১% ঘটে থাকলেও ১০০% লজ্জার! সন্দেশখালি মামলায় যেভাবে শাসকদলকেই দুষল হাইকোর্ট

Sandeshkhali Case: হলফনামার এক শতাংশ সত্যি হলেও তা ভয়ানক রকমের লজ্জার বলে বক্তব্য হাইকোর্টের। এই ঘটনার একশো শতাংশ দায় বর্তায় গোটা জেলার প্রশাসন ও শাসকদলের উপরেই।

ভোটের মুখে মুখে সন্দেশখালির ঘটনা যথেষ্ট চাপে ফেলেছিল শাসকদলকে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে বাধ্য় হন গ্রামের মেয়ে-বউরা। সেই প্রতিবাদ-আন্দোলনের ঢেউ পৌঁছয় অনেক দূর। একে একে শেখ শাহজাহানের সঙ্গী উত্তম-শিবু এবং শেষপর্যন্ত গ্রেফতার হয় শেখ শাহাজাহান। সেই মামলা যায় সিবিআইয়ের হাতে। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি মামলায় হাইকোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল তৃণমূল সরকারকে।

সামনেই লোকসভা ভোট। একাধিক দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই বিপাকে এ রাজ্যের শাসক দল। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া যেন এই সন্দেশখালি মামলা। গোড়া থেকেই সন্দেশখালির ঘটনাকে পুরোদস্তুর তৃণমূলের বিরুদ্ধে চালিত করার চেষ্টা করতে কসুর করেনি দল। কখনও তাকে তুলনা করা হয়েছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের সঙ্গে। এমনকী সেই সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে উঠে আসা প্রতিবাদকারী রেখা পাত্রকেই আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছে বিজেপি। দিনের পর দিন এলাকার মেয়ে-বউদের উপর যে নিগ্রহ-নির্যাতন চালিয়ে এসেছে শেখ শাহজাহান ও তার দলবল, তা শুনে শিউরে উঠেছে মহিলা কমিশন থেকে শুরু করে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। জমি দখল থেকে শুরু করে বাড়ির মেয়েদেক সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করলে বাড়ির পুরুষ সদস্যদের দেদার মার, কী করেন শাহজাহানরা।

আরও পড়ুন: চার বছরে ৪০টিরও বেশি মামলা! অবাক করবে শেখ শাহজাহানের ‘অপরাধে’র ফিরিস্তি

একাধিক অভিযোগ রয়েছে শেখ শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। জোর করে তোলাবাজি, চাঁদা চেয়ে উৎপাত থেকে শুরু করে জমি দখল, গ্রামের মেয়েদের উপর যৌননির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগের কথা হলফনামা দিয়ে আদালতে পেশ করা হয়েছে। তার শুনানিতে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগ্নানামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। রাজ্য সরকার অভিযুক্তকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়। 

সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর নির্যাতন হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। বেঞ্চ জানিয়েছে, এই হলফনামার এক শতাংশ সত্যি হলেও তা ভয়ানক রকমের লজ্জার। পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ রাজ্য বলে দাবি করা হয়। যদি ওই হলফনামার সামান্যতম অংশও সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের সেই সুনাম। একই সঙ্গে বেঞ্চের পর্যবেক্ষন, এই ঘটনার একশো শতাংশ দায় বর্তায় গোটা জেলার প্রশাসন ও শাসকদলের উপরেই। শেখ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সংক্রান্ত রিপোর্টে জমি দখল করার অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। তা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু যেভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে তা আইনানুগ নয়। একাধিক মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন সন্দেশখালিতে। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ যেভাবে নথিভুক্ত করেছে, তা উপযুক্তভাবে করা হয়নি বলেও এদিন প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট।

প্রায় দু'মাস গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার হয় শেখ শাহাজাহান। স্থানীয় বাসিন্দারা বহু দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল, প্রশাসন জানে কোথায় লুকিয়ে রয়েছে সন্দেশখালির ত্রাস। আদালত সময় বেঁধে দিতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে শেখ শাহজাহান। শেখ শাহাজাহানের গ্রেফতারিতে কেন দেরি হল, তা নিয়ে জোর সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। এদিন হাইকোর্টে শেখ শাহাজাহানের আইনজীবীকেও যথেষ্ট ভর্ৎসনা করেছে বেঞ্চ। চোখ বন্ধ রাখলেই যে প্রলয় বন্ধ হয় না, সে কথা এদিন আরও একবার মনে করিয়ে দেয় বিচারপতিদের বেঞ্চ। সন্দেশখালির এই ঘটনার সঙ্গে প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকরা যুক্ত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক বলে আদালতে দাবি জানিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। তার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি যদি একই সঙ্গে শেখ শাজাহান এবং গ্রামবাসীদের হয়ে সওয়াল করেন তাহলে এটা ধরে নিতে হবে যে এই গ্রামবাসীদের সাজিয়ে এবং শিখিয়ে আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন:CID-র হাতে শাহজাহান-মামলার ভার , কোন পথে এগোবে সন্দেশখালি-তদন্ত?

বৃহস্পতিবার শেখ শাজাহানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দায়ের হওয়া এফআইআর এবং দাখিল করা চার্জশিট তলব করল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। মুখবন্ধ খামে সমস্ত এফআইআর এবং চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। রাজ্য অবশ্য তার জন্য বেশ খানিকটা সময় চেয়ে নিয়েছে আদালতের কাছ থেকে। সব মিলিয়ে শেখ শাহাজাহান ও সন্দেশখালি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ভালোই অস্বস্তির মুখে পড়েছে বাংলার শাসকদল। ভোটের আর দেরি নেই। সন্দেশখালির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বাড়ানোর মতো ঘটনাকে তুলে আনার যতই চেষ্টা করুক না কেন শাসকদল, ভোটের ঠিক আগে আগে হাইকোর্টের এই সন্দেশখালি মন্তব্যে যে ভালো মতোই মুখ পুড়েছে তৃণমূল সরকারের, তা এককথায় স্পষ্ট।

More Articles