চাঁদের গুঁড়ো দিয়ে পৃথিবী বাঁচানোর ভাবনা! কেন এমন উদ্ভট রাস্তা বেছে নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?

Moon Dust for Protecting Earth Global Warming : চাঁদের গুঁড়ো হয়তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এই গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেই নিস্তার মিলবে বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে!

জানুয়ারি পেরিয়ে ধীরে ধীরে ফেব্রুয়ারিও দিন শেষ হয়ে আসার পালা। একটা একটা করে দিন এগোচ্ছে, আর ঠাণ্ডার দাপট কমছে। গরমও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আর কয়েকটা সপ্তাহ পরই সূর্যের প্রখর তেজের জেরে নাভিশ্বাস উঠবে মানুষের। এখন থেকেই প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদরা। তাঁদের আশঙ্কা, সময় যত এগোচ্ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের ঝড়ও তত শক্তি বাড়াচ্ছে। পৃথিবী ক্রমশ গরম হয়ে পড়ছে। ফলে একের পর এক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে। কী করে এর থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, সেটা নিয়েই ভাবনাচিন্তায় গবেষকরা।

তবে তার মধ্যেই নতুন একটি গবেষণা হাজির হল বিজ্ঞানের দুনিয়ায়। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, পৃথিবীর এই ক্রমবর্ধমান গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে তার নিজের উপগ্রহ! হ্যাঁ, কথা হচ্ছে চাঁদকে নিয়েই। সেই বিশেষ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের গুঁড়ো হয়তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এই গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেই খানিক নিস্তার মিলবে বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে। আর তার জন্য চাঁদের মাটিতে খোদাই চালাতে হবে!

আরও পড়ুন : ভেঙে পড়ল সূর্যের এক জ্বলন্ত অংশ! ছিটকে আসবে কি পৃথিবীর দিকেই?

হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। চাঁদের মাটিতে খোদাই চালিয়ে সেই গুঁড়ো নিয়ে আসার কথাই বলেছেন বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক জার্নাল পিএলওএস ক্লাইমেটে (PLOS Climate) এই বিশেষ গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ, বিজ্ঞানী বেন ব্রমলের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল দীর্ঘদিন ধরে এই গবেষণা করেছেন। তারপরই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু কেন এমন ভাবনা?

কলকারখানা, গাড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমাদের পরিবেশে গ্রিন হাউজ গ্যাসের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। আর এগুলোই একটু একটু করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে একটা আলাদা স্তর তৈরি করছে। এদিকে বিপুল পরিমাণে গাছ কাটার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এর ফলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রবেশ করে বটে। কিন্তু গরমের ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে যে তাপ বিকিরণ হয় সেটি বেরোতে পারে না। গ্রিন হাউজ গ্যাসের স্তরেই ধাক্কা খেয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এভাবেই গ্রিন হাউজ এফেক্টের ফলে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার ক্ষতিকারক প্রভাবও পড়ছে।

তবে এর সঙ্গে চাঁদের গুঁড়োর কী সম্পর্ক? বিজ্ঞানী বেন ব্রমলে এবং তাঁর টিম জানিয়েছে, উল্কাপাত বা অন্যান্য কারণে চাঁদের মাটিতে ধুলোর অভাব নেই। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া সেই ধুলোর একটি নির্দিষ্ট মাপের আকার আছে। সেই গুঁড়ো সংগ্রহ করে সরাসরি পৃথিবীর দিকে পাঠানো যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে, একেবারে চাঁদের গুঁড়োর চাদর তৈরি করে দেওয়া যায়। এর ফলে কী হবে? বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এর ফলে সূর্যের থেকে যে পরিমাণ তাপ আসে, তার বেশ কিছুটা অংশ সেই ডাস্ট পার্টিকলে ধাক্কা খেয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর ভেতর খানিকটা কম তাপ ঢুকবে। ফলে আমাদের ধরিত্রী আর গরম হবে না।

আরও পড়ুন : নীল আর্মস্ট্রং নাকি চাঁদে পা রেখে মুখে পুরছেন এই দোকানের পান, এক খিলি ১০০১!

কিন্তু চাঁদের গুঁড়োই কেন? বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জিনিস নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন। তার মধ্যে কয়লার গুঁড়ো ও সমুদ্রের নুনও ছিল। তাঁরা দেখেছেন, সূর্য থেকে আসা বিপুল আলো আর তাপের কিছুটা অংশকে প্রতিফলিত করার ক্ষমতা সবার নেই। একটি নির্দিষ্ট মাপের কণাই এই কাজটি করতে পারবে। সামুদ্রিক নুন কিংবা কয়লার গুঁড়ো তার আশেপাশে আসছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখলেন, চাঁদের গুঁড়োর কণার মাপ একদম ঠিকঠাক। তাই একেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা তো এমন উদ্ভট চিন্তা বলে দিলেন, কিন্তু চাঁদ থেকে সেই গুঁড়ো আনবে কে? চাঁদের মাটিতে খোদাই করা। সেই গুঁড়ো একসঙ্গে করে পৃথিবীর দিকে সঠিক গতিতে নিয়ে আসা – এই পুরো কাজটি যথেষ্ট মুশকিল। তাছাড়াও যদি এই কাজটি সম্ভব করা যায়, তাহলেও সমস্যা থাকবে একটা। গবেষকদের বক্তব্য, চাঁদের গুঁড়োর ‘মেঘ’ তৈরি করলে পৃথিবীর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে একটু হলেও ব্যাঘাত ঘটবে। ফলে চাষাবাদের ক্ষতি হবে। তবে অন্যান্য পরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বিকল্প উপায় বের হলে সেদিকেই ঝুঁকবেন বিজ্ঞানীরা।

More Articles