পুরুষদের যৌনাঙ্গের বিরল থেকে বিরলতম রোগ! কী এই ডিফালিয়া, ট্রিফালিয়া?
Male Rare Sexual Organ Problems: ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল, যার শরীরে ছিল তিনটি লিঙ্গ। তবে এক্ষেত্রেও মলদ্বার ছিল না।
বছর দুয়েক আগে একটি আশ্চর্যজনক খবর প্রকাশিত হয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম 'ডেইলি মেইল'-এ। ওই খবরের সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানে একটি মানব শিশুর জন্ম হয় যার মলদ্বার যেমন নেই জন্মগতভাবে, তেমনই ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় তার শরীরে রয়েছে দুটো আস্ত পুরুষাঙ্গ! আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ার মতো এই খবর নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। এই অদ্ভুত নবজাতককে ঘিরে বিশ্ববাসীর উৎসাহ ছিল তুঙ্গস্পর্শী। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একবাক্যে স্বীকার করে নেন, সদ্য জন্ম নেওয়া এমনতর মানুষ হলো এই দুনিয়ায় 'রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার'। মাতৃগর্ভে ৩৬ মাস থাকার পর শিশুটির জন্ম হয়। পরিপূর্ণ সুস্থ এই বাচ্চাটির পরিবারগত কোনও ত্রুটি ছিল না। ইসলামাবাদের এক চিকিৎসালয়ে শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয় শরীরে মলত্যাগ প্রক্রিয়া সচল করার জন্য। কোলোনোস্কপির সাহায্যে তা সফলও হয়। দু'টি পুরুষাঙ্গের লম্বাগত সামান্য ফারাক পরিলক্ষিত হয়। লম্বায় একটির আকার ছিল ২.৫ সেন্টিমিটার। অপরটির মাপ ছিল ১.৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ দুই পুরুষাঙ্গের মধ্যে দৈর্ঘ্যের পার্থক্য ছিল মাত্র ১ সেন্টিমিটার। প্রস্রাব নির্গত হয় স্বাভাবিকভাবে এই দুই লিঙ্গ থেকেই। তবে দুই লিঙ্গ বিশিষ্ট পুরুষদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ মলদ্বারগত সমস্যায় সাধারণত ভোগেন।
২০২০ সালে ব্রাজিলের রিও দে জেনেরিওতেও এমনই দুই লিঙ্গ বিশিষ্ট একটি শিশুর জন্মগ্রহণকে ঘিরে সারা বিশ্বে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। শিশুটির বছর দুই বয়স হলে প্রথমে শল্য চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন যে, ছোট লিঙ্গটি বাদ দেবেন। কিন্তু শিশুটির মা যখন জানান বাচ্চাটি প্রস্রাব ত্যাগ করে ছোট পুরুষাঙ্গ দিয়ে, তখন তার বড় লিঙ্গটি শরীর থেকে কেটে ফেলা হয় অপারেশন করে।
এমনকী এক মিশরীয় নবজাতকের শরীরেও দু'টি পুরুষাঙ্গ থাকার নজির সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে আরও অবাক করার তথ্য জানা যায়। ২১ দিন বয়সের শিশুটিকে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, এই শিশুটির নিম্নাঙ্গে দু'টি পৃথক পুরুষাঙ্গের সঙ্গে রয়েছে দু'টি আলাদা অণ্ডকোষও। এমন ঘটনাও বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে প্রত্যাশিত পর্যায়ে।
আরও পড়ুন- দ্রুত গতিতে বাড়ছে পুরুষদের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য! আনন্দ নয়, চরম ভয়ের কারণ শোনালেন গবেষকরা
সমগ্র ভারতে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। তবু এ যাবৎ এই মহামানবের সাগর তীরে দুই পুরুষাঙ্গ বিশিষ্ট পুরুষের সন্ধান ন্যূনতম একটিও পাওয়া যায়নি। আসলে এটি এমন এক বিরলতম শারীরিক গঠন যার সন্ধান সারা বিশ্বেও অতি অনুসংখ্যা মাত্র। ইংরেজি ভাষায় 'ডিফালিয়া' বলতে বোঝায় এমন পুরুষ যার দু'টি পুরুষাঙ্গ রয়েছে। কিন্তু ডিফালিয়ার বাংলা ব্যাকরণগত শব্দের অর্থ কী তা অবশ্য এখনও অজানা। যদিও ডিফালিয়ার আরও একটি ইংরেজি ভাষার প্রকাশ হলো, পেনাইল ডুপ্লিকেশন। এরকম ক্ষেত্রে দু'টি পুরুষাঙ্গ বাহ্যিক অবস্থায় থাকে। আর পাশাপাশি অবস্থান করে শরীরের যথাযথ স্থানে। তবে দু'টির মধ্যে আকার ও আকৃতির প্রভেদও কখনও কখনও বিদ্যমান। তবে খুব কম সংখ্যক হলেও দুই লিঙ্গ মোটামুটি দৃশ্যত একই রকমের হয়, এমন দৃষ্টান্তের হদিশ অবশ্য পৃথিবীতে পাওয়া গিয়েছে। ডিফালিয়ার ক্ষেত্রে একটি লিঙ্গ যদি স্যাজিটাল প্লেনের মতো থাকে তাহলে অপরটি রয়ে যায় ফ্রন্টাল প্লেনের ধারাকে বহন করে।

পম্পেইয়ের একটি চিত্রে দু'টি লিঙ্গের সমস্যার কথা
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একাংশের মতামত, গর্ভধারণের মোটামুটি ২৫ দিনের মাথায় মাতৃ জঠরের মধ্যেই ভ্রূণের অন্দরে ডিফালিয়ার লক্ষণ প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে। এটি অবশ্যই পুরুষের দেহের একটি আশ্চর্যতম বিকাশগত অতি বিরল জন্মগত ত্রুটি। অবশ্য এটাও ঠিক যে, এই ডিফালিয়া পরিবারগত বা জিনগত অস্বাভাবিক লক্ষণ যে একদমই নয় সেই বিষয়ে চিকিৎসকেরা প্রায় নিশ্চিত। সমগ্র বিশ্বের পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, প্রতি ৫০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ নবজাতকের মধ্যে হয়তো একটি ডিফালিয়ার তথ্য সামনে আসে। এটি এতটাই বিরল যে সমগ্র পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত, বিগত ৪০০ বছরে মাত্র ৮৬টি দৃষ্টান্ত মিলেছে।
আরও পড়ুন- দেহ থেকে আলাদা যৌনাঙ্গ, ৬ সেমি লম্বা শুক্রাণু! অবাক করবে পোকাদের যৌনজীবন
এই ডিফালিয়া সম্পর্কে প্রথমবার তামাম দুনিয়া জানতে পারে ১৬০৯ সালে। সেই সময়ে সুইস চিকিৎসক জোহানেস জ্যাকব ওয়েকার একটি মৃতদেহ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তখনই তিনি প্রথম আবিষ্কার করেন কোনও মানুষের শরীরে দু'টি পুরুষাঙ্গ থাকার অদ্ভুত বিষয়টি।
ডিফালিয়ার বিষয়ে আলোচনার রসদ জোটাতে গিয়ে প্রত্যাশিত পর্যায়ে সমুদ্র মন্থনের মতো উঠে আসে 'ট্রিফালিয়া'-র মতো আরও এক চমকপ্রদ বিস্ময়। এই বিষয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় মাস চারেক আগে ইংল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমে। 'দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট'-এর খবর অনুযায়ী, এটি আবার একটি পুরুষের তিনটি পুরুষাঙ্গের কিসসা। তাই এই বিষয়টাকে বলা হচ্ছে ট্রিফালিয়া। এই ট্রিফালিয়ারও বাংলায় প্রকৃত প্রতিশব্দ এ যাবৎ নেই। বার্মিংহাম মেডিকেল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সম্প্রতি নিজেদের অধ্যায়নের প্রয়োজনে একটি মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের কাজে লিপ্ত হন। তখনই জানা যায় ৭৮ বছরের ওই শেতাঙ্গ ব্যক্তির তিনটি লিঙ্গ ছিল। এই খবর জানাজানি হতেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে আবারও বিস্ময়ে ফেটে পড়েন আবালবৃদ্ধবনিতা।
আসলে ওই মৃত ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় জানতেনই না যে, তাঁর শরীরে তিনটি লিঙ্গ রয়েছে। কারণ একটি পুরুষাঙ্গের অবস্থান স্বাভাবিক অবস্থায় বাহ্যিক থাকলেও বাকি দু'টি ছিল অণ্ডকোষের মধ্যে। ফলে বাকি দু'টি কখনই দৃশ্যমান ছিল না। জন্মানোর পরে দ্বিতীয়টিতে যথারীতি মূত্রনালী থাকলেও অল্প বয়সে তা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। আর তৃতীয় লিঙ্গ তো জন্মাবধি অসাড় ছিল। ফলে ওই ব্যক্তি বেঁচে থাকার সময়ে ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারেননি যে তিনি আদতে শরীরে তিনটে পুরুষাঙ্গ বহন করে চলেছেন। মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের সময় তাই তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় লিঙ্গগুলো প্রথম দেখতে পান সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা। এই ঘটনাটি জার্নাল অব মেডিক্যাল রিপোর্টসে গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রকাশ পায়। সেখানে উল্লেখ আছে, ওই ব্যক্তির তিনটির মধ্যে দু'টি লিঙ্গের আকার ছিল অস্বাভাবিক ছোট। সুতরাং দেহের বাহ্যিক অংশে অনুভব করার মতো লক্ষণও অনুভূত হয়নি কখনও।

হাঙরের দ্বিলিঙ্গ
ট্রিফালিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকটা হইচই পড়ে যায় ২০২০ সালে। চিকিৎসক বিজ্ঞানীদের দাবি, সেই সময়ে একটি শিশুর শরীর পরীক্ষা করে জানা যায় জন্মগতভাবে শিশুর শরীরে তিনটি পুরুষাঙ্গ রয়েছে। ইরাকের দুহোকে একটি শিশু আর পাঁচজন স্বাভাবিক নবজাতকের মতোই জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার যখন তিন মাস বয়স তখন ধীরে ধীরে শিশুটির শরীরের কিছু টিস্যুগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তখনই নবজাতকের বাবা-মা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। শিশুটিকে পরীক্ষা করে ডাক্তাররা বুঝতে পারেন, বাচ্চাটির অণ্ডকোষের গোড়ায় অতিরিক্ত দু'টি পুরুষাঙ্গ মাংসপিণ্ডের মতো কিছুটা মুখিয়ে আছে। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে যে লিঙ্গটি যথাস্থানে রয়েছে সেটির দৈর্ঘ্য ২ সেন্টিমিটার। আর বাকি দু'টির দৈর্ঘ্য কিন্তু যথাক্রমে ১ সেন্টিমিটার করে। প্রকৃতস্থ লিঙ্গে এক্ষেত্রে মূত্রনালী থাকলেও অন্য দু'টিতে তা ছিল না। ফলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা শিশুটির অতিরিক্ত লিঙ্গ দু'টি সফল অস্ত্রোপচারের সাহায্যে বাদ দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন- দু’টি যৌনাঙ্গ, তিনটি পা, মানুষ একটাই! যে বিরল ঘটনায় হাঁ হয়ে গেছিল বিশ্ব
ভারতে ডিফালিয়া উপসর্গের কথা না জানা গেলেও, এই দেশে ট্রিফালিয়া বিশিষ্ট একটিমাত্র শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে এখনও পর্যন্ত। ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল, যার শরীরে ছিল তিনটি লিঙ্গ। তবে এক্ষেত্রেও মলদ্বার ছিল না। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই সম্ভবত প্রথম ট্রিফালিয়ার দৃষ্টান্ত যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ্যে আসে। অনেকের আবার দাবি, ইরাকের দুহোকে জন্মানো শিশুটির মধ্যে ট্রিফালিয়ার যে দৃষ্টান্ত পাওয়া গিয়েছে সেটিই নাকি বিশ্বের কাছে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য ঘটনা। এসব নিয়ে বহু বিতর্ক আমজনতার মনে বাসা বাঁধতে পারে কিন্তু ট্রিফালিয়া যে পুরুষের শরীরের এক অতি দুষ্প্রাপ্য ত্রুটিগত উদাহরণ, তা নিয়ে সবপক্ষই একমত। মূল কথায় আসা যাক। জৌনপুরের শিশুটির দু'টি অস্ত্রোপচার করা হয়। একটির সাহায্যে মল নির্গমনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অপর অস্ত্রোপচারের দ্বারা দু'টি লিঙ্গ শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয় যথারীতি। আসলে এক্ষেত্রেও অ্যামপুট করা দু'টি লিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব কখনই নির্গত হতো না।
ডিফালিয়া বা ট্রিফালিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বরাবরই অসীম। একটি পুরুষের একটি পুরুষাঙ্গ থাকবে এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। তা দিয়েই পুরুষরা প্রস্রাব সারে আবার পরিণত বয়সে যৌনক্রিয়াও সম্পন্ন করে কিন্তু যে সমস্ত পুরুষের অতিরিক্ত লিঙ্গ রয়েছে তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই তা অকেজো থাকে। তাই অনেকেরই অতিরিক্ত লিঙ্গটি বাদ দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় চিকিৎসকের পরামর্শে। তবে খুব কম হলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও ঘটে এই পৃথিবীতে। যেমনটা হয়েছে জনৈক ট্যাঙ্ক নামক এক যুবকের ক্ষেত্রে। পেশায় লস এঞ্জেলেসর এক লরি চালক। তিনি জানিয়েছেন, "আমি জন্মে ছিলাম দু'টি লিঙ্গ নিয়ে। ২৩ বছর বয়সে আমি প্রথম যৌন সংসর্গ করি। এরপর একাধিকবার। সঙ্গমের সময় উভয় লিঙ্গ পৃথকভাবে ব্যবহার করতে পারতাম। এমনকী দু'টি থেকেই বীর্যপাত হতো। তবে একটি ব্যবহারের সময় অপরটিতে ভীষণ উত্তেজনা হওয়ার কারণে অবশেষে একটি বাদ দিয়েছি চিকিৎসকের সাহায্যে।"
যৌনতা সম্পর্কে ট্যাঙ্কের মতো আরও এক ডিফালিয়ায় আক্রান্ত ট্রিপল ডি নামক ব্যক্তি বিবিসি-কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, "আমার জন্ম থেকেই দু'টি পুরুষাঙ্গ আছে। অন্তর্বাস পরতে কিছুটা সমস্যা হয়। কিন্তু উভয় থেকে স্বাভাবিক বীর্যস্খলন হয়। নারী সঙ্গমেও দু'টি সমানভাবে সক্ষম।"