সমকামিতা থেকে শবরীমালা, বিতর্কিত রায়ে সবসময়ই নির্ভীক জাস্টিস চন্দ্রচূড়
Justice DY Chandrachud: দেশের শীর্ষ আদালতের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত হয়ে গেল ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নাম, ফিরে দেখা তাঁর কেরিয়ার।
তাঁর হাত ধরেই 'ভবিষ্যতের ভূত'-দের কপাল খুলেছিল। অন্ধকারেও স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছিল ওরা। তাঁর হাতেই নতুন দিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছিল সমকামীদের। তাঁর ছোঁয়ায় সেনাবাহিনীতে বিশেষ সুবিধা পেয়েছিলেন মহিলারা। তিনিই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে মৌলিক অধিকার। সব ক্ষেত্রেই রেখেছেন বেনজির ছাপ।বলা হয় ভারতের বিচারবিভাগীয় ইতিহাসে সর্বাধিক বর্ণময় চরিত্রের নাম ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় (Justice DY Chandrachud)। ১৭ অক্টোবর, দেশীয় রাজনীতির অন্যতম ভোটচর্চার মধ্যেই দেশের শীর্ষ আদালতের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে, দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুর (President of India Draupadi Murmu) হাত ধরে চূড়ান্ত হয়েছিল তাঁর নামই। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের (Chief Justice of India UU Lalit) উত্তরসূরি হিসেবে বিচারের পীঠস্থানের সেরা আসনে এবার বসছেন তিনিই।
কিন্তু কে এই বিচারপতি? কী তাঁর পরিচয়? সমস্ত কিছু ছাড়িয়ে তাঁর প্রধান বিচারপতির আগের জীবনও ঘটনার ঘনঘটায় বিকশিত। রয়েছে একাধিক বিচার, পর্যবেক্ষণের মৌলিক ইতিহাস। যা বারবার বদলে দিয়েছে দেশ, তথা বিশ্বের বিচারের বাণীকে। কেন তিনি মহান বিচারপতি? কেন তিনিই সেরা? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেব আমরা।
আরও পড়ুন: অরুণাভ-রা গর্জান, অভিজিৎ বর্ষান || যে ভাবে বারবার দুর্বলের পক্ষ নিলেন…
জন্ম, শিক্ষা এবং পরিবার
ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালের ১১ নভেম্বর। দেশের শীর্ষ আদালতের ১৬তম এবং শীর্ষ আদালতে সর্বাধিক সময় প্রধান বিচারপতির পদে আসীন যশোবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড় (Justice YV Chandrachud) ও সঙ্গীতকার প্রভা চন্দ্রচূড়ের ঘরে জন্ম নেন তিনি। বর্তমানের মুম্বই, তৎকালীন বম্বেয় ছিল তাঁদের বাস।
এরপর ছোটবেলা থেকে মেধাবী ধনঞ্জয় ভর্তি হন ক্যাথিড্রাল এবং জন ক্যানন স্কুলে। পড়াশুনার পাঠ খানিকটা সম্পুর্ণ করে তাঁকে যেতে হয় দিল্লি। সেখানে সেন্ট কলম্বিয়া স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭৯ নাগাদ দিল্লির স্টিফেন কলেজ। সেখান থেকে ১৯৮২ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়া। বিখ্যাত 'ইনলাক বৃত্তি' নিয়ে এরপর হার্ভার্ড আইন কলেজ (Harvard Law College) । স্নাতকোত্তরের পর বিদেশেই আইনে ডক্টরেট। ১৯৮৬ সালে সম্পন্ন করলেন প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা।
কর্মজীবনে বিচারপতি চন্দ্রচূড়
১৯৮২ সাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠের সময়ই দেশের অন্যতম বিচারপতির পুত্রের কাছে আসে একাধিক কাজের সুযোগ। হার্ভার্ড-পর্ব শেষ করতেই ফলি নরিম্যানের (Folli Nariman) সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসেবে শুরু করলেন আইনি কাজ। তখন থেকেই নানা বিষয়ের মাধ্যমে নিজের মেধার প্রকাশ ঘটাতে থাকেন তিনি। এরপর শীর্ষ আদালত এবং বম্বে হাইকোর্টে (Bombay High Court) আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন এই বিচারপতি।
১৯৯৮ সাল। চন্দ্রচূড়ের জীবনের গতিপথে এল সুবর্ণ সুযোগ। বম্বে হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ওই বছরই দেশের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন চন্দ্রচূড়।
২৯ মার্চ। ২০০০ সাল। বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে বসেন তিনি। এর সঙ্গেই মহারাষ্ট্র জুডিশিয়াল একাডেমির প্রধানের দায়িত্বও পান।
৩১ অক্টোবর, ২০১৩। এলাহাবাদ হাইকোর্টের (Allahabad High Court) প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান বিচারপতি ধনঞ্জয়। একের পর এক রায়ে ফের শিরোনামে আসেন তিনি।
১৩ মে, ২০১৬। দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি। ২০২১ এর ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) কলেজিয়ামের সদস্য হন চন্দ্রচূড়।
১১ অক্টোবর, ২০২২ দেশের ৪৯তম প্রধান বিচারপতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করলেন। নতুন অভিধায় ভূষিত হলেন বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়। ১৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হল তাঁর নাম। আগামী ৮ নভেম্বর অবসর নেবেন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত। ৯ নভেম্বর থেকে নতুন দায়িত্বে কাজ শুরু করবেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
অধ্যাপনায় বিচারপতি চন্দ্রচূড়
মহারাষ্ট্রের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির প্রধান থেকে জাতীয় আইনি পরিষেবা সংস্থার চেয়ারম্যান। প্রশাসনিক পদেও সফল বিচারপতি চন্দ্রচূড়। এর সঙ্গেই একাধিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়ানোর সঙ্গে জড়িত তিনি।
মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমেরিকার ওকলহাম আইন কলেজের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। পড়ান তুলনামূলক সাংবিধানিক আইন। অস্ট্রেলিয়ার ডেইকিনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মেলবোর্ন ল' স্কুল, হার্ভার্ড ল' স্কুল, ইয়ালে ল' স্কুল, দ্য উইলিয়াম রিচার্ডসন স্কুল অফ্ ল, ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই, দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ উইটওয়াটারস্রান্ড-এ লেকচারার হিসেবে পড়িয়েছেন তিনি।
তাঁর বিচারপতি হিসেবে কর্মজীবনে রয়েছে একাধিক উল্লেখযোগ্য রায়। তার মধ্যে অন্যতম রায়গুলি ফিরে দেখা যাক।
'ভবিষ্যতের ভূত'
১৫ মার্চ, ২০১৯। পরিচালক অনীক দত্তের ছবি 'ভবিষ্যতের ভূত' (Bhobissoter Bhoot) নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে ওই ছবি বিভিন্ন জায়গায় চলতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন পরিচালক, প্রযোজক। জোর করে শো বন্ধের অভিযোগ করা হয়। শীর্ষ আদালতে ওঠে এই সংক্রান্ত মামলা। প্রযোজনা সংস্থা ইন্ডিবলি ক্রিয়েটিভ প্রাইভেট লিমিটেড বনাম রাজ্যের সেই মামলায় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয় ওই ছবির পক্ষে। রাজ্যকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ এবং ছবি চালানোর জন্য যুগান্তকারী রায় দেন বিচারপতিরা। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার কথাও সেদিন তুলে ধরেন বিচারপতিরা।
গর্ভপাত এবং বৈবাহিক ধর্ষণ রায়
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২। তিন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি বি এস বোপান্না, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালার বেঞ্চ রায় দেন, অবিবাহিত মহিলারাও ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত (Abortion) করানোর অধিকার পাবেন। আবার স্ত্রীর অসম্মতিতে সহবাস মানে ধর্ষনের সামিল, একথাও বলেন বিচারপতিরা। এখানে তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আদালতের দায়িত্ব পালন মনে করিয়ে দেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য এবং দেশের চিকিৎসা আইনের কথা মাথায় রেখেই এই রায় দেন বিচারপতিরা।
সমকাম-রায়
২০১৮, জানুয়ারি। ৩৭৭ ধারা (377 IPC) বিলোপ এবং ব্যক্তিগত জীবনের সংকট নিয়ে মামলার নিষ্পত্তিতে দেশের শীর্ষ আদালতে কাজ শুরু করেন ৫ সদস্যের বেঞ্চ। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি রহিমান নরিনট্যান, বিচারপতি এ এম খানউইলকার, বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা, বিচারপতি দীপক মিশ্র (Justice Dipak Mishra) ; ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮-এ পাকাপাকি এই ধারার অবসান ঘটান। সমকাম (Homosexuality) বৈধ হয় তাঁদের রায়ে। ২০০৯ সালের দিল্লি হাইকোর্টের রায়, ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম পর্যবেক্ষণ ছাড়িয়ে অবশেষে হাসি ফোটে সমকামীদের (LGBTQIA) মুখে। স্বাধীনতার স্বাদ পান তাঁরা (Gay, Lesbian)।
শবরীমালা রায়
২০১৮। সেপ্টেম্বর। বহু টানাপড়েন আর লড়াইয়ের পর কেরলের শবরীমালা মন্দিরে (Sabarimala Mandir) মহিলা প্রবেশে সম্মতি দেয় দেশের শীর্ষ আদালতের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ। নিজেদের মৌলিক, ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বাদ পান মহিলারা। ভারতীয় ইতিহাসে ওই ঐতিহাসিক রায়ের কারিগর ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি নরিম্যান, বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা। ৪ বিচারপতির সম্মতিতে খুলে যায় নয়া দিগন্ত।
কিন্তু এর পরেও তৈরি হয় বিতর্ক। এই রায়ের ফলে হুমকি পাচ্ছেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, অভিযোগ ওঠে এমনই। ফের এই রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। তবে শবরীমালা মন্দির নিয়ে সেবার নতুন দিকের উন্মোচন করেছিলেন এঁরা।
সেনাবাহিনী এবং মহিলাদের সুযোগ-সংক্রান্ত মামলা
২০২০-২০২১ সাল। ববিতা পুনিয়ার (Babita Puniya) মামলার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত রায় দেয় সেনায় (Indian Army) একাধিক ক্ষেত্রে মহিলা না নেওয়ার চল থাকলেও এবার সেনার শর্ট সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে সমান সুবিধা দিতে হবে মহিলাদেরও। সেখানে মহিলা আধিকারিক বা কর্মী নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ বৈষম্য চলবে না এই সমস্ত ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিক এই রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
নৌবাহিনী-সংক্রান্ত মামলা
এই ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর মতো প্রায় একই অধিকারের কথা বলেন বিচারপতি। অ্যানি নাগার্জার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে, পুরুষ সেইলরদের (Navy) মতো সমান অধিকার পাবেন মহিলারাও।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি
কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা (Me too) সংক্রান্ত একাধিক মামলার রায় দিতে গিয়ে বারবার এর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। পাঞ্জাব সিন্ধ ব্যাঙ্কের এক মহিলা আধিকারিকের করা অভিযোগের (Sexual Harrasment) মামলার রায় দিয়েছিলেন তিনি।
সবার জন্য সমান বিচার
বারবার একাধিক রায়ের ক্ষেত্রে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় স্পষ্ট করেছেন দেশের আইন আর সংবিধানের আসল উদ্দেশ্য। ২৭ এপ্রিল, ২০২১ একটি মামলার রায়ে এক মহিলার প্রতি অবিচার, ধর্ষণ এবং তাঁর শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রের জন্য বিচারের ঘাটতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দেন তিনি। রায়ে বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের ক্ষেত্রে কিছুই যেন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না করে।
নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষা
দেশের ভাবি প্রধান বিচারপতি শুধু বিচারক হিসেবেই নন, একাধিক মামলা এবং সেই মামলার পর্যবেক্ষণ এবং রায়ে বারবার সচেষ্ট হয়েছেন মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার কাজে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে এস পুট্টস্বামী বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের এক মামলায় মানুষের গোপনীয়তা (Privacy) রক্ষা নিয়ে উল্লেখযোগ্য রায় দেন বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং আরও ৯ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার, গোপনীয়তা নিয়ে স্পষ্ট হয় শীর্ষ আদালতের অবস্থান।
এর সঙ্গেই সমকাম রায়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন তিনি, যা মানুষের যৌন ইচ্ছার ক্ষেত্রে অন্যের হস্তক্ষেপের বিপক্ষে। যেখানেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন এই দুই সন্তানের জনক।
জবলপুরের সহকারি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনাম শিবকান্ত শুক্লর মামলায় নিজের বাবা বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়ের দেওয়া রায় টেনে এনে মামলার নিষ্পত্তি করেন তিনি। এখানেও সেই মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার দিকটি গুরুত্ব পায়।
বলার অধিকারে চন্দ্রচূড়-ভূমিকা
স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকের স্বাধীন বক্তব্য পেশের অধিকার খর্ব নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন তিনি। বাংলার 'ভবিষ্যতের ভুত' সিনেমা সংক্রান্ত মামলার নির্দেশেও বিচারপতি নিজের স্বাধীন বক্তব্য রাখার অধিকার নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'স্বাধীন বক্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রকে জোর করে চেপে রাখা যায় না। কোনও প্রভাবেই এই কাজ অবৈধ।'
রোমিলা থাপার বনাম কেন্দ্র সরকারের মামলায় প্রায় একইভাবে নাগরিকের স্বাধীন বক্তব্য প্রকাশের দিকেই সরব হন তিনি। ২০১৮ সালের ভিমা কোঁরেগাও ইস্যুতেও উল্লেখিত হয় বিচারপতির নাম।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন বনাম এম আর বিজয়শঙ্কর মামলায় মিডিয়া ট্রায়ালকে তুলে ধরে নির্বাচন এবং মানুষের বলার অধিকার নিয়ে সরব হন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
করোনা-কালে স্বাধীন বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব নিয়েও বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন একাধিকবার।
ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং চন্দ্রচূড়
একটি আত্মহত্যা এবং সেই মামলায় অভিযুক্ত সংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর (Arnab Goswami) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং শীর্ষ আদালতে মামলা উঠলে, সেই মামলা প্রসঙ্গেও বলার অধিকার খর্ব করা যাবে না, একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি।
রোহানা জালাল বনাম কেরল সরকারের মামলায় ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রসঙ্গ তোলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।শবরীমালা রায়েও মহিলাদের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টি উঠে আসে। সেনাবাহিনীতে মহিলা আধিকারিক সংক্রান্ত মামলা সহ একাধিক ক্ষেত্রেই এই দিকটি উন্মোচিত হয়েছে এই বিচারপতির পর্যবেক্ষণে।
পরিবেশ এবং চন্দ্রচূড়ের রায়-গুরুত্ব
রোহিত প্রজাপতি মামলা। হিমাচলপ্রদেশের বাস স্ট্যান্ড সংক্রান্ত মামলার মতো একাধিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এই বিচারপতি। পরিবেশের পক্ষে গিয়েছে তাঁর দেওয়া রায়।
শ্রমিক শ্রেণির বিচারপতি
গুজরাত সরকার (Gujarat Government) এবং অতিরিক্ত সময়ের কাজ, টাকার সমস্যা এবং মামলার পর্যবেক্ষণে শ্রমিক শ্রেণির জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
সংবিধান সংকটে বিচারপতি চন্দ্রচূড়
কৃষ্ণকুমার রাও বনাম বিহার সরকারের অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলায়, ৭ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের (Constitutional Bench) অন্যতম বিচারপতি সদস্য ছিলেন তিনি। ওই মামলার রায় সাড়া ফেলেছিল দেশে।
এই বিচারপতি জাতীয় টেরিটরি বনাম কেন্দ্রের মামলায় সাংবিধানিক বেঞ্চে ছিলেন।
মধ্যপ্রদেশের সরকারে (Madhyapradesh Government) সংকট এবং রাজ্য বিধানসভায় আস্থা ভোট মামলায় তাঁর দেওয়া রায় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বিস্তর।
ঝাড়খণ্ড সরকার এবং ব্রহ্মপুত্র মেটালিকস্ লিমিটেডের গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছিল তাঁর হাতেই।
করোনা-কালের একাধিক ক্ষেত্র, মামলায় বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিচারবিভাগীয় ভূমিকা ছিল অন্যতম।
বি কে পবিত্র বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত মামলা। শারীরিক অক্ষমতা সংক্রান্ত বিকাশ কুমার বনাম কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন মামলা। বাণিজ্যিক আইন, আদানি গ্রুপ। সুপার বাজার সংক্রান্ত একাধিক মামলা, বিমা আইন। স্বপ্নিল ত্রিপাঠী বনাম দেশের শীর্ষ আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ, বিতর্কিত একাধিক মামলা দক্ষ হাতে নিষ্পত্তি অথবা সামলেছেন এই বিচারপতি। এছাড়াও একাধিক মামলার ক্ষেত্রে তাঁর পর্যবেক্ষণ বারবার আলোচনার উপজীব্য হয়েছে দেশের কাছে।
ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে এবং আইনজীবী হিসেবে স্বল্পকিছু প্রশ্নের অবকাশ কেউ কেউ খুঁজে পেলেও সার্বিকভাবে তিনিই এমন বিচারপতি, যিনি দেশের শীর্ষ আদলতের সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য হয়েছেন সর্বাধিক। তিনিই ছাত্র পড়ানোর সঙ্গেই সামলেছেন বিচারবিভাগীয় দায়িত্ব। কিন্তু থেকেছেন অনন্য। দেশ-বিদেশে বিচার আঙিনায় এই বিচারপতির মৌলিক ভাবমূর্তি আর বিচারের সাহস নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। অনেকেই বলেন, তিনিই চোখে চোখ রেখে একের পর এক রায় দিয়েছেন, যা বিচার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই বিরল। কেউ কেউ মজা করে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Justice Abhijit Ganguly) তাঁর সঙ্গে তুলনা করলেও আসলে ডিওয়াই চন্দ্রচূড় একেবারে আলাদা। সার্বিকভাবে তাঁর বাবা দীর্ঘকাল প্রধান বিচারপতির আসনে রেকর্ড গড়লেও ছেলে হিসেবে তিনিও হয়ে উঠেছেন এককথায় অনবদ্য, অপ্রতিরোধ্য। যিনি বিচারে সেরা, আবার এখনও পর্যন্ত তিনিই মহান, দেশের সেরা প্রধান বিচারপতিও তিনিই, বলছেন কেউ কেউ।