খোদ আওরঙ্গজেব, ব্রিটিশরা টাকা চাইতেন তাঁর কাছে! বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তির পরিচয় জানেন?

Virji Vora Richest Businessman: বীরজি ভোরা একবার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ২,০০,০০০ টাকা ধার দিয়েছিলেন! সেই সময় দু' লক্ষ টাকা ধার!

ভারতবর্ষ চিরকালই সম্ভাবনার বাজার। সেই শক, হূণ, পাঠান, মোঘল থেকে শুরু করে ইংরেজ, হালফিলের চিন, কোরিয়া সকলেই জানে ভারতবর্ষের বাজার ধরতে পারলে যথেচ্ছ লাভ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা শাসনের পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গেলেও ভারত থেকে গিয়েছে ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবেই। ভারতের বাজার আর ভারতের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী দুই-ই ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দীর্ঘকাল ধরেই বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছেন ধনকুবের। বহু প্রাচীন সময় থেকেই বিখ্যাত কিছু ভারতীয় ব্যবসায়ী নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছেন বিশ্বে। মশলা থেকে তুলো নানা পণ্যের বাজারে ভারতের নাম হয়ে উঠেছে অন্যতম। বীরজি ভোরা ছিলেন এমনই একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী যাকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী বলে অভিহিত করেছিল। মুঘল শাসনামলে বীরজি ভোরা ছিলেন অত্যন্ত পরিচিত মুখ। ১৬১৭ থেকে ১৬৭০ সালের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে অর্থ জুগিয়েছিলেন তিনিই! ভাবা যায়? একজন ভারতীয় ব্রিটিশদের আর্থিক সহযোগিতা করছেন? বীরজি ভোরা একবার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ২,০০,০০০ টাকা ধার দিয়েছিলেন! সেই সময় দু' লক্ষ টাকা ধার!

বীরজি ভোরার জন্ম ১৫৯০ সালে। ১৬৭০ সালে তিনি মারা যান। সেই সময়কার নানা প্রতিবেদন বলছে, বীরজি ভোরা পেশায় ছিলেন একজন পাইকারি ব্যবসায়ী। সেই সময় তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। সেই সময়ের নিরিখে যদি বর্তমান সময়কে বিচার করা যায়, সেকালের সম্পত্তির সঙ্গে একালের সম্পদের তুল্যমূল্য বিচার করা যায় তাহলে বীরজি ভোরা হেলায় হারাবেন আম্বানি পরিবারকে! বীরজির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির চেয়েও ঢের বেশি। এই বিপুল পরিমাণ সম্পদই বলে দিচ্ছে সেকালের ভারতে বীরজি ভোরাই ছিলেন ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী। ঐতিহাসিক নানা তথ্য বলছে, বীরজি ভোরা গোলমরিচ, সোনা, এলাচ এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি পণ্যের ব্যবসা করতেন।

আরও পড়ুন- আম্বানি, আদানিদের থেকেও বেশি মোট সম্পত্তির পরিমাণ! চেনেন বিশ্বের ধনীতম এই মহিলাকে?

১৬২৯ থেকে ১৬৬৮ সালের মধ্যে বীরজি ভোরা ব্রিটিশদের সঙ্গে অনেক ব্যবসাই করেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়ার সঙ্গে এই সুসম্পর্কের কারণে তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যও ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। বীরজি ভোরা হামেশাই কোনও নির্দিষ্ট পণ্যের পুরো মজুতটিই কিনে নিতেন এবং পরে সুযোগ ও চাহিদা বুঝে তা বিপুল লাভে বিক্রি করতেন। বীরজি ভোরা ছিলেন একজন মহাজনও। তবে গরিবগুর্বোদের চড়া সুদে টাকা দেওয়া না, তাঁর কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন কারা জানলে হাসিও পেতে পারে, অবাক তো হবেনই! এত যে বিত্তবান ইংরেজ, তারাও বীরজির কাছ থেকে টাকা ধার নিত। কিছু ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব যখন ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চল জয়ের যুদ্ধের সময় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন তখন তিনি তার দূতকে অর্থের জন্য বীরজি ভোরার কাছেই পাঠান।

বীরজি ভোরার ব্যবসা ভারত জুড়ে তো ছিলই, পাশাপাশি পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দর শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আগ্রা, বুরহানপুর, দাক্ষিণাত্যের গোলকুন্ডা, গোয়া, কালিকট, বিহার, আহমেদাবাদ, ভাদোদরা এবং বারুচ সহ সেই সময়ের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে বীরজি ভোরার এজেন্ট ছিল।

More Articles