ঘুরতে ঘুরতে যদি একদিন উল্টে যায় পৃথিবী! জানেন, ঠিক কী কী ঘটবে আপনার সঙ্গে?

Earth's Opposite Rotation: পৃথিবী সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে চলবে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে জীবন তখনও স্বাভাবিকভাবেই চলবে।

মনে করুন, একদিন সকালে উঠে পৃথিবীর ইচ্ছা হলো 'আজ কুছ তুফানি করতে হ্যায়'! ব্যাস, বলা নেই, কওয়া নেই সে দুম করে এতদিনের অভ্যাস পালটে ঘুরতে শুরু করলো পূর্ব থেকে পশ্চিমে! এতকাল তো সে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরত, তাই সূর্য, চাঁদ এবং সমস্ত মহাজাগতিক বস্তু যা যা আমরা দেখতে পাই সবসময় সেই দিক থেকে ওঠে এবং পশ্চিমে অস্ত যায়। তবে হতেই তো পারে, একদিন আমাদের এই গ্রহটি উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করল। পৃথিবী সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে চলবে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে জীবন তখনও স্বাভাবিকভাবেই চলবে।

এই হাইপোথেটিক্যাল চিন্তনে গবেষকরা এমন এক পৃথিবীর কল্পনা করেছেন যা ঠিক পৃথিবীর মতোই কিন্তু তা পশ্চিম দিকে ঘুরছে। আমরা পৃথিবীর গতি আটকাতে পারি না এবং উল্টোতেও পারি না। যদি পৃথিবী ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয় তবে, সর্বনাশা সুনামি হবে, মহাসাগর সব মেরুর দিকে চলে যাবে, কোনও চৌম্বক ক্ষেত্র থাকবে না, আর কী কী যে হবে ভাবলেই প্রেশার বেড়ে যেতে পারে। তাই, ধরা যাক, এসব সত্য নয়, ধরা যাক এটি কল্পনার পৃথিবী, যে পৃথিবী আগামিকাল সকাল থেকেই অন্যভাবে ঘুরবে।

আরও পড়ুন- পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি একই সময়ে একইসঙ্গে লাফ দেন, কী হবে?

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত

দীর্ঘদিন ধরে মহাভারত অশুদ্ধ হওয়া আর সূর্য পশ্চিমে ওঠার যে প্রবাদ দিয়ে আসি আমরা, ঘুম থেকে উঠে দেখবেন সত্যি হয়ে গেছে! সকালে প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যাবে তা হলো পশ্চিমে সূর্যোদয়। এটি যে প্রধান জিনিসটি পরিবর্তন করবে তা হচ্ছে আবহাওয়া।

বাণিজ্য বায়ু

নিরক্ষরেখায় বাণিজ্য বায়ু আর পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হবে না এবং মধ্য অক্ষাংশে পূর্ব-প্রবাহিত বাতাস, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে, কিন্তু আর্জেন্টিনা এবং অস্ট্রেলিয়ার অংশেও আর সেই দিকে প্রবাহিত হবে না। এই গ্রহের জীববৈচিত্র্য অভিযোজনের উপর নির্ভর করে যা বিকাশে দীর্ঘ সময় লাগে। অবশ্যই অনেক অনেক প্রজাতি এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। এর একটি সহজ উদাহরণ হচ্ছে, বিষুবরেখার বাণিজ্য বায়ু সাহারা থেকে আমাজনে পুষ্টি নিয়ে আসে, এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যকে বাঁচতে সাহায্য করে। এই বায়ু ছাড়া সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি ঘটবেই না।

 

সমুদ্রের স্রোত

সমুদ্রের স্রোতও ঘূর্ণন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়। মহাসাগরে গরম বা ঠান্ডা জলের প্রতিষ্ঠিত প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হবে, সমগ্র গ্রহ জুড়েই অদ্ভুত সব প্রভাব দেখা যাবে।

মরুভূমি এবং মরুভূমিহীনতা

২০১৮ সালের একটি গবেষণায় পৃথিবীর উল্টোদিকে ঘোরা নিয়ে বলা হয়, সাহারায় এর স্পষ্ট প্রভাব দেখা যাবে। সাহারাতে কোনও মরুভূমিই থাকবে না। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য আজকের তুলনায় অনেক বেশি সবুজ হবে। দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাতে উল্টে মরুভূমি তৈরি হবে। জাপান এবং চিনের পূর্ব উপকূলেও তাই-ই হবে।

আরও পড়ুন- পৃথিবীর মতো দেখতে এই গ্রহ থেকেই আসছে রহস্যময় তরঙ্গ! শেষ হবে প্রাণের সন্ধান?

বাতাস এবং স্রোতের পরিবর্তন তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতকেও প্রভাবিত করবে। যে অঞ্চলগুলি এখন মরুভূমি সেগুলি আরও অনেক বেশি গরম এবং শুষ্ক হবে, অন্যান্য অঞ্চলেও পরিবর্তন হবে। ইউরোপ অনেক ঠান্ডা এবং ভেজা হবে।

সব গ্রহের ঘূর্ণন একই নয়

সৌরজগতের সমস্ত গ্রহ একই দিকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু একটি গ্রহকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া অসম্ভব নয়। ইউরেনাস একটি বড় সংঘর্ষের সম্মুখীন হয়েছিল যা গ্রহটির ঘূর্ণনে প্রভাব ফেলে। সূর্যের চারপাশে ৮৪ বছর ধরে প্রদক্ষিণ করার সময় এর মেরুগুলি গ্রীষ্মকালে সরাসরি সূর্যের দিকে নির্দেশ করে।

আরও মজার বিষয় হচ্ছে শুক্র গ্রহকে নিয়ে। পৃথিবীর যমজ গ্রহ, শুধু পৃথিবীর চেয়ে মারাত্মক গরম। এই গ্রহে দিন অত্যন্ত ধীর, পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২২৪ গুণ বেশি ধীর এবং এটি বিপরীত দিকে ঘোরে। তাই শুক্র গ্রহে সূর্য পূর্ব দিকে অস্ত যাবে। অবিরাম মেঘের আচ্ছাদন থাকবে গ্রহে এবং এটি হতে ১০০ দিনের বেশি সময় লাগবে! এর কারণ অনিশ্চিত।

সূর্যের মহাকর্ষীয় টান এবং এর অভ্যন্তরীণ আচরণের কারণে গ্রহটি ১৮০ ডিগ্রি উল্টে গেছে, এমন হতে পারে। আরেকটি কারণ হতে পারে, শুক্রের বায়ুমণ্ডলে অন্যান্য গ্রহের টান এটির ঘূর্ণনকে স্থবির করে দেয় এবং তারপরে এটিকে উল্টে দেয়।

More Articles