ফেলে দেওয়া বর্জ্য থেকেই কোটি কোটি টাকা, আয়ের চেষ্টায় অসাধ্য সাধন এই মহিলার

Vermicompost : কেঁচো থেকে সার তৈরি বিষয়টা একটি অদ্ভুত শুনতে লাগলেও, এটা সত্যিই। কলেজে পড়াকালীন এই বিষয়ে আগ্রহ অনুভব করেন উত্তরপ্রদেশের সানা খান

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে সাপ বেরোনোর কথা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন, তাই বলে কেঁচো খুঁড়েই কোটি কোটি টাকার ব্যবসার কথা হয়তো আগে শোনেননি। এই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন উত্তরপ্রদেশ মিরাটের বাসিন্দা সানা খান। ভার্মিকম্পোস্ট অর্থাৎ কেঁচো সার প্রস্তুত করেই আজ শীর্ষে উঠে এসেছেন তিনি। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই, যদিও প্রবেশিকা প্রতীক্ষায় ফলাফল ভালো হয়নি তাঁর। তখনই ঠিক করেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন। জীবনের বদলের শুরু হয়তো তখনই শুরু হয়ে গিয়েছিল তাঁর। অবশেষে ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময় তাঁর ভার্মিকম্পোস্ট প্রোজেক্ট-এ কাজ পড়ে। আর এই প্রোজেক্ট সামলানোর সময়েই হাতে কলমে সার প্রস্তুতির কাজ শিখে যান তিনি।

কেঁচো থেকে সার তৈরি বিষয়টা একটি অদ্ভুত শুনতে লাগলেও, এটা সত্যিই। কলেজে পড়াকালীন এই বিষয়ে আগ্রহ অনুভব করেন সানা। তার পর কলেজ পাশ করে ঠিক করেন বাণিজ্যিকভাবে এই কেঁচো সার প্রস্তুতি শুরু করার কথা। এই পদ্ধতিতে এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়েন যে বড় আকারে প্রকল্প করার ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। এর পর থেকেই শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো প্রজনন পদ্ধতি।

আরও পড়ুন - মিড ডে মিল প্রকল্পের নেপথ্যে এক বাঙালি, ভারত চিরতরে ভুলেছে এই বিজ্ঞানীকে…

সানা বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর ভাইয়ের কাছে টাকা নিয়ে SJ Organics ভার্মিকম্পোস্টিং কোম্পানি স্থাপন করেন তিনি। যদিও শুরুতেই ধাক্কা খেতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম ব্যবসায়িক মডেল বিশেষ কাজ করেনি। কিন্তু থেমে থাকেননি সানা। নতুন করে পথ খুঁজেছেন। সাফল্যও এসেছে অচিরেই। এরপর তিনি দুগ্ধজাত এবং বায়োডিগ্রেডেবল গৃহস্থালির বর্জ্য আনার জন্য একটি বিকল্প পথ খোঁজেন, এই বিষয়ে কাজ করা জন্য নিযুক্ত করেন ঠিকাদার। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে সানার সংস্থায় ৫০০ টন বর্জ্য আমদানি হয়েছে এবং প্রতি মাসে এই পরিমান বর্জ্য থেকে ১৫০ টন ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এই কোম্পানি বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১ কোটিরও বেশি। এখানেই শেষ নয়, প্রায় ত্রিশটি পরিবারের রুজিরুটির ভারও নির্ভর করছে এই সানা খানের কোম্পানির ওপরই।

সানার স্বপ্নের এই তো সবে শুরু, কেবল উত্তর প্রদেশে আটকে থাকতে চান না তিনি। তাঁর এই শিল্প, এই কাজকে ছড়িয়ে দিতে চান গোটা দেশে। বর্তমানে যখন বর্জ্য পদার্থ নিয়ে দূষণের মাত্রা আকাশ ছোঁয়া সারা দেশে, ঠিক তখনই বিকল্প পথের সন্ধানে সানা। জানা গিয়েছে, সানার সংস্থা এখন ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষনও দিচ্ছে। মিরাটের ১০০টিরও বেশি স্কুল এখন এই কাজে নিযুক্ত আছে। একদিন এই সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই ছড়িয়ে পড়বে দেশ জুড়ে আর তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে এই স্বপ্নও। বর্জ্য পদার্থকে কার্যত সোনায় রূপান্তর করার এই সফরে সানা এখন তৈরি। দেশ জুড়ে জৈব চাষ পদ্ধতি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তাঁর হাত ধরে, এ বিষয়ে আশাবাদী সকলেই।

More Articles