কেন সবসময় হলুদ রঙের হয় হয় রেল স্টেশনের সাইনবোর্ডগুলি?

Indian railways signboard : হলুদ রঙের বোর্ডের ওপর কালো কালিতে লেখা স্টেশনের নাম, ভারতের সর্বত্র কেন একই নিয়ম?

রোজকার জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে যা সময়ের সঙ্গে একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগেরই কারণ হয়তো অনেকেই জানেন না। কেন এমন হয়?, এই প্রশ্নটা মনের মধ্যে উঁকি দেয় ঠিকই, তবে তার যথার্থ উত্তর মেলে না। এরকমই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা রইল আজকের প্রতিবেদনে। ধরা যাক, আপনি এখন ট্রেনে সফর করছেন। জানলার ধারের সিটটাও জুটেছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখছেন একটার পর একটা স্টেশন আসছে, প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে ট্রেন। চোখের সামনে একের পর এক স্টেশনের নাম পড়ছেন। এবার ভেবে দেখুন তো, ঠিক কী রকম দেখতে হয় প্ল্যাটফর্মের স্টেশনের নাম লেখা বোর্ডগুলি।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। উত্তরটি সহজ। হলুদ রঙের বোর্ডের ওপর কালো কালিতে লেখা স্টেশনের নাম। একাধিক ভাষায়। স্থান, কাল ভেদে বদল হয় স্টেশনের নাম এমনকী ভাষাও অদল বদল হয় বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্তু ভারতের যে কোনও প্রান্তে রেল স্টেশনের সাইনবোর্ডের এই হলুদ রং এবং কালো কালিতে লেখা অক্ষরের কোনও বদল হয় না। সর্বত্র একই রকম। কিন্তু জানেন কি কেন এমন হয়? কেন কেবল হলুদ রঙের বোর্ডই ব্যবহার করা হয় স্টেশনের বোর্ডগুলিতে?

আরও পড়ুন - গায়ের রং কালো, যে কারণে অশুভ মনে করা হয় এই ধরনের বিড়ালকে

প্রসঙ্গত জেনে রাখা দরকার, ভারতের মতো জনবহুল দেশে রেলপথই হল সুলভ ও সহজতম পরিবহন মাধ্যম। মাঝে করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত থমকে গিয়েছিল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতেও। তারপর আবার পরিস্থিতির বদল হওয়ায় চালু হয় ট্রেন। পাশাপাশি এ কথা জেনে রাখা দরকার, ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমাদের দেশে মোট ৭,৩৪৯টি রেল স্টেশন রয়েছে। এবং এই প্রতিটি স্টেশনেরই সাইনবোর্ডের রং হলুদ। না কেবল মিথ বলে উড়িয়ে দিলে চলবে না এই বিষয়টি। এই পিছনেও রয়েছে নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

প্রথমত, হলুদ রং এমন একটি রং যা সরাসরি সূর্যালোকের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাশাপাশি রং নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছে, হলুদ রং আমাদের মানসিক শক্তি বাড়ায় এবং মনোসংযোগ বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে। এই কারণেই ব্যস্ততার মধ্যেও খুব সহজে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এই রঙের সাইনবোর্ড। এছাড়াও, হলুদ রঙের ওপর কালো কালিতে লেখা অক্ষরগুলি সহজেই খুব দূর থেকে নজরে পড়ে এবং দৃষ্টিশক্তির ওপর চাপ পড়ে না।

হলুদ রঙের এই মূল বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ দূর থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষমতার জন্য সুবিধা হয় ট্রেন চালক অর্থাৎ লোকো পাইলটদের। অনেক দূর থেকে স্টেশনের বোর্ড লক্ষ্য করে দূরত্ব পরিমাপ করতে পারেন তাঁরা। সেই মতো ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয় তাঁদের। এমনকী বৃষ্টি, কুয়াশা অথবা চড়া সূর্যের আলোতেও হলুদ রঙকে সহজে চিহ্নিত করা যায়। এর পিছনে আসল বৈজ্ঞানিক কারণটি হল, লাল রঙের পরে হলুদ রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। আর যেহেতু রেলে বিপদ নির্দেশ করতে লাল রঙের ব্যবহার করা হয় তাই হলুদ রংটিকে এই সাইনবোর্ডে ব্যবহারের জন্য যথার্থ বলে বিবেচিত করা হয়েছে।

More Articles