পনেরোর পর সতেরো, উধাও ষোল নম্বর প্ল্যাটফর্ম! কোন রহস্য লুকিয়ে আছে হাওড়া স্টেশনকে ঘিরে?

Interesting Facts about Howrah station : ব্যস্ত স্টেশন থেকে উধাও আস্ত একটা প্ল্যাটফর্ম, কোথায় গেল হাওড়ার ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম?

এ কলকাতার মধ্যে যে আরেকটা কলকাতা আছে, তার খোঁজ করতে শহরতলী থেকে নিত্যদিন অসংখ্য যাত্রীরা আসা যাওয়া করেন। কু ঝিক ঝিক শব্দটা তাই বেশ পরিচিত। এই নিত্যদিনের যাওয়া আসার সাক্ষী দেয় কিছু রেল স্টেশন। হাওড়া স্টেশন যার মধ্যে সর্বাগ্রে। এই রাজ্যের ব্যস্ততম রেল স্টেশন এটিই। শুধু তাই নয়, গোটা দেশের নিরিখে অন্যতম প্রাচীন রেল স্টেশনও এই হাওড়া। কারশেড পেরিয়ে ঢিমে গতিতে যখন পাকটফর্মের দিকে ট্রেন ঢোকে, তখন দূর থেকে নজরে পরে হলুদ রঙের সাইনবোর্ডের ওপর কালো হরফে লেখা স্টেশনের নামটি।

এক মুহূর্তও বিরাম নেই, প্রতিদিনই হাজার হাজার লোকাল, এক্সপ্রেস এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাতায়াত এই স্টেশনকে ঘিরে। একটা ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে গেলে কয়েক মুহূর্তের শুনশান চেহারাটাই একটু আগের ব্যস্ততাকে আরও বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। বহু মানুষের রুজি রুটি এই স্টেশনকে ঘিরেই। স্টেশন চত্বরে রয়েছে স্থায়ী অস্থায়ী খাবারের দোকান, রয়েছে মাল বহনের গাড়ি এবং কুলিরা, যাদের নিত্যদিনের পেটের জিগান আসে এখানেই। স্টেশনের বাইরের চেহারাটাও কম উল্লেখযোগ্য নয়। সব সময় একটা ব্যস্ততা যেন ঘিরে রয়েছে এই পুরনো লাল রঙের বাড়িটিকে। যাত্রীর ব্যস্ততা, কুলি হাঁকাহাঁকি, বাস এবং ট্যাক্সি ড্রাইভারদের চিৎকার, সশব্দ ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা, হাজার হাজার চোখ, ক্যামেরা, সবই রয়েছে এই স্টেশনে। আর এই এতো কিছুর মধ্যে থেকেই কিনা উধাও হয়ে গেল আস্ত একটা প্ল্যাটফর্ম? ভাবা যায়!

ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হল না তো? প্ল্যাটফর্ম আবার কীকরেই বা হারিয়ে যেতে পারে, এই ভেবে যারা মাথার চুল ছিঁড়ছেন, তারা কি কখনও লক্ষ্য করে দেখেছেন হাওড়া স্টেশনে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পরই আছে ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম, তাহলে কোথায় গেল ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম?

আরও পড়ুন - কেন সবসময় হলুদ রঙের হয় হয় রেল স্টেশনের সাইনবোর্ডগুলি?

পুরনো, নতুন দুটি কমপ্লেক্স বর্তমানে হাওড়া স্টেশনে। এই স্টেশনের ১ থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ওল্ড কমপ্লেক্সে এবং ১৭ থেকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম রয়েছে নিউ কমপ্লেক্সে। অথচ মাঝে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কোনও অস্তিত্বই নেই! কিন্তু কেন? এর পিছনেও রয়েছে এক রহস্যময় ইতিহাস।

প্ল্যাটফর্ম নেই ঠিকই তবে সেখানে রয়েছে পণ্য পরিবহণের জন্য একটি ডেডিকেটেড লাইন। যাকে “জিরো মাইল” হিসেবে অভিহিত করা হয়। ইতিহাস বলছে, পরাধীন ভারতবর্ষে এই লাইন দিয়েও চলেছিল যাত্রীবাহী ট্রেন। দিনটা ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট, সেদিনই প্রথম এই “জিরো মাইল” থেকে বাংলার প্রথম ট্রেন পাড়ি দিয়েছিল। গন্তব্য হুগলি।উদ্দেশ্য ছিল যে, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ওই ট্রেন হাওড়া থেকে হুগলি পৌঁছবে এবং দুপুর একটার মধ্যে ট্রেনটি ফের হাওড়ায় ফিরে আসবে। যদিও, প্রথম সফরেই ট্রেনটি প্রায় দু’ঘন্টা লেট করে। শোনা যায়, সেই সময়ের এই স্টিম ইঞ্জিন মাঠের মধ্য দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে যায় বলে তাকে আগুনের রথ হিসেবেও ডাকা হয়।

পরবর্তীকালে গঙ্গা নদীতে অনেকটাই জল গড়িয়ে যায়, বদলে যায় পুরনো হাওড়া স্টেশনের চেহারাও। ওল্ড কমপ্লেক্সের পাশে গজিয়ে ওঠে আস্ত একটা নিউ কমপ্লেক্স। নতুন কমপ্লেক্সে যে সাতটি প্লাটফর্ম তৈরি করা হয় তার নম্বর শুরু হয় সতেরো থেকে। মাঝের ওই জিরো লাইনটিকে মর্যাদা দিতেই একটি নম্বর বাদ রেখে নতুন করে প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল বলেই জানা গিয়েছে।

More Articles