পৃথিবীর মতো দেখতে এই গ্রহ থেকেই আসছে রহস্যময় তরঙ্গ! শেষ হবে প্রাণের সন্ধান?

Mysterious Signal from Earth Like Planet : সেখানেও ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদেরই মতো অজানা প্রাণীরা? আপাতত সেই সম্ভাবনার দিকেই নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরাও।

দেখতে ঠিক যেন পৃথিবীরই মতো। রয়েছে নিজস্ব নক্ষত্র, পরিবেশ, আরও অনেক অজানা রহস্য। ‘পৃথিবীর মতো’ – এই কথাটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ মানুষের মাথায় চলে আসবে আরও একটি প্রশ্ন। তাহলে কি এখানে রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব? সত্যিই কি পৃথিবীর পরিধির বাইরেও রয়েছে আরও একটি সভ্যতা? সেখানেও ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদেরই মতো অজানা প্রাণীরা? আপাতত সেই সম্ভাবনার দিকেই নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরাও।

আমেরিকার দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সেবাস্তিয়ান পিনেদা এবং জ্যাকি ভিলাদসেন সম্প্রতি এই বিশেষ গ্রহটির ব্যাপারে গবেষণা শুরু করেছেন। আর সেই খবরই বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’-তে প্রকাশিত হয়েছে। তারপর থেকেই বিজ্ঞানীদের নজর পড়েছে এই বিশেষ গ্রহটির দিকে। আমাদের পৃথিবী থেকে মাত্র ১২ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে লাল রঙের YZ Ceti নক্ষত্র। তারই এক্সোপ্ল্যানেট YZ Ceti B যাবতীয় আলোচনার কেন্দ্রে। আমেরিকার ওই দুই বিজ্ঞানীর বিশেষ রেডিও টেলিস্কোপে সম্প্রতি ধরা পড়েছে বিশেষ কিছু রেডিও তরঙ্গ। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, YZ Ceti B গ্রহ থেকেই এই তরঙ্গ ভেসে আসছে। বারবার একই রেডিও তরঙ্গ ভেসে আসার রহস্য কী? তারই সন্ধান করছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে YZ Ceti B গ্রহটি। কেন একে ঘিরেই সমস্ত আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা? কলোরাডো ও বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সেবাস্তিয়ান আর জ্যাকির বক্তব্য, প্রথমত পৃথিবীর থেকে খুব বেশি দূরে নয় এটি। উল্লেখ্য, বিজ্ঞান ও আমাদের চিরাচরিত হিসেব দিয়ে দিক দিয়ে দেখলে ১২ আলোকবর্ষের পরিমাপ অনেকটাই। হয়তো কয়েকশো বা কয়েক হাজার বছর লেগে যেতে পারে অত দূরে পৌঁছতে। তবুও বিজ্ঞানীরা আশা রাখছেন। কারণ? YZ Ceti B-এর চরিত্র, তার আকার অনেকটাই পৃথিবীর মতো।

গ্রহের অন্দরে ঠিক কী রয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেবাস্তিয়ান আর জ্যাকির গবেষণা বলছে, এই YZ Ceti B গ্রহের নিজস্ব বায়ুমণ্ডল যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র। এই দ্বিতীয় জায়গাতেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য, পৃথিবীর বুকে জীবন তৈরি হওয়া ও এখনও অবধি টিকে থাকার পেছনে বায়ুমণ্ডল ও চৌম্বকক্ষেত্র দায়ী। কেন? সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্র, মহাজাগতিক বস্তু থেকে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন বিকিরণ হচ্ছে। বিভিন্ন কণা মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলি পৃথিবীর বুকে নেমে এলে আখেরে সভ্যতারই ক্ষতি। ক্ষতিকারক বিকিরণের ফলে কোনও জীবনই টিকে থাকবে না।

কিন্তু সেসব কিছু প্রতিহত করছে পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র। একের পর এক সৌরঝড়ের ক্ষতির হাত থেকেও এই চৌম্বকক্ষেত্রই বাঁচাচ্ছে। পৃথিবীর চারদিকে ঢাল হয়ে আছে এটি। অন্যদিকে উল্কা, গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এলে বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণের জেরেই সেসব শেষ হয়ে যায়। ঠিক এই কারণটিকেই সামনে রাখছেন বিজ্ঞানীরা। YZ Ceti B-র নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র যে রয়েছে, তা অইও রেডিও তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেই পাওয়া গিয়েছে। আর যদি সত্যিই তা থাকে, তাহলে ক্ষতিকর বিকিরণ, কণার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে গ্রহটি। সেইসঙ্গে আছে নিজস্ব বায়ুমণ্ডল। তাহলে কি জীবনের অস্তিত্বও থাকতে পারে সেখানে? এখন না থাকলেও, ভবিষ্যতের বাসযোগ্য স্থান হতে পারে YZ Ceti B? আপাতত এইসব প্রশ্নের উত্তরই বিশদে খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।

More Articles