ইজরায়েলকে আর অস্ত্র দেবে না আমেরিকা! বাঁচবে রাফাহ-র শিশুরা?
Rafah invasion: এবার ইজরায়েলকে সমস্ত ধরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
পরিস্থিতি যাই হোক, ইজরায়েলের সঙ্গ ছাড়েনি কখনই আমেরিকা। তা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধপরিস্থিতি হোক বা ইরানের সঙ্গে সংঘাত। সেই আমেরিকাই যেন একটু বেসুরো বাজছে। এবার ইজরায়েলকে সমস্ত ধরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় আগ্রাসন কমানোর জন্য ইজরায়েলকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে আমেরিকা। যদিও হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের প্রথম পর্বে আমেরিকা ছিল ঘোরতর যুদ্ধের পক্ষেই। তবে পরবর্তীতে যুদ্ধ কমানোর পক্ষে রায় দেয় আমেরিকাও। এমনিতেই হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ সংক্রান্ত আদালতে কোণঠাসা ইজরায়েল। যে কোনও সময়ে ইজরায়েলের নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গাজায় যুদ্ধের প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে ৩৪ হাজার। গোটা গাজাকেই এই সাত মাসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইজরায়েলি সেনা। বাকি ছিল শুধু গাজার রাফাহ শহর। সেই শহরটিকেও ধ্বংস করার কাজে ইতিমধ্যেই হাত লাগিয়েছে ইজরায়েল। রাফাহ শহরে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা রুখতে আমেরিকার কাছে আবেদন জানিয়েছেন প্যালেস্টাইনের মাহমুদ আব্বাস। আমেরিকাও নানা ভাবে আবেদন-নিবেদন চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েলকে এই ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতি থেকে সরে আসতে।
আরও পড়ুন: সত্যিই গ্রেফতার হবেন নেতানিয়াহু? গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরোলে কী হতে চলেছে ইজরায়েল-প্রেসিডেন্টের সঙ্গে?
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধটাকে গোড়া থেকেই পুরোদমে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে দেখে এসেছে ইজরায়েল। তাই এত এত সাধারণ মানুষের মৃত্যু, শিশুদের শেষ হয়ে যাওয়া, কোনও কিছুকেই ধর্তব্যে ধরেনি তারা। এরই মধ্যে রাফাহ শহর পুরোপুরি শেষ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। শুরু হয় রাফাহ থেকে গাজাবাসীকে সরিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া। গোটা গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য পালানোর জায়গা বলতে ওই রাফাহ শহরটুকুই বেঁচে ছিল। বাকি শহরটাকে ইতিমধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইজরায়েলি সেনা। ফলে গাজাবাসীর পালানোর জায়গা বলতে আর কোনও নিরাপদ জায়গা বেঁচে ছিল না গোটা গাজায়।
ক্রমে এক পা এক পা করে রাফাহ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই হামাসের সঙ্গে নানাবিধ আলোচনা চলেছে, যাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইজরায়েল। মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় সেই কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি হামাস সেই যুদ্ধবিরতির শর্তগুলি মেনে নিয়েছে। তবে তারপরেও যুদ্ধ তো থামেনি। বরং ইতিমধ্যেই শহরের দক্ষিণে পৌঁছেছে ইজরায়েলি ট্যাঙ্কগুলি। সীমান্ত সংলগ্ন রাফায় প্রায় প্রতিদিনই বোমাবর্ষণ করছে ইজরায়েলি সেনা। যদিও রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে গাজার দক্ষিণের দিকে খান ইউনিসের কাছে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। অর্থাৎ যুদ্ধবিরতির কথা বললেও রাফাহ ধ্বংসের সিদ্ধান্ত থেকে সরতে চাইছে না ইজরায়েল। হামাসকে নির্মূল করার জন্য নাকি সেটাই শেষ রাস্তা তাদের কাছে। এমনটাই দাবি ইজরায়েলি সেনার।
এই পরিস্থিতিতে কড়া হয়েছে আমেরিকা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইজরায়েলে মার্কিনি অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ রাখবে আমেরিকা। যা মোটেই ভালো ভাবে নেয়নি ইজরায়েল। কার্যত যুদ্ধবাজ ইজরায়েলের কাছে এ এক বড়সড় ধাক্কা। দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের ঘনিষ্ঠতম, শক্তিশালী ও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ আমেরিকা। প্রায় সমস্ত সিদ্ধান্তেই এতদিন ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। এমনিতেই নেতানিয়াহু-সহ একাধিক ইজরায়েলি মন্ত্রী-পারিষদের বিরুদ্ধে যে কোনও সময় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে আন্তর্জাতিক আদালত। আর তা নিয়ে একটা ভয় রয়েইছে ইজরায়েলের ভিতরে। তার উপরে আমেরিকার হাত মাথা থেকে সরে যাওয়া। স্বাভাবিক ভাবেই চাপ বেড়েছে ইডরায়েল।
বরাবরই নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ঠেকেছে ইজরায়েলকে। কিন্তু আমেরিকা পাশ থেকে সরে দাঁড়াতেই সেই আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে দেখা যাচ্ছে যেন। কিন্তু কেন? তবে কি আমেরিকার অস্ত্রশক্তিতেই এত বাড়বাড়ন্ত ইজরায়েল। গত কয়েক মাস ধরেই গাজার বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকা। গাজায় সব দিক থেকে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই গাজাকে চাপ দিয়ে আসছে আমেরিকা। তবে সেই কথা কানে তোলেনি ইজরায়েল। এই পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে ইজরায়েল সংঘাতে জড়ালে, ইরানের বদলে রাফাহর রফা করতে বাধ্য হয়েছিল আমেরিকা। তার পরেও রাফাহ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত বারবার পুনর্বিবেচনা করার জন্য নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছেন বাইডেন। কিন্তু সে কথায় কান দেয়নি ইজরায়েল। এখনও পর্যন্ত শহরের চারপাশে সীমিত অভিযান চালালেও কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেনি ইজরায়েল। এতদিন মুখে বললেও ইজরায়েলকে সব রকম ভাবে অস্ত্র সাহায্য় করে এসেছে আমেরিকা। এবার সেখানেই টান তৈরি করেছে বাইডেনের ঘোষণা।
আরও পড়ুন: হামাস হামলার দায়ে সরলেন ইজরায়েলের গোয়েন্দাপ্রধান, হারের ইঙ্গিত নাকি…
আর তার পরেই ইজরায়েলের বেশ কয়েক জন নেতা-মন্ত্রী আক্রমণের সুর চড়া করেছে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে। ইজরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির ব্যঙ্গ করে বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস জো বাইডেনকে ভালোবাসে। তাই তাঁর এমন সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত ইজরায়েল। তবে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করলেও ইজরায়েলকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত জিনিসপত্র সরবরাহ বন্ধ করছে না আমেরিকা। বাইডেন জানান, আয়রন ডোমের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করবে তারা। তবে অস্ত্র এবং আর্টিলারি শেল সরবরাহ আপাতত ইজরায়েলে বন্ধ রাখবে আমেরিকা। বাইডেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যেভাবে ইজরায়েলের প্রতিটি হামলা গাজার জনসংখ্যার জন্য ঝুঁকির কারঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগে আমেরিকা। সেই জায়গাটা বাঁচাতেই তাঁর এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তকে খুশিমনে মেনে নেননি বহু রিপাবলিকানই। সামনেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার ভোটে সত্যিই কি কোনও প্রভাব ফেলতে চলেছে? এদিকে আমেরিকার অস্ত্র জোগান বন্ধ হওয়ার পরে কি টনক নড়বে ইজরায়েলের। সত্যিই কি নিজেদের অবস্থান থেকে সরবে নেতানিয়াহু সেনা? ইজরায়েলি আগ্রাসনের হাত থেকে বাঁচবে শহর রাফাহ? প্রশ্ন থেকেই যায়।