ধর্ষণ কাণ্ডে ফের যাবজ্জীবন 'ধর্মগুরু' আসারামের, ১০ বছর আগের ওইদিন ঠিক কী ঘটেছিল?
Asaram Bapu Life Imprisonment : আপাতত কারাগারে গারদের ওপারেই রয়েছে আসারাম। নতুন করে এই অভিযোগ ফের ১০ বছর আগের সেই ঘটনাকে সামনে আনে।
২০১৩ সাল। হিসেব করলে দেখা যাবে, আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা। গোটা দেশ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল একটি খবরে। যার কেন্দ্রে ছিলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। নিজেরই এক শিষ্যাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ সামনে আসে। তারপর কেটে গিয়েছে দশ দশটি বছর। আসারাম বাপুর ঘটনাটিকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক জলঘোলাও হয়েছে বিস্তর। তবে গুজরাতের দায়রা আদালত অবশেষে বিচারের বাণী শোনায়, বিচারক আসারাম বাপুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। আপাতত কারাগারে গারদের ওপারেই রয়েছে আসারাম। নতুন করে এই অভিযোগ ফের ১০ বছর আগের সেই পরিস্থিতিটাকে সামনে নিয়ে আসে।
ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? ২০১৩ সাল। গুজরাতের মোতেরাতেই ছিল স্বঘোষিত ধর্মগুরু, ‘গডম্যান’ আসারাম বাপুর আশ্রম। পাশাপাশি যোধপুরেও ছিল একটি শাখা। সেখানে আসারামের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী, ছেলেরাও থাকতেন। হঠাৎই লাইমলাইটে চলে আসে এই আশ্রমটি। পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে, ওই আশ্রমের ভেতরে ভগবানের সেবার নামে চলে অবৈধ সব কাজ। যার মাস্টারমাইন্ড খোদ আসারাম বাপু! অজস্র শিষ্যের পাশাপাশি শিষ্যারাও থাকতেন সেখানে। নানা জায়গা থেকে মানুষজন তাঁর কাছে আসতেন। আর সেই মোতেরার আশ্রমেই নিজের শিষ্যাদের ধর্ষণ, বিকৃত যৌনাচার, অত্যাচার করছিলেন আসারাম!
আরও পড়ুন : কেবল রামদেবই নন, মেয়েদের নিয়ে বারবার অশালীন মন্তব্য করেছেন এই ধর্মগুরুরা
২০১৩ সালে অভিযোগ আসে, যোধপুরে তাঁর আশ্রমের ভেতরেই ১৬ বছরের এক নাবালিকাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছেন আসারাম বাপু। এই অভিযোগ আসার পরই তদন্ত শুরু হয়। তারপরই সেই বছর আসারামকে গ্রেফতার করা হয়। সাম্প্রতিক ভারতের সামাজিক চিত্রের অন্যতম কালো দিন ছিল সেটি। তারপর থেকে জেলেই কাটাচ্ছেন আসারাম বাপু। তবে এখানেই থেমে যায়নি ঘটনাপ্রবাহ। পুলিশ জানতে পারে, এই একটি কেসই নয়। এরকম অনেক শিষ্যাদেরই ধর্ষণ করেছেন এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু! আর সেই কাজে সাহায্য করেছে তাঁর পরিবারের লোকজনও!
পাঠকদের মনে পড়বে সাম্প্রতিক দুটি ওয়েব সিরিজের কথা। ‘স্যাক্রেড গেমস’ এবং ‘আশ্রম’। স্বঘোষিত ধর্মগুরুদের আশ্রমগুলিতে আদতে ঠিক কী হয়, সেই অপরাধের ছবিই উঠে এসেছিল আসারামের ঘটনায়। তাকেই আরও বড় প্রেক্ষিতে নিয়ে গিয়ে দেখায় এই দুটি সিরিজ। যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক। ২০১৩ সালেই ফের বেশকিছু অভিযোগ সামনে আসে। তার মধ্যে একটি হল সুরাটের এক মহিলার তোলা অভিযোগ। তিনি মোতেরায় আসারাম বাপুর শিষ্যা ছিলেন। তিনি বলেন, স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু দিনের পর দিন তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। আর এই কাজে তাঁর ছেলে, স্ত্রী সবাই সাহায্য করেছে!
আরও পড়ুন : ঘরে ২০ জন স্ত্রী, বিয়ে করেছেন নিজের মেয়েকেও, স্বঘোষিত ধর্মগুরুর কাণ্ড দেখে মাথায় হাত পুলিসের
ততদিনে বিকৃত যৌন লালসার ঘটনায় জেলের ঘানি টানছেন বৃদ্ধ আসারাম। সুরাটের এই মহিলার করা অভিযোগের ভিত্তিতেই শুরু হয় মামলা। সেই মামলারই রায় বেরোল ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩-এ। সেখানে বিচারক আসারাম বাপুকে দোষী সাব্যস্ত করে। ৩১ জানুয়ারি যাবজ্জীবন সাজার ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই যোধপুর জেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছেন আসারাম।
আসারামের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও পরে তাঁদের ছেরেদেওয়া হয়। কিন্তু আসারামের এই ট্র্যাডিশন তো এখনও বন্ধ হয়নি! নিত্যানন্দ, রাম রহিম, জালেবি বাবা – স্বঘোষিত ধর্মগুরুদের বিকৃত যৌনাচার, অপরাধ এখনও কমেনি। রাম রহিমের মতো স্বঘোষিত ধর্মগুরু অপরাধী হলেও বারবার তাঁকে প্যারোলে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর কতবার এমন ঘটনা ঘটবে? ধর্মের পতাকার আড়ালে চলবে এমন অপরাধমূলক কাজকর্ম? উত্তর খুঁজছে গোটা ভারত।

Whatsapp
