পড়ে রয়েছে মাছের টুকরো, রয়েছে ফ্রিজও! অবাক করবে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এই রেস্তোরাঁ

5000 year old restaurant : জীবনের বিশেষ কোনও উদযাপন অথবা কোনও ছুতোনাতায় প্রায়শঃই ভিড় জমে রেস্তোরাঁয়। কিন্তু আকছার রেস্তোরাঁয় যাওয়ার এই রেওয়াজ যে কেবল আজকের সময়ের নয়, আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগেও ছিল সেই রীতি। ইরাক...

এ যেন সাক্ষাৎ ইতিহাস দর্শন, এক’শ দু’শো বছরের নয় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সরাইখানার খোঁজ মিলেছে সম্প্রতি। সুদূর ইরাকের বুকে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার নাম শুনেছেন হয়তো অনেকেই, সেই সভ্যতারই এক প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কৃত হল ইরাকের আল-হিবা শহরে। সন্ধান মিলল এই প্রাচীন সরাইখানার অর্থাৎ আজকের ভাষায় বলতে গেলে রেস্তোরাঁ।

শুনতে অবাক লাগলেও এ কথা সত্যিই যে খোঁজ মিলেছে এমন ঐতিহাসিক নিদর্শনের। অন্তত কার্বন ডেটিং জানাচ্ছে তেমনটাই। সম্প্রতি, একটি মার্কিন-ইতালীয় দল আবিষ্কার করেছে প্রাচীন লাগাশ ধ্বংসাবশেষে। এই দলে ছিলেন পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পিজা বিশ্ববিদ্যালয়, লাগাশ আর্কিওলজিক্যাল প্রোজেক্ট, পেন মিউজিয়াম এবং হেরিটেজ ইন বাগদাদের গবেষকরা। জানা গিয়েছে, আনুমানিক ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল এই সরাইখানা। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে, এই ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়েও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পর্যালোচনা।

আরও পড়ুন - গা ছমছমে কবরখানায় বসে মৃতের সঙ্গে চা পান, রেস্তোরাঁ এমনও হয়! জানলে শিউরে উঠবেনই

ব্যস্ত জীবনে সাময়িক বিরতি পেতে রেস্তোরাঁয় গিয়ে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করার বিকল্প আজকাল আর কিছু নেই বললেই চলে। জীবনের বিশেষ কোনও উদযাপন অথবা কোনও ছুতোনাতায় প্রায়শঃই ভিড় জমে রেস্তোরাঁয়। কিন্তু আকছার রেস্তোরাঁয় যাওয়ার এই রেওয়াজ যে কেবল আজকের সময়ের নয়, আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগেও ছিল সেই রীতি। ইরাকের পুরাতত্ত্ববিদরা হদিশ দিয়েছেন সেটিই।

মাটি খুঁড়ে গবেষকরা খুঁজে পান একটি খোলা উঠোন। জানা যায়, এটিই সে যুগে খাওয়ার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পাশাপাশি বেঞ্চ, চুলা, প্রাচীন খাদ্যের অবশেষ এবং একটি ৫০০০ বছরের পুরানো আর্দ্রতা-উইক কাঠামো অর্থাৎ আজকের ভাষায় বলতে গেলে রেফ্রিজারেটর -এর হদিশ মেলে। অর্থাৎ আধুনিক দিনের রেস্তোরাঁর মতো একই রকম ব্যবস্থা ছিল সে যুগেও। গবেষকরা শঙ্কুযুক্ত একটি বাটিও আবিষ্কার করেছে যাতে পাওয়া যায় সে যুগে খাওয়া মাছের অবশিষ্টাংশ।

প্রকল্প পরিচালক, হলি পিটম্যান, এএফপির বরাত দিয়ে বলেছেন, “আমাদের কাছে রেফ্রিজারেটর আছে, আমাদের কাছে পরিবেশনের জন্য শত শত পাত্র প্রস্তুত রয়েছে, বেঞ্চ আছে যেখানে লোকেরা বসবে এবং রেফ্রিজারেটরের পিছনে একটি চুলা রয়েছে যা খাবার প্রস্তুতে ব্যবহার করা হতো..."। এখানেই শেষ নয়, সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রত্নতাত্ত্বিকরা ওই স্থানে একটি প্রাচীন বিয়ারের রেসিপিও খুঁজে পেয়েছেন।

আরও পড়ুন - তারুণ্যে হার মানবে নামজাদা রেস্তোরাঁ, কলকাতার এই পাইস হোটেল ১০৭ বছরের বিস্ময়

এছাড়াও, জানা গেছে যে পেন মিউজিয়াম, ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ এবং বাগদাদের স্টেট বোর্ড অফ অ্যান্টিকুইটিস অ্যান্ড হেরিটেজের মধ্যে একটি যৌথ প্রকল্পের অংশ হিসাবে ২০১৯ সালে সাইটে খনন কাজ পুনরায় শুরু হয়েছিল, যেখানে তারা নতুন কৌশল ব্যবহার করছে যেমন ডেটা এবং তথ্য সুরক্ষিত করতে ড্রোন ফটোগ্রাফি এবং জেনেটিক বিশ্লেষণ। এই আধুনিক কৌশলগুলির ব্যবহার গবেষকদের সুমেরীয় সভ্যতা এবং সেই সময়ে লোকেরা কীভাবে বসবাস করত সে সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে সক্ষম করে।

সবমিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় যে, সেই সময় আল-হিবায় জনপদ ছিল। মানুষের নিত্য যাতায়াতের প্রমাণ মেলে, পাশাপাশি তৎকালীন সময়ে ওই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য দিকের সম্পর্কেও জানা যায়। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল, এই আশ্চর্য ইতিহাসের অধ্যায়, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুকিয়ে ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১৯ ইঞ্চি নিচেই। যা অবাক করেছে খোদ গবেষকদেরও।

More Articles