণ নেতারা। হবে না-ই বা কেন। নন্দীগ্রামের মতো হেবিওয়েট কেন্দ্রে মমতা, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ২১-র ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন মীনাক্ষী। তার পরেও বারবার নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তরুণ এই নেত্রী। আসন্ন ভোটেও যে মীনাক্ষীকেই সামনে রাখতে চাইছে দল, তা মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল বামেদের ইনসাফ যাত্রায়।

CPMCPM warms up as TMC distances itself from Bharat Jodo Yatra by congress leader Rahul via Bengal, Minakshi Mukherjee has got invitation

একদিকে কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধিতায় জোট বেঁধেছে ছাব্বিশটি বিরোধী দল। তবে সেই ইন্ডিয়া জোটে শরিক দলের মধ্যে তেমন বনিবনা হয়নি গোড়া থেকেই। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ সময়েই খড়্গহস্ত তৃণমূলনেত্রী। বিভিন্ন সময়ে রাহুলকে বিঁধতে ছাড়েন না তিনি। তার মধ্যে সাম্প্রতিক কালে আসনভাগ নিয়ে রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছেন। ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুজনেই দোষারোপ করে গিয়েছে একে অপরকে। আর এই দ্বৈরথের মধ্যেই কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা প্রবেশ করেছে বাংলায়। প্রথম থেকেই বিভিন্ন ভাবে অসহোযোগীতার মেজাজেই রয়েছে এ রাজ্যের শাসকদল। ২৮ তারিখ অর্থাৎ গত রবিবার শিলিগুড়ি দিয়ে রাহুলের যাত্রা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায়নি কংগ্রেস। বাধ্য হয়ে জলপাইগুড়ি দিয়েই রবিবার গিয়েছে রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। বিহার ঘুরে ৩১ তারিখ ফের মালদহে প্রবেশ করার কথা রাহুলদের। তবে ওই দিনই আবার মালদহে সভা করার কথা মমতারও। একই সঙ্গে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের সরকারি জায়গাগুলিতে রাহুলদের থাকা ও খাওয়ার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।

CPMCPM warms up as TMC distances itself from Bharat Jodo Yatra by congress leader Rahul via Bengal, Minakshi Mukherjee has got invitation

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার যাত্রায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও সেই ডাক ফিরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে জনসমক্ষে এই যাত্রা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মমতার দাবি, রাহুল গান্ধি নাকি তাঁকে যাত্রার বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। আর সেই 'অসৌজন্য' নিয়েই ক্ষুব্ধ তিনি। যদিও জয়রাম রমেশের মতো প্রবীণ নেতারা বারবার জানিয়েছেন, মমতা সভায় এলে তাঁকে সর্বতো ভাবেই স্বাগত জানাবে কংগ্রেস। পাশাপাশি কংগ্রেস ও তৃণমূলের রাস্তা যে কার্যত এক, সে কথাও বারবার জানানো হয়েছে কংগ্রেসেক তরফে। তবে তাতেও চিড়ে ভেজেনি। তেমনটাই মনে হচ্ছে এখনও পর্যন্ত। বরং ক্রমশ চওড়া হচ্ছে দু'দলের ফাটল। আর তৃণমূল-কংগ্রেসের এই দ্বৈরথের মধ্যেই ফের জমে উঠতে পারে বাম-কংগ্রেস রসায়ন। অন্তত যাত্রার আগামী কয়েকদিনে তেমনই ছবি দেখা যেতে চলেছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞদের অনেকে।

আরও পড়ুন:তরুণীর ‘মহব্বত’-এর উপহার নিমেষে পৌঁছে গেল কিশোরের হাতে! বাংলায় যে ম্যাজিক দেখালেন রাহুল

যতদূর জানা যাচ্ছে, রাহুলের যাত্রা মালদায় প্রবেশ করলে সেখানে যোগ দিতে চলেছেন সূজন চক্রবর্তী, শতরূপ ঘোষ। মুর্শিদাবাদে রাহুলের সঙ্গে থাকার কথা খোদ সিপিএম রাজ্য-সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের। অধীরের জেলাতেও বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়েছেন মীনাক্ষীও। সব মিলিয়ে যাত্রাকে কেন্দ্র করে বাম-কংগ্রেস সহাবস্থানের জায়গাটা আরও জোরালো হয়ে উঠতে চলেছে বলেই আশা করছেন অনেকে।

More Articles