নেতানিয়াহুর হুমকির পরেই ইরানে জারি রেড অ্যালার্ট! কোন দিকে যাচ্ছে ইজরায়েল-ইরান অশান্তি?

Israel Iran Conflict: ইতিমধ্যেই ইরানে জারি হয়ে রেড অ্যালার্ট। বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, ইজরায়েলের ইরানের উপর ক্ষুদ্রতম আগ্রাসনও বিরাট এবং ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

ফের আরও একটা বড় যুদ্ধশুরুর মুখে বিশ্ব। বছর খানেক আগে ইউক্রেনের সঙ্গে হঠাৎ করেই যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। সেই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। এখনও মাঝেমধ্যেই দফায় দফায় ইউক্রেনে আঘাত হানে রুশ সেনা। থামেনি মাস ছয়েক আগে শুরু হওয়া ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধও। মধ্যিখান থেকে শেষ হয়ে গিয়েছে গাজা শহর। প্রায় ৩৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ৬ মাসে। এবার ইরান নতুন করে সংঘাতে জড়িয়েছে ইজরায়েলের সঙ্গে। ইরানের সঙ্গে রয়েছে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের জঙ্গিগোষ্ঠী হাউথি এবং প্রচ্ছন্ন ভাবে ইন্ধন জোগাচ্ছে প্যালেস্টাইনের জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস।

গত শনিবার মধ্যরাতে ইজরায়েলে প্রায় তিনশো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তার পর থেকে চুপচাপ রয়েছে ইজরায়েল। কিন্তু রেকর্ড বলছে, চুপ করে থাকার বান্দা নয় তারা। ইজরায়েলের ওয়ার ক্যাবিনেট দফায় দফায় বৈঠক করেছে গত কয়েকদিনে। ইরানকে জবাব দিতে কোন পর্যায়ে যেতে চলেছে ইজরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার, তা বুঝে উঠতে পারছে না কেউ-ই। কারণ যতদিন যাচ্ছে, ইজরায়েলের আগ্রাসন ততই বাড়ছে। ইজরায়েলের বর্তমান সরকার এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে আগ্রাসী সরকার।

আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর সাইবার হামলা থেকে পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস! যে যে পথে ইরানকে জবাব দিতে পারে ইজরায়েল

হামাসের হামলার পর একদিনের মাথায় গাজায় যুদ্ধঘোষণা করেছিল ইজরায়েল। তেমন কিছু যাতে ইরানের ক্ষেত্রে না করে ইজরায়েল, তার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে বারবার সাবধান করেছে আমেরিকা। ইরানও জানিয়েছে, ইজরায়েল হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিলে যুদ্ধের পথে হাঁটবে না তারাও। তবে ইজরায়েল সেই পথ ধরবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ বুঝবারই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশ কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে, সে সিদ্ধান্ত তাদের। এ ব্যাপারে অন্য কোনও দেশের কোনও পরামর্শ শুনবে না ইজরায়েল। বুধবারই ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মান বিদেশমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকের সঙ্গে দেখা করেন নেতানিয়াহু। ইজরায়েল যাতে ফের কোনও ভয়াবহ যুদ্ধে না জড়ায়, সে বিষয়ে কথা বলতেই ইজরায়েলে আসেন তাঁরা। তবে সেই বৈঠক কাজে এসেছে বলে মনে হয় না। কারণ সেই বৈঠকের পরেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, ইজরায়েল রাষ্ট্র নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।

'Israel will make its 'own decisions' on responding to Iran', asserts Netanyahu ignoring West pressure

ইরানের উপর কোন কোন ভাবে হামলা করতে পারে ইজরায়েল, সেই ভাবনায় উদ্বেগে বিশ্ব। এমনই এক সময়ে ইজরায়েলের উত্তরে নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সেই হামলায় অন্তত ১৪ জন ইজরায়েলি সেনা জখম হয়। যাঁদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলে একের পর এক হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লা। যবে থেকে হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে নেতানিয়াহু সেনা, তার পর থেকেই ইজরায়েলে হামলার সংখ্যাও বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। বুধবার ইজরায়েলের আরব আল- আরামশির বেদুইন গ্রামে চলে হামলাটি।

যদিও গত শনিবার ইরানের হামলা তেমন ক্ষতি করতে পারেনি ইজরায়েলের। ইরানের ছোড়া সমস্ত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রই আকাশেই ধ্বংস করেছে ইজরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলি। ওই হামলায় একজন জখম হয়, আর ইজরায়েলি সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়। তবে সেই হামলার বদলা যে ইজরায়েল নেওয়ার জন্য পুরোমাত্রায় প্রস্তুত, তা বুধবারই বুঝিয়ে দিয়েছে ইজরায়েল।

আরও পড়ুন: ইরানকে ‘সবক’ শেখাতে কতদূর যাবে ইজরায়েল? ভারতকেও ভুগতে হবে ফল?

ইতিমধ্যেই ইরানে জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট। বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, ইজরায়েলের ইরানের উপর ক্ষুদ্রতম আগ্রাসনও বিরাট এবং ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। গোটা বিশ্ব ইজরায়েলের উপর ইরানের এই হামলার নিন্দা করলেও হামাস কার্যত ইরানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইজরায়েলের এটা প্রাপ্য ছিল বলেই একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন হামাস। সব মিলিয়ে ইজরায়েলের হুঁশিয়ারি এবং ইরানের পাল্টা হুঁশিয়ারি মিলে নয়া উদ্বেগের সৃষ্ট হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে। ফের নতুন করে আরও একটা যুদ্ধ লেগে যাবে বিশ্বে। যুদ্ধ মানেই হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু আর মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ইউক্রেন থেকে গাজা, কোথাওই যুদ্ধ কোনও সমাধানসূত্র খুঁজে দিতে পারেনি। শুধু অসংখ্য মানুষকে গৃহহীন, স্বজনহীন, বান্ধবহীন করেছে। কার্যত সেই যুদ্ধের বিরোধিতা করছে বিশ্বের সব ক'টি সুস্থ ভাবনাচিন্তার দেশই। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জ হোক বা, অন্যান্য দেশের মধ্যস্থতা- কোনও কিছুই কোনও যুদ্ধকে রুখে দিতে পারেনি। ইজরায়েল-ইরানের ক্ষেত্রে কি তা পারবে? থাকছে প্রশ্ন।

More Articles