জামিন পেতে চলেছেন কেজরিওয়াল! এবার দিল্লিতে বিজেপিকে উপড়ে ফেলতে পারবে আপ?
Arvind Kejriwal Bail: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসন, চাঁদনি চক, উত্তর পূর্ব দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, নয়াদিল্লি, উত্তর পশ্চিম দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি, দক্ষিণ দিল্লি- সবক'টিই জেতে বিজেপি।
আবগারি নীতি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অর্থ তছরুপের মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেলে। লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে বন্দি করার প্রসঙ্গে মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে শুধু দেশ নয়, বিদেশেও জোর চর্চা চলেছে, চলছেও। সব ঠিক থাকলে, আগামী ১০ মে কেজরিওয়াল অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেতে চলেছেন। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট সেইদিনই আদেশ দেবে। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেছেন, শুক্রবার অন্তর্বর্তী আদেশ (অন্তর্বর্তীকালীন জামিন) ঘোষণাই শুধু নয় গ্রেফতারের চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত মূল বিষয়টি নিয়েও রায় জানানো হবে। আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গত ২১ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে তিহার জেলে রয়েছেন তিনি।
গ্রেফতারির বিরুদ্ধে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আবেদনের শুনানিকে দু'টি ভাগে ভাগ করেছে বিচার বিভাগীয় বেঞ্চ। কেজরিওয়ালের প্রধান পিটিশনটি ইডির তাঁকে গ্রেফতার করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং এমনভাবে গ্রেফতার করাকে বেআইনি হিসাবে ঘোষণা করার দাবি করে। অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চাওয়াও হয়েছে পিটিশনে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, যিনি তদন্ত সংস্থার পক্ষেও সওয়াল করছেন তিনি লোকসভা ভোটের কারণে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রতি বিশেষ নম্র ভাব দেখানোর কঠোর বিরোধিতা করেছেন। তুষার মেহতা বলছেন, লোকসভা ভোট মাথায় রেখে কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হলে রাজনীতিবিদদের 'বিশেষ সুবিধা' পাইয়ে দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার, দিল্লির একটি আদালত এই মামলায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিচার বিভাগীয় হেফাজত ২০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, জামিনে ছাড়া পেয়ে কি খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারবেন কেজরিওয়াল? দিল্লিকে নিজের দখলে আনতে পারবেন মাফলার ম্যান?
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসন, চাঁদনি চক, উত্তর পূর্ব দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, নয়াদিল্লি, উত্তর পশ্চিম দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি, দক্ষিণ দিল্লি- সবক'টিই জেতে বিজেপি।
চাঁদনি চক আসনটিতে বরাবরই কংগ্রেস ও বিজেপির লড়াই হয়েছে। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের কপিল সিবালের হাত থেকে এই আসন ছিনিয়ে নেন বিজেপির হর্ষ বর্ধন। ২০১৪ সালে উত্তর দিল্লি আসন কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নেন বিজেপির মনোজ তিওয়ারি। বাকি সমস্ত কেন্দ্রেই বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে। এই সমস্ত লোকসভার অন্তর্গত অধিকাংশ বিধানসভাই আম আদমি পার্টির দখলে। কিন্তু আম আদমি পার্টির মুখ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারি সহজ ঘটনা নয়। আপ প্রচার করছে 'জেল কা জবাব ভোট সে'। আগামী ২৫ মে দিল্লিতে নির্বাচন। বিজেপি কি এবারও ৭ টি আসনই জিতবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি ফ্যাক্টর এবং অন্যান্য বিষয় যেমন অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ, সিএএ বাস্তবায়ন এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের ক্ষীর এখনও বাজারে খাচ্ছে। শহর জুড়ে রাজ্য থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তি বিজেপিকে এবারও সুবিধা দেবে।
কিন্তু বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের শরিক আপ এবং কংগ্রেস এবার একজোটে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে। আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে দিল্লিতে ত্রিমুখী লড়াই ছিল আপ, কংগ্রেস এবং বিজেপির। এবার কংগ্রেস আর আপ মিলে যাওয়াতে সমস্যায় পড়বে বিজেপি। দিল্লি বিজেপিতে এখনও এমন একজন জনপ্রিয় মুখের অভাব রয়েছে যিনি দলের প্রার্থীদের পক্ষে ভিড় আর ভোট দুইই টানতে পারবেন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির বর্তমান সাংসদ মনোজ তিওয়ারি বাদে সব মুখই এবার নতুন বিজেপির। ফলে চ্যালেঞ্জ থাকছেই।
অন্যদিকে অভিজ্ঞ নেতা অরবিন্দর সিং লাভলি, যিনি শীলা দীক্ষিতের শাসনামলে ১৫ বছর দিল্লিতে মন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন, তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ভালো ভিত্তি এখনও আছে দিল্লিতে। দিল্লির সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে কংগ্রেস। তবে এও ঠিক, কংগ্রেসে শীলা দীক্ষিতের মতো জনপ্রিয় মুখের অভাব দিল্লিতে। দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক কৌশল, শক্তিশালী নেতাদের অনুপস্থিতি, আর বর্তমান নেতাদের টানাপড়েনে কংগ্রেস টালমাটাল। তবে আপের সঙ্গে মিলে লড়াতে স্বাভাবিক প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভোট পেতেও পারে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠন করায় আপ বাড়তি সুবিধা পাবেই। বিজেপি দুর্নীতির ইস্যুই আপের মূল নিশানা। আপের নেতা মণীশ সিসোদিয়া এবং সঞ্জয় সিং এবং খোদ কেজরিওয়াল এখন আবগারি নীতির মামলায় জেলে রয়েছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে এই বিষয়টি ব্যবহার করে মানুষের সমর্থন আম আদমির পক্ষে যায় কিনা তাই এখন দেখার।