নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ছক? দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা পেরিয়ে কীভাবে মালা হাতে পৌঁছে গেলেন যুবক?

Narendra Modi security: এই গাড়িকে চারদিক দিয়ে ঘিরে একে-৪৭ চালালেও যাত্রী এবং গাড়ির কোনও ক্ষতিসাধন হবে না। এই গাড়ির কাঁচ প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বা ৪ ইঞ্চি পুরু

জন সমাবেশের দিকে এগিয়ে আসছেন রাজীব গান্ধী। মানুষের উৎসাহের মাঝে মিশে যাচ্ছেন দীর্ঘদেহী মানুষটি। স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের হাত নাড়া, ছুঁতে চাওয়ার আকাঙ্খার মাঝে ছুটে এসে প্রাণ করলেন একজন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। রক্তে দলা পাকানো পড়ে আছেন রাজীব গান্ধী, চারদিকে টুকরো মাংস, রক্ত। নিরাপত্তাকে ধূলিস্যাৎ করে আততায়ী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন প্রধানমন্ত্রী। সেই ঘটনারই যেন আভাস মিলল জাতীয় যুব উৎসবে। কর্নাটকের হুবলিতে জাতীয় যুব উৎসবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচ্চস্তরের নিরাপত্তা ভেঙে কাছে চলে আসেন এক যুবক! হাতে মালা। ওই উৎসব উপলক্ষ্যে একটি রোড শোয়ে গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন মোদি। কড়া নিরাপত্তায় সবসময়ই ঘেরা থাকেন মোদি। কিন্তু এবার সেই চক্রব্যূহ ভেদ করেই প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছে চলে আসেন ওই যুবক। কীভাবে সম্ভব? নিরাপত্তায় এত বড় খামতি। তাহলে কি রাজীব গান্ধীর মতোই নরেন্দ্র মোদিকেও খুনের ছক কষছে দুষ্কৃতীরা?

মোট পাঁচটি বলয় থাকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায়। প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয় আরও একটি। সেই নিরাপত্তার ফাঁক গলে কীভাবে ঢুকে পড়লেন সাধারণ এই যুবক? তদন্ত চলছে। রাজীব গান্ধীর ঘটনার পরেই নিরাপত্তায় বিন্দুমাত্র ফাঁক থাকে না প্রধানমন্ত্রীর মতো হাই প্রোফাইল মানুষের ক্ষেত্রে। তবুও কীভাবে হুবলিতে এই যুবকের ক্ষেত্রে এত বড় গাফিলতি ঘটে ফেল? অপ্রীতিকর কিছু অবশ্য ঘটেনি। তবু, দক্ষিণ ভারত, মালা সব মিলেই ভারতবর্ষের সেই কালো অধ্যায় যেন ফিরে আসছে। ওই যুবক প্রধানমন্ত্রীর হাতে মালা তুলে দেওয়ার মুহূর্তেই ওই যুবককে সরিয়ে দেন নিরাপত্তা আধিকারিকরা।

আরও পড়ুন- বিশ্বে মাত্র ১৫টি আছে! প্রধানমন্ত্রীর এই গাড়ি সর্বংসহা, কেন এই বাহনই বেছেছেন মোদি

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাড়াবাড়ি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আগেও মত প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি থেকে শুরু করে তাঁর নিরাপত্তার ধাপ, সবটাই প্রযুক্তিতে মোড়া। প্রধানমন্ত্রীর জন্য সম্প্রতিই আনা হয়েছে বিশেষ ‘মার্সিডিজ় মেব্যাক এস৬৫০’ গাড়িটি। মেব্যাক গাড়ি নাকি প্রাচীন কালের দুর্ভেদ্য দুর্গ, বোঝা দায়। এই গাড়িটিতে আছে VR10 লেবেলের নিরাপত্তা গার্ড যা এই মুহূর্তে বিশ্বের সব থেকে উচ্চতর নিরাপত্তা প্রদানকারী গার্ড। এই গার্ড ব্যবহার করা হয় গাড়ির কাঁচে এবং গাড়ির বডিতে। কনভয়ের ওপর হঠাৎ আক্রমণ হলে, এই গার্ড গাড়ির দিকে ধেয়ে আসা বুলেটের থেকে রক্ষা করে গাড়ির ভিতরের যাত্রীকে। শুধু বুলেট নয়, AK47 থেকে ধেয়ে আসা অটোমেটিক বুলেটের সামনেও এই গার্ড থাকলে নিশ্চিন্ত। এই গাড়িকে চারদিক দিয়ে ঘিরে একে-৪৭ চালালেও যাত্রী এবং গাড়ির কোনও ক্ষতিসাধন হবে না। এই গাড়ির কাঁচ প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বা ৪ ইঞ্চি পুরু যা তৈরি পলিকার্বনেট দিয়ে।

এছাড়াও এই গাড়িটি ২ মিটার দূরত্ব থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত TNT বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ সামলে নিতে পারে অনায়াসে। এই গাড়ির নীচের দিকের কাঠামোও এতটাই শক্তিশালী যে গাড়ির নীচে কোনও বিস্ফোরণ হলেও গাড়িটি অনায়াসে সহ্য করে নিতে পারে। গাড়িটির ভিতরে রয়েছে একটি অক্সিজেন ট্যাঙ্ক যা যে কোনও রকম গ্যাস হামলার হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে ভিতরের যাত্রীদের। এই অক্সিজেন ট্যাঙ্কটির শরীর এমনই ধাতব প্রলেপ দিয়ে তৈরি যার গায়ে বুলেট দিয়ে ছিদ্র করা হলেও ধাতব প্রলেপটি সেই ছিদ্র নিজে নিজেই বুজিয়ে দেয় সেকেন্ডে। এই গাড়িটির চাকা এমনভাবেই তৈরি যে পাংচার হলেও গাড়িটি অনায়াসে ৩০ কিলোমিটার চলতে পারে পাংচার হওয়া চাকা সমেত।

আরও পড়ুন- ২০২৪ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি বনাম কে? এখন থেকেই উত্তর খোঁজার চেষ্টায় বিজেপি বিরোধীরা

বৃহস্পতিবার হুবলিতে প্রধানমন্ত্রী যে গাড়িতে চেপে জনতার অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন, তা অবশ্য মেব্যাক ছিল না, ছিল টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার। নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তায় এই মুহূর্তে পাঁচটি আলাদা আলাদা বলয় রয়েছে। প্রথম বলয় প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের বৃত্ত। এই বলয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’। এসপিজি দেশে কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই নিরাপত্তা জোগায়। দ্বিতীয় বলয়ের ভার প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের উপর। প্রধানমন্ত্রী মোদির নিরাপত্তা বলয়ের তৃতীয় বৃত্তের দায়িত্ব সামলান ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’-এর কমান্ডোরা।

নিরাপত্তার চতুর্থ ধাপে থাকেন নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নিয়োজিত বিশেষ কর্মীরা। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গেই থাকেন প্রধানমন্ত্রী যে রাজ্যে সফরে যাচ্ছেন সেই রাজ্যের নিরাপত্তা আধিকারিকরা। পঞ্চম এবং শেষ বলয়ে থাকে গোয়েন্দা কুকুর, কমান্ডো ও পুলিশের গাড়ি। সেখানেই থাকে জ্যামার গাড়িও। সব ক’টিতেই বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রও রাখা থাকে।

প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে থাকে সাধারণত ১২ টির বেশিই গাড়ি থাকে। থাকে ডামি গাড়িও, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নিজে যে গাড়িতে চড়েন হুবহু তেমনই দেখতে আরও দু’টি গাড়ি। প্রতিটি গাড়ির উপর সর্বক্ষণ কড়া নজর রাখেন এনএসজি এবং এসপিজির ‘শার্প শুটার’রা। বোমা নিরোধক গাড়ি, মার্সেডিজ়ের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সও থাকে কনভয়ে। এই বিশাল নিরাপত্তার খরচের বহরও বিপুল। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৈনিক নিরাপত্তায় সরকারের ভাঁড়ার থেকে প্রতিদিন প্রায় দু’কোটি টাকা ব্যয় হয়।

 

More Articles