মাথা কেটে দেহ থেকে ছেঁড়া হল চামড়া! পাকিস্তানের হিন্দু মহিলাকে যে ভাবে খুন করা হয়েছে
Pkaistan Hindu woman beheaded : নৃশংস এই খুনের ঘটনা সেই বিতর্ক, অভিযোগকে ফের একবার সামনে নিয়ে এল। সেইসঙ্গে শিউরে উঠলেন সবাই।
২০২২ সাল দেখেছে শ্রদ্ধা ওয়ালকরের হত্যাকাণ্ড। তাঁর প্রেমিক আফতাব পুনেওয়ালা শ্রদ্ধাকে গলা টিপে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দেয়। চলতি বছর দেখেছে কেরালার নরবলির মতো ঘটনা। বড়লোক হওয়ার জন্য স্রেফ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে দুই নিরীহ মহিলাকে খুন, তারপর মাংস কেটে খাওয়া – সবারই গা শিউরে উঠেছিল। ২০২২ সাল দেখেছে বাংলাদেশের পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। প্রতিবেশী এক যুবক তাঁকে খুন করে, টুকরো টুকরো করে কেটে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়।
ই বীভৎসতা পেরিয়ে গোটা একটা বছর শেষ হওয়ার মুখে। হাতেগোনা কয়েকটা দিন পরেই নতুন বছর ২০২৩। তার আগে ফের একবার বীভৎসতার সাক্ষী থাকল সংবাদমাধ্যম। এক মহিলা, ঘর সংসার সামলে ছেলেমেয়েদের মানুষ করাই ছিল তাঁর একমাত্র কাজ। হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। তারপর খেতের মধ্যে হঠাৎই সেই নিরীহ মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এটুকুতে বোধহয় আসল পরিস্থিতি সেভাবে বোঝানো গেল না। গ্রামের মানুষরা দেখেন, দেহটির ধড় থেকে কেউ এক কোপে মাথাটি কেটে নিয়েছে। দেহের পাশেই বসে রয়েছে মাথাটি। একইভাবে মহিলার স্তনও কেটে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মাথা এবং দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া ছিঁড়ে আলাদা করে নেওয়ায় হয়েছে! ঘটনাস্থল? পাকিস্তান। উপরন্তু, ওই মহিলা সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু ছিলেন!
শেষ দুটো তথ্যই বিতর্ক ও প্রতিবাদের ঝড় আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই নিপীড়ন নিয়ে ভারতের বিভিন্ন সংগঠনের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল। তাদের দাবি ছিল, ওয়াঘার ওপারে হিন্দুদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করা হচ্ছে। বলপূর্বক ধর্মান্তরণ করা হচ্ছে, এমনকী মহিলাদের অপহরণের অভিযোগও তোলা হচ্ছিল। ২৮ ডিসেম্বর নৃশংস এই খুনের ঘটনা সেই বিতর্ক, অভিযোগকে ফের একবার সামনে নিয়ে এল। সেইসঙ্গে শিউরে উঠলেন সবাই। এভাবেও, এতটা নৃশংসভাবেও খুন সম্ভব?
ঠিক কী হয়েছিল? পাকিস্তানের সিনঝোরো শহর সংলগ্ন এলাকায় বহুদিন ধরেই বসবাস করতেন দয়া ভেল। বয়স ৪০। চার সন্তানকে নিয়ে কোনওরকমে চলছিল সংসার। দয়া ভেলের স্বামী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। এলাকার কারও সঙ্গে তাঁর কোনও শত্রুতা, সম্পত্তিগত বিবাদ বা অন্য কোনও ঘটনা ছিল কিনা, তা নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৭ ডিসেম্বরে। মঙ্গলবার কোনও একটি কাজে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন দয়া ভেল। সেই যে বেরলেন বাড়ি থেকে, আর ফিরলেন না। সিনঝোরোর কাছেই একটি চাষের জমি থেকে তিনি নিখোঁজ হন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু কারা করল এমন ঘটনা? হঠাৎ নিরুদ্দেশই বা হবেন কেন বছর চল্লিশের দয়া ভেল? পুলিশের কাছে খবর চলে যায়। সেইসঙ্গে এলাকাবাসীরাও তটস্থ থাকে। মহিলার চার সন্তানের মনে শুরু হয় কু ডাকা। হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন তাঁদের মা?
পরদিন, ২৮ ডিসেম্বর এলাকারই এক সর্ষে খেতে ভিড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা। একটা সময় এই সর্ষে খেতই অনেক রোম্যান্টিক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এবার সেই প্রেমের হাওয়া আর নেই। বদলে যে দৃশ্য সামনে এল, তা দেখে স্থম্বিত হয়ে যান সবাই। কেউ কেউ সেই দৃশ্য দেখার সাহস করে উঠতে পারলেন না। পেটের ভাত গুলিয়ে উঠল অনেকের। এমন হিংস্র কাজ করতে পারে মানুষ?
Dated 28/12/22
— Jiyala Amar lal Bheel (@JiyalaAmarlal) December 29, 2022
40-year-old Daya Bheel suddenly disappeared from agri field yesterday near Sinjhoro.Her dead body was found in a very bad condition in mustard field.Her head was separated from the body and the flesh of the whole head had been cut off by the beasts.
1/3@KeshooBai pic.twitter.com/Q9Ulm3Hj5e
সিনঝোরোর সেই সর্ষে খেতের মধ্যেই পড়েছিল দয়া ভেলের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। অবশ্য দেহের সেভাবে কিছুই ছিল না। মাথা ধড় থেকে আলাদা করা, ক্ষতবিক্ষত শরীর যে নৃশংস অত্যাচারের শিকার বোঝা যাচ্ছিল। সেইসঙ্গে দু’টি স্তনও কেটে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে নৃশংস দৃশ্য হল, মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া ছিঁড়ে খুলে নেওয়া হয়েছে! খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হইচই শুরু হয়ে যায়। পুলিস ইতিমধ্যেই দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির সেনেটর কৃষ্ণা কুমারী তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে যান।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার খবর সামনে আসতেই শুরু হয়ে যায় তরজা। বিজেপি তো বটেই, অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী দলগুলি বারবার পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরে। দয়া ভেলের হত্যাকাণ্ডের পর ফের সেই দাবির কথা সামনে এনেছে তারা। কৃষ্ণা কুমারী পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু মহিলা সেনেটর। তাই তাঁর কাছেও বারবার সুবিচারের দাবি তোলা হচ্ছে।
অবশ্য বিশ্বের নিরিখে দেখলে অনেক জায়গাতেই সংখ্যালঘু নিধনের ঘটনা উঠে আসে। কেবল ধর্মীয় ভিত্তিতে নয়, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ সমস্ত সংখ্যালঘুরাই বারবার অত্যাচারের শিকার। সেই নৃশংস, ঘৃণ্য ইতিহাস যে আজও অব্যাহতও, পাকিস্তানের এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল।