ফাইনাল জিতলেও মেসির ঘরে থাকবে না বিশ্বকাপ! কেন এমন সিদ্ধান্ত, জেনে নিন

FIFA World Cup 2022 : বিশ্বকাপ, গোল্ডেন বল জেতা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সব হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতে পারবেন না লিওনেল মেসি।

১৮ ডিসেম্বরের সেই মোহময়ী রাত চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ হল। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামের গোলপোস্টের জাল কেটে নিয়ে গিয়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। এতগুলো বছরের পরিশ্রম, লড়াই সার্থক হল। হাসি কান্নায় ভেসে রইলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। এমবাপের ফ্রান্সকে হারিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফিরেছেন মেসি, দি মারিয়ারা। বুয়েনস আইরেসে চলছে চূড়ান্ত উদযাপন। তারপর বিশ্বকাপ নিয়ে শান্তিতে নিজের বাড়ি ঢোকা…

স্বপ্নের সেই মুহূর্ত এখনও জারি রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই থেকে গিয়েছে ছোট্ট একটা ‘কিন্তু’। বিশ্বকাপ, গোল্ডেন বল জেতা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সব হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতে পারবেন না লিওনেল মেসি। সোনায় মোড়া ট্রফি ক্যাবিনেটে অজস্র সম্মানের পাশে থাকবে না এটি। খানিক দুঃখের খবর হলেও মেসির কাছে নতুন খবর নয়। কেবল মেসি কেন, পৃথিবীর কোনও ফুটবল খেলোয়াড়ই এই খাঁটি সোনার বিশ্বকাপ নিজের ঘরে রাখতে পারবেন না। কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়…

আরও পড়ুন : কেউ কাঁদছেন রাস্তায় বসে, কেউ ল্যাম্পপোস্টের ওপরে, মেসিদের আগমনে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর্জেন্টিনায়

বিশ্বের ক্রীড়া ইতিহাসের একটি বড়ো অধ্যায় জুড়ে আছে এই ফুটবল বিশ্বকাপ। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট জন্ম দিয়েছে কিংবদন্তিদের। জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন লোকগাথার। এখান থেকেই এসেছেন পেলে, গ্যারিঞ্চা, ক্রুয়েফ, মারাদোনা, রোনাল্ডো নাজারিও, সক্রেতিস, জিদান; এবং হালের মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, এমবাপে। তবে শুরুর সময় এমন চেহারা ছিল না বিশ্বকাপের ট্রফিটির। সেটি ছিল জুলে রিমে কাপ; আদতে রুপোর ট্রফি, যার বাইরেটা খাঁটি সোনা দিয়ে মোড়ানো। ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ – ৪০ বছর ধরে ইতিহাসের সঙ্গী এই জুলে রিমে কাপ। এই কাপই নিয়েছেন পেলে, গ্যারিঞ্চা। তিনবার বিশ্বকাপ জেতার পর আসল জুলে রিমে ট্রফি নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয় ব্রাজিল।

এরইমধ্যে ঘটে একের পর এক বিপত্তি। ১৯৬৬ সাল। ইংল্যান্ডে বসেছে বিশ্বকাপের আসর। লন্ডনে চলছে ট্রফির প্রদর্শনী। হঠাৎই সেখান থেকে চুরি হয়ে যায় জুলে রিমে কাপ। চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব জুড়ে। অবশ্য সাত দিন পরই খবরের কাগজ মোড়ানো অবস্থায় ওই ট্রফিটি উদ্ধার হয়। উদ্ধার করে পিকলস নামের একটি কুকুর। ঠিক চার বছর পর বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমের ট্রফিটি বরাবরের মতো নিজের দখলে নিয়ে নেয় ব্রাজিল।

এরপরই সামনে আসে বর্তমান বিশ্বকাপটি। শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগার তৈরি এই বিশ্বকাপ আজও বহন করা হচ্ছে। অন্যদিকে জুলে রিমে ট্রফিটি রিও ডি জেনেইরোতে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের ঘরে রাখা ছিল। ১৯৮৩ সালে সেখানে ঘটে বিপত্তি। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের ওই ঘর থেকেই চুরি হয়ে যায় আসল জুলে রিমে ট্রফি। আজ পর্যন্ত সেটি পাওয়া যায়নি। হয়তো ঐতিহাসিক ট্রফিটির আর কোনও বাস্তব অস্তিত্বই নেই!

আরও পড়ুন : প্রথম ম্যাচে হেরেও বিশ্বজয়! কেন রূপকথাকেও হার মানাবে মেসিদের এই যাত্রা?

পরপর দুবার এমন ঘটনা ঘটার পরই নিয়মে বদল আনল ফিফা। বলা হল, এবার থেকে খেলা চলাকালীন মাঠে বা অন্যান্য জায়গায় আসল বিশ্বকাপটিই থাকবে। কিন্তু তারপর সেটি চলে যাবে ফিফার সুরক্ষিত বাক্সে। যে দল জিতবে, তাদের অন্য একটি রেপ্লিকা দেওয়া হবে। ব্রোঞ্জের সেই রেপ্লিকার বাইরে সোনার জল করা থাকবে। ফলে সোনালি আভা থাকবে। অন্যদিকে আসল ট্রফিটির একেবারে তলায় একটি প্লেটে বিজয়ী দলের নাম খোদাই করা থাকবে। তারপর সেটি চলে যাবে ফিফা মিউজিয়ামে। হ্যাঁ, মেসির হাতে এই মুহূর্তে যে ট্রফিটি দেখা যাচ্ছে, সেটি কেবলই একটি রেপ্লিকা। আসল ট্রফিটি পাবেন না তিনি। অবশ্য তাতে কি হয়েছে! বিশ্বকাপ তো ঘরে চলে এসেছে আর্জেন্টিনার। আনন্দ আরও বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে বুয়েনস আইরেসে।

More Articles