সলমান খানকে খুনের চেষ্টা! ভাইজানের বাড়িতে ৫ রাউন্ড গুলি চালাল কারা?
Salman Khan Death Threat: রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ সলমন খানের বাসভবনের বাইরে হেলমেট পরা দুই বাইক আরোহী পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায়!
ভাইজানকে খুনের চেষ্টা! বলিউডের অন্যতম বিখ্যাত তারকা সলমান খানকে হত্যার চেষ্টায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে বলিউডে, দেশে। হঠকারিতায় চালানো গুলি নয়, দিন পনেরো ধরে সলমানের বাড়িতে নজর রেখে পরিকল্পনা কষেই নাকি এই হত্যার চেষ্টা। পুলিশ বলছে, বান্দ্রায় অভিনেতা সলমান খানের বাড়িতে গুলি চালানোর আগে সন্দেহভাজন দুই বন্দুকধারী ১৫ দিন ধরে জন্য পানভেলে ছিল। সলমান খানের একটি ফার্মহাউজ রয়েছে এই পানভেলে। রবিবার, গুলি চালানোর ঠিক আগে সিসিটিভি ফুটেজে টুপি এবং টি-শার্ট পরা দু'জনকে সলমান খানের বাড়ির আশেপাশে পিঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে আনাগোনা করতেও দেখা গেছে।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, কানাডায় কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলের একজনই এই হত্যার ষড়যন্ত্র কষেছিল। এই লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলবলই জনপ্রিয় পাঞ্জাবি র্যাপার-গায়ক সিধু মুসাওয়ালাকে গুলি করে হত্যা করেছিল।
দিন কয়েক আগেই ইদ পেরিয়েছে। প্রতিবারের মতোই ভাইজান সলমান তাঁর অনুরাগীদের অভিবাদন জানানোর উদ্দেশ্যে বারান্দায় এসে হাতও নেড়েছেন। বাড়ির সামনে তখন জমজমাট ভিড়। সেইদিনই কেন তাহলে হামলা করল না দুষ্কৃতীরা? পুলিশ বলছে, সম্ভবত সলমানকে ভয় দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য। ইদের দিনে অভিনেতার বাড়ির নীচে যে ভিড় ছিল তাতে হয়তো এই দুষ্কৃতীরাও ছিল কিন্তু পুলিশি ব্যবস্থাপনার কারণে গুলি চালাতে পারেনি।
আরও পড়ুন- আমজনতার রাগ, বেদনাকে জিতিয়ে দিলেন শাহরুখ! কেন দেখতেই হবে জওয়ান?
রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ সলমন খানের বাসভবনের বাইরে হেলমেট পরা দুই বাইক আরোহী পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায়! সলমানের ব্যালকনিতেও গুলির খোল পাওয়া গেছে। সিটি ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য নানা জিনিস খতিয়ে দেখছে। তবে পুলিশের ধারণা দেশি পিস্তল থেকেই গুলি চলেছে। বান্দ্রার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে সলমান খানের বাড়ির বাইরে ভোরবেলা এই এলোপাথাড়ি গুলি কি সত্যিই অভিনেতাকে হত্যার জন্য? নাকি ভয় দেখানো? যেটাই হোক না কেন, এর কারণ কী?
লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নজরে বহুকাল ধরেই রয়েছেন সলমান। ১৯৯৮ সালে সলমানের কুখ্যাত 'কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের' ঘটনা থেকেই গোটাটার সূত্রপাত।বিষ্ণোই সম্প্রদায় এই ঘটনায় আহত হয়। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে কালো হরিণ পবিত্র। ২০১৮ সালে, আদালতেই লরেন্স বিষ্ণোই বলেছিলেন, "আমরা যোধপুরে সালমান খানকে হত্যা করব।"
২০২২ সালের নভেম্বর থেকে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই এবং গোল্ডি ব্রার অভিনেতাকে হুমকি দিয়ে চলেছে। সেই থেকেই তাই Y-প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয় ভাইজানকে। গত বছর মুম্বই পুলিশের অনুরোধেই সলমান ব্যক্তিগত অস্ত্র রাখার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই ছাড়পত্র পেয়েও যান তিনি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের আবারও হুমকি দেয় অভিনেতাকে। পঞ্জাবি গায়ক অভিনেতা গিপ্পি গ্রেওয়ালকে উদ্দেশ্য করে একটি ফেসবুক পোস্টে এই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বিষ্ণোই গ্যাং গিপ্পি গ্রেওয়ালের কানাডার বাসভবনের বাইরে গুলি চালানোর দায় স্বীকার করে।
সলমানের উপর এই হামলার নেপথ্যে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ভাগ্নে আনমোল রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই হামলার পরিকল্পনার জন্য আনমোল কানাডার রোহিত গোদারা নামে একজন গ্যাংস্টারকে ব্যবহার করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। রোহিত গোদারা আবার ডাকাতি, ছিনতাই ও অবৈধ অস্ত্র রাখার মতো মামলার আসামি কালুসহ দুই যুবককে দলে নেয়। এই কালু তিহার জেলে রোহিত গোদারার গ্যাংয়ের সংস্পর্শে আসে। অনমোল বিষ্ণোই একটি অনলাইন পোস্টে এই গুলি চালানোর দায় স্বীকার করেছে। পুলিশ পর্তুগালে আনমোল বিষ্ণোইয়ের পোস্টের ভিপিএন ট্র্যাক করে।
আরও পড়ুন- হিন্দুরাষ্ট্রে ঠাঁই নেই সকলের? কেন রাম মন্দিরে আমন্ত্রিত নন শাহরুখ-সলমান-আমির-দীপিকা-করণ?
আনমোল বিষ্ণোই ভারতে 'ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল', বাস বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আনমোল তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন, গুলি চালানো ইচ্ছাকৃত, উদ্দেশ্য ছিল অভিনেতাকে বার্তা পাঠানো। "আমরা শান্তি চাই। নিপীড়নের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র যদি যুদ্ধ হয়, তবে তা হোক। সালমান খান, আমরা আপনাকে শুধু ট্রেলার দেখিয়েছি যাতে আপনি আমাদের শক্তির মাত্রা বুঝতে পারেন এবং ভুলেও শক্তি পরীক্ষা না করেন। এটিই প্রথম এবং শেষ সতর্কবার্তা।" পোস্টে লিখেছেন গ্যাংস্টার আনমোল।
#SalmanKhan𓃵 .#Lawrence Bishnoi..#Anmol Bishnoi pic.twitter.com/6itOl3KSCS
— Mahender Singh Manral (@mahendermanral) April 14, 2024
জেলে থাকা রোহিত গোদারা এবং বিষ্ণোইয়ের সহযোগী হৃত্বিক বক্সারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বক্সারের বিরুদ্ধে জয়পুরের থানায় আটটি, হনুমানগড়ে তিনটি এবং বিকানেরের একটি থানায় মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের ২০ মার্চ নেপাল থেকে বিহার হয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করার সময় রাক্সৌলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে হৃত্বিক বক্সার। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি, জয়পুরের একটি প্রাইভেট ক্লাবে সশস্ত্র আততায়ীরা গুলি চালায়। পরে বক্সার সোশ্যাল মিডিয়ায় এর দায় স্বীকার করে। হৃত্বিক ওই ক্লাব মালিকের কাছে ৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন বলে জানা যায়। সলমানের উপর গুলি চালানো দুই দুষ্কৃতীকে গুজরাত থেকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশের অপরাধ শাখা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দু’জনই বিহারের বাসিন্দা।