চুল কেটে, পোশাক ছোট করেও শেষরক্ষা হল না! কেন রাতারাতি ওজন বেড়ে গেল বিনেশের?
Vinesh Phogat: নির্ধারিত ওজনের থেকে ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় বাদ পড়েন বিনেশ। তবে এক রাতের মধ্যে কীভাবে বাড়ল তাঁর ওজন? এ ব্যাপারে কী বলছেন চিকিৎসকেরা।
শেষমুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ হল ভারতীয় কুস্তিগীর বিনেশ ফোগটের। হাত ধরে এই প্রথম বার প্য়ারিস অলিম্পিকের মঞ্চে ভারতকে এই প্রথম ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিনেশ। মঙ্গলবার পর পর তিনটি ম্যাচ ছিল তাঁর। সেই তিনটি ম্যাচে জয়ের পর রূপো নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। তবে সেই জয়ের আনন্দকে খানিকটা মুঠোয় চেপেই সমস্ত একাগ্রতাকে সঞ্চয় করেছিলেন ফাইনালের জন্য। বুধবার রাতে আমেরিকার সারা হিলডেব্রান্টের বিরুদ্ধে নামার কথা ছিল তাঁর। তবে জয়ের স্বপ্ন তো দূরের, অর্জিত রূপোটুকুও হারিয়ে ফেললেন বিনেশ।
প্যারিস অলিম্পিকে মহিলাদের ৫০ কেজি কুস্তির বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন বিনেশ। নির্ধারিত ওজনের থেকে ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় বাদ পড়েন বিনেশ। সোনার স্বপ্ন ছিটকে যায়। ফস্কে যায় কষ্ট করে ছিনিয়ে নেওয়া রূপোও। নানা ষড়যন্ত্রের গন্ধ ও হতাশার মধ্যেই যে প্রশ্ন বারবার উঠছে, তা হল মঙ্গলবারই তিনটি ম্যাচে লড়েছেন বিনেশ ওই বিভাগেরই। তবে এক রাতের মধ্যে কীভাবে বাড়ল তাঁর ওজন? এ ব্যাপারে কী বলছেন চিকিৎসকেরা।
আরও পড়ুন: গাফিলতি নাকি ষড়যন্ত্র! কার ভুলে অলিম্পিকে এত বড় ভাগ্য বিপর্যয় বিনেশের?
ভারতীয় অলিম্পিক দলের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ড. দিনশ পাউডিওয়ালা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিন-তিনটি ম্যাচ শেষ করার পরে বিনেশের ওজন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল। এ সব ক্ষেত্রে নানা রকম কৌশল নেওয়া হয় ওজন কমানোর জন্য। কিন্তু বহু চেষ্টা করেই তা সময়মতো নামানো যায়নি।
বুধবার সকালে বিনেশ ফোগটের অলিম্পিক থেকে ছিটকে যাওয়ার খবর সামনে আসতেই হইচই পড়ে যায় দেশ জুড়ে। এমনকী নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে সংসদেও হইচই শুরু করেন বিরোধীরা। অলিম্পিক চলাকালীন প্য়ারিসেই রয়েছেন ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট পিটি ঊষা। তাঁর কাছে ফোন যায় খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তিনি। এই পরিস্থিতিতে ভারত কী কী করতে পারে, সেটাও জানতে চান মোদী। প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেন, এই শাস্তির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানালে যদি ফোগাটের কোনও লাভ হয়, তা হলে সেটাও যেন করা হয়। জানা গিয়েছে, বিনেশকে ফাইনাল থেকে বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।
এর পরেই ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট পিটি ঊষা ও ভারতীয় অলিম্পিক দলের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ড. দিনশ পাউডিওয়ালা একটি ভিডিও বার্তা দেন। যেখানে গোটা ঘটনার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে মুখ খোলেন তাঁরা।
পাউডিওয়ালা জানিয়েছেন, কুস্তিগীরেরা সাধারণত তাঁদের স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে কম ওজনের বিভাগে অংশগ্রহণ করে। তাতে প্রতিপক্ষ হিসেবে কম শক্তিশালীর মুখোমুখি হতে হয়। সাধারণ ভাবে, খাবার ও জলের পরিমাণ বেঁধে দিয়ে প্রতিযোগীর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। তার পাশাপাশি প্রতিযোগীকে ঘামানো হয় বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে। কিন্তু ওজন কমাতে গিয়ে দুর্বলতা তৈরি হতে পারে এবং পরিশ্রমের শক্তি কমে যেতে পারে। যা আবার লড়াই করার ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক।
এই পরিস্থিতিতে কুস্তিগীরদের সীমিত পরিমাণ জল ও বেশ কিছু উচ্চশক্তির খাবারদাবার দেওয়া হয়। তা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য প্রতিটি অ্যাথলিটের নিজস্ব পুষ্টিবিদ থাকেন। যিনি রীতিমতো গণনা করে প্রতিযোগীর খাবারদাবার মেপে দেন। বিনেশের পুষ্টিবিদ এক্ষেত্রে তাঁর জন্য সারাদিনে ১.৫ কিলোগ্রাম পরিমাণ খাবারদাবার মেপে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: একশো কোটির স্বপ্নভঙ্গ! ট্র্যাজেডির অন্য নাম বিনেশ ফোগট
মঙ্গলবার পর পর তিনটি প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বিনেশকে। আর তা শেষ হলে দেখা যায়, বিনেশের ওজন বেশ কিছুটা বেড়েছে। তার পরেই তাঁর কোচ ও পুষ্টিবিদ ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। তাঁরা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তাতে কাজ দেবে। কিন্তু বহু চেষ্টা সত্তেও একশো গ্রাম ওজনের ব্যবধান মেটানো যায়নি। বাধ্য় হয়ে সারা রাত ধরে বিনেশের চুল কাটা, জামাকাপড় ছোট করার মতো বিকল্প ব্যবস্থাগুলিও চেষ্টা করে গিয়েছিলেন তারা। তার পরেও কমানো যায়নি ওজন। যার ফলাফল হিসেবে বুধবার সকালে অলিম্পিকের প্রতিযোগিতা থেকেই ডিসকোয়ালিফাই হয়ে যান ভারতীয় এই কুস্তিগীর।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, সতর্কতা হিসেবেই বিনেশকে কিছু ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড দেওয়া হয়েছিল, যাতে কোনও ভাবে ডিহাইড্রেশন না হয়। তার পরে তাঁর বেশ কিছু রক্তপরীক্ষাও হয়, যেখানে কোনও কিছু গন্ডগোল চোখে পড়নি। স্থানীয় অলিম্পিক হাসপাতালেই সেসব পরীক্ষা করানো হয়। তখনও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন বিনেশ। কিন্তু সেই সমস্ত চেষ্টাই বৃথা হয়ে গেল বুধবার সকালে। অলিম্পিকে কুস্তিতে সোনাজয়ের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেন বিনেশের। একই সঙ্গে ফস্কে গেল অর্জিত রৌপ্য পদকটিও।